আশাশুনি আওয়ামী লীগে অনুপ্রবেশকারী বিএনপি-জামায়াতে সয়লাব

কর্তৃক Ahadur Rahman Jony
০ কমেন্ট 71 ভিউস

প্রধান প্রতিবেদক : সাতক্ষীরার আশাশুনি উপজেলায় জামায়াত-বিএনপির পদধারী নেতা, কর্মী ও সমর্থকরা এখন আওয়ামী লীগের দাপুটে নেতা। ভিন্ন দল থেকে এসে আসন গেড়েছেন আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে। বাগিয়ে নিয়েছেন পদ-পদবিও। উপজেলা থেকে শুরু করে ইউনিয়ন ও ওয়ার্ড পর্যায়ে অনুপ্রবেশকারীদের সংখ্যা এতবেশী যে, জামায়াত-বিএনপি আর আওয়ামী লীগ মিলেমিশে একাকার।
আওয়ামী লীগ সভাপতি, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অনুপ্রবেশকারীদের ব্যাপারে কঠোর হয়েছেন। ইতোমধ্যে নিজস্ব এজেন্সির মাধ্যমে ভিন্ন দল থেকে আসাদের তালিকাও প্রস্তুত করেছেন তিনি। আ.লীগ সভাপতির এমন উদ্যোগে তৃণমূল পর্যায়ের ত্যাগী নেতাকর্মীরা ছেড়েছেন স্বস্তির নিঃশ্বাস।
এদিকে, সাতক্ষীরার আশাশুনিতে ভিন্নদল থেকে অনুপ্রবেশকারীর সংখ্যা অগণিত। এমনকি উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান এবিএম মোস্তাকিমও ভিন্নদল থেকে এসে আওয়ামী লীগে আসন গেড়েছেন। এক সময়ে বর্তমান আওয়ামী লীগ নেতা এবিএম মোস্তাকিম খুলনায় জাতীয় পার্টির কাউন্সিলর ছিলেন। ২০০১ সালে জামায়াতের সংসদ সদস্য প্রার্থী রিয়াসাতের জনসভা ও নির্বাচনী প্রচারে অংশ নেন তিনি।
সাতনদীর অনুসন্ধানে আশাশুনি উপজেলায় ভিন্ন দল থেকে আওয়ামী লীগে অনুপ্রবেশকারীদের কিছু সংখ্যক জামায়াত-বিএনপি কর্মীর পরিচয় পাওয়া গেছে। যারা সকলেই এখন দাপুটে আওয়ামী লীগ নেতা। ভিন্ন দলের এসব নেতাকর্মী দলে থেকেই দলকে বিপদের মুখে ফেলছেন বলে অভিমত ত্যাগী নেতাদের।
প্রতাপনগর ইউনিয়নের ১নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি হাসান ঢালী। আগে ছিলেন একই ওয়ার্ডের বিএনপির সভাপতি। ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সদস্য মোবারেক আলী। তার আপন ভাই পার্শ্ববর্তী কয়রা উপজেলা জামায়াতের সভাপতি হিসেবে দায়িত্বপালন করছেন। জামায়াত কর্মী মোরসেলিম ঢালী এখন আ.লীগ করে। ২ নং ওয়ার্ডের এরশাদ আলী পূর্বে জামায়াত-বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকলেও বর্তমানে আওয়ামী লীগ নেতা। ৪ নং ওয়ার্ডের জামায়াত সদস্য রেজাউল সরদার এখন আওয়ামী লীগ, কামরুল ইসলাম ছিলেন ছাত্রদলের ওয়ার্ড সভাপতি বর্তমানে ওয়ার্ড আ.লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক। জামায়াতকর্মী আজিজুল ফকির, বিএনপি কর্মী বেলালুর রহমান এখন আ.লীগ, জামায়াতকর্মী সিদ্দিক সানা এখন ওয়ার্ড আ.লীগের সাধারণ সম্পাদক, জামায়াতকর্মী আহম্মদ আলী এখন আ.লীগে। জামায়াত পরিবারের লিপিকা পারভিন, নাসরিন সুলতানাও এখন আ.লীগের রাজনীতি করেন। ৬ নং ওয়ার্ডের নাজির আলম পূর্বে ওয়ার্ড যুবদলের সভাপতি থাকলেও বর্তমানে ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি। ৮ নং ওয়ার্ডে বিএনপি নেতা জাহাঙ্গীর আলম দল বদল করে বর্তমানে ওই ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হয়েছেন। ৯ নং ওয়ার্ডের মোনতাসির আলম ছিলেন ওই এলাকার পিস কমিটির প্রধান। তিনি এখন আওয়ামী লীগ নেতা। এছাড়া কুড়িকাউনিয়া গ্রামের জামায়াত নেতা হামিদ মোড়ল, প্রতাপনগর গ্রামের রেজাউল সরদার, ঘোলা গ্রামের বিএনপি নেতা নাসীর উদ্দীন এখন আ.লীগে দাপিয়ে বেড়ায়।
