হাফিজুর রহমান, কালিগঞ্জ প্রতিনিধি: ১৯৭১ এর ৭ মার্চ ঢাকা রেসকোর্স ময়দানে লাখো লাখো জনতার সমনে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের দেওয়া ঐতেহাসিক ভাষণে পাকিস্তানি শুত্রুদের মোকাবেলা করার জন্য যার যা আছে তা-ই নিয়ে সবাইকে প্রস্তুুত থাকতে বলেন তিনি। বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তি সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম। তাই ভাষণের পর সমগ্র দেশ উত্তাল হয়ে উঠে। প্রতিহিংসায় ২৫ শে মার্চ রাতে বঙ্গবন্ধুকে পাক হানাদার বাহিনী গ্রেপ্তার করে এবং বাংলাদেশের নিরস্ত্র নিরীহ মানুষের উপর ঝাঁপিয়ে পড়ে নির্বিচারে গণহত্যা শুরু করে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী। ২৬ মার্চ শুরু হয় বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ। বাংলার দামাল ছেলেরা সেদিন ঝাঁপিয়ে পড়ে জয় বাংলা শ্লোগানে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহন করে। ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর বিকালে ঢাকা রেসকোর্স ময়দানে অর্থ্যাৎ সোহরাওয়ার্দী উদ্দানে পাক হানাদার বাহিনী পাকিস্তানি অর্থ্যাৎ পাকিস্তানি বাহিনী মিত্র বাহিনীর কাছে নিরশর্ত ভাবে আত্মসমর্পন করলে আমাদের চুড়ান্ত বিজয় অর্জিত হয়ে মুক্তিযুদ্ধের সফল পরিসমাপ্তি ঘটে। সোমবার ছিল আমাদের মুক্তিযুদ্ধের ৪৮ তম বিজয় দিবস ১৬ ডিসেম্বর। লাখো শহীদের রক্তের বিনিময়ে অর্জিত মহান বিজয়ের ৪৮ তম বার্ষিকীতে গত সোমবার অসাম্প্রাদায়িক বাংলাদেশ গড়ার দৃপ্ত অঙ্গীকার নিয়ে জাতি সরণ করছে তার শ্রেষ্ট সন্তানদের। গভীর শ্রদ্ধা ও ভালবাসায় বিভিন্ন স্কুল, কলেজ, মাদ্রসা, সরকারী, বেসরকারী, সামাজিক, সংস্কৃতিক, রাজনৈতিক সংগঠন গুলো উদযাপন করছে মহান বিজয় দিবস। সন্ত্রাস, সাম্প্রদায়িকতা ও জঙ্গীবাদ রুখে দিয়ে মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষ শক্তি হাত ধরে অসম্প্রাদায়িক বাংলাদেশ উন্নয়ন অভিযাত্রা অব্যহত রাখার প্রত্যয়ে উপজেলা জুড়ে বিজয় স্তম্ভে ছিল মানুষের ঢল। মুক্তিযোদ্ধাদের বর্ণিল শোভাযাত্রায় জুড়ে ছিল জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু শ্লোগান বিজয়ের গান। রাস্তাঘাট , বাসাবাড়ী, অফিস আদালত, স্কুল কলেজ, দোকান পাট, সরকারী, বেসরকারী, রাজনৈতিক অফিস সহ বিভিন্ন স্বায়িত্বশাষিত সব প্রতিষ্ঠানেই ছিল জাতীয় পতাকার লাল সবুজের উৎসব। দিবসটি পালন উপলক্ষে উপজেলা জুড়ে দিন ব্যাপী নানান কর্মসূচি গ্রহন করা হয়। উপজেলা প্রশাসনের আয়োজনে গত সোমবার সকাল ৭টায় কালিগঞ্জ উপজেলা প্রশাসন, উপজেলা পরিষদ, মুক্তিযোদ্ধা সংসদ, আওয়ামীলীগ, বি.এন.পি, জাতীয়পার্টি, প্রেসক্লাব, যুবলীগ, সেচ্ছাসেবক লীগ, ছাত্রলীগ, শ্রমিকলীগ, কৃষকলীগ, তাঁতী লীগ, স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসাসহ বিভিন্ন সামাজিক ও স্বায়িত্ব শাসিত প্রতিষ্ঠানগুলো সোহারাওয়ার্দী পাক ময়দানে বিজয় স্তম্ভে পুষ্পমাল্য অর্পন করে দিনভর পৃথক পৃথক ভাবে কর্মসুচি পালন করে। পুষ্পমাল্য শেষে বিজয় স্তম্ভে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোজাম্মেল হক রাসেলের সভাপতিত্বে এক সংক্ষিপ্ত সমাবেশে প্রধান অতিথি হিসাবে বক্তব্য রাখেন উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান সাঈদ মেহেদী। বক্তারা বলেন বঙ্গবন্ধুর ডাকে সাড়া দিয়ে এদেশের মুক্তিযোদ্ধারা সেদিন যুদ্ধে ঝাপিয়ে পড়েছিলো। ৩০ লক্ষ মা, ভাই, বোনের রক্তের বিনিময়ে অর্জিত এ স্বাধীনতা রক্ষা করে জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর ঋণ পরিধোশ করতে হবে। সেই লক্ষ্যে দিন বদলের অঙ্গীকার নিয়ে আগামী দিনের প্রত্যয় মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আমাদের ঐক্যবদ্ধ হয়ে তার হাতকে শক্তিশালি করতে হবে। দিনের কর্মসুচির মধ্যে ছিল প্রত্যুষে থানা চত্তরে ৩১বার তোপধ্বনির মাধ্যমে দিবসের সুচনা। সুর্যোদয়ের সাথে সাথে সকল সরকারী, আধাসরকারী ভবন, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, দোকানপাট ও বিভিন্ন সামাজিক প্রতিষ্ঠানে জাতীয় পতাকা উত্তোলন। সকাল ৭টায় সোহরাওয়ার্দী পার্কে বিজয়স্তম্ভে পুষ্প মাল্য অর্পন। সকাল সাড়ে ৭টায় মহৎপুর সরকারী কবরস্থানে শহীদদের কবর জিয়ারত। সকাল ৯টায় উপজেলা পরিষদ মাঠে আনুষ্ঠানিক ভাবে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করেন উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান সাঈদ মেহেদী, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোজাম্মেল হক রাসেল, থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা হাসান দেলোয়ার হুসেন, মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক ডেপুটি কমান্ডার আব্দুর হাকিম। এরপর পুলিশ, ফায়ার সার্ভিস, আনসার ভিডিপি, স্কাউটস, গার্লস গাইড এবং বিভিন্ন স্কুল কলেজ ও মাদ্রাসার ছাত্র ছাত্রীরা কুচকাওয়াজ ও শরীরচর্চা প্রদর্শন করেন। সাড