খাজরা ইউনিয়নের চেউটিয়া গ্রামের আনিসুর রহমান, কালাম বিশ্বাস, পিরোজপুর গ্রামের রিপন হোসেন, রাউতাড়া গ্রামের ছলেমান গাজী, আদম গাজী বিএনপি থেকে আ.লীগে। আশাশুনি সদরের আজিজ মোড়ল, মোস্তাফিজুর রহমান, উপজেলা বিএনপির আহবায়ক রফিকুল ইসলাম মোল্লা, যুগ্ম আহবায়ক ওয়াসিম চক্রবর্তী তারাও এখন আ.লীগ।
শ্রীউলা ইউনিয়নের বিএনপির ইউনিয়ন সভাপতি নাজমুল হুদা খোকন, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আব্দুল মান্নান, গাজীপুর গ্রামের বিএনপি নেতা মিলন মোড়ল তারাও এখন আ.লীগ। কুল্লা ইউনিয়নে জাতীয় পার্টির হুমায়ুন কবির মন্টু, বিএনপির আঙ্গুর মেম্বর এখন আ.লীগ নেতা। দূর্গাপুর ইউনিয়নের শ্রীধরপুর গ্রামের বিএনপি কর্মী মোস্তার আলী গাজী, জামায়াতকর্মী মফিজুল ইসলাম, জয়নাল আবেদীন সরদার এখন আ.লীগে। আনুলিয়া ইউনিয়নের মির্জাপুর গ্রামের বিএনপির সহ সভাপতি আফজালুর রহমান, বিসোট গ্রামের জিয়ারুল ইসলাম, চেচুয়া গ্রামের জামায়াতকর্মী তৈইবুর বাবর আলী, জামায়াতের সাধারণ সম্পাদক নাশকতা মামলার আসামী রশিদ মোড়লও এখন আ.লীগ নেতা। বুধহাটা ইউনিয়নের ছাত্রদলের সভাপতি আবু জাহিদ সোহাগ এখন ছাত্রলীগ, চাপড়া গ্রামের ছাত্রদল নেতা সুজন, জামায়াতকর্মী বদিয়ার রহমান, বুধহাটা আবু সাঈদ এখন আ.লীগে। বড়দল ইউনিয়নের ফকরাবাদ গ্রামের আব্দুল গফুর সরদার, গলডাঙ্গা গ্রামের টেক্কা, শরিফুল ইসলাম, বুড়িয়া গ্রামের নাহিদ রানা বাবু, ফরিদ মোল্লা, সোহারাব মোড়লও বিএনপি থেকে এখন আ.লীগে। শোভনালী ইউনিয়নের মোনায়েম হোসেন সানা, টিটল সানা, আজিজুল ইসলাম সানা কট্টরপহ্নি বিএনপিও এখন আ.লীগ।
শুধু এখানেই শেষ নয়। আশাশুনি উপজেলা কমিটি, ইউনিয়ন এমনকি ওয়ার্ড কমিটি পর্যন্তও অনুপ্রবেশকারীদের সংখ্যা অগণিত। অনুপ্রবেশকারী অধিকাংশ নেতাকর্মীরাই দাপিয়ে বেড়ায় উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান এবিএম মোস্তাকিমের হাত ধরে। বিগত উপজেলা আ.লীগের সম্মেলনে ভোটের মাধ্যমে সভাপতি নির্বাচিত হয় এবিএম মোস্তাকিম ও সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হয় অ্যাড. শহিদুল ইসলাম পিন্টু। সভাপতি ও সম্পাদকের মধ্যে সমন্বয় না থাকায় দীর্ঘদিন পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠণ হয়নি। পরে জেলা আওয়ামী লীগের শীর্ষ দুই নেতার হস্তক্ষেপে পূর্ণাঙ্গ কমিটি হয় আশাশুনি উপজেলায়। ৫১ সদস্যের কমিটির মধ্যে সভাপতি মনোনয়ন দেন ২৬ জনকে এবং সম্পাদক মনোনয়ন দেন ২৫ জনকে। অভিযোগ রয়েছে, সভাপতির মনোনিতদের মধ্যে অর্ধেকই অনুপ্রবেশকারী। (আমাদের পরবর্তী সংবাদে থাকবে বিস্তারিত আরও….)



রিলেটেড পোস্ট

মতামত দিন

error: Content is protected !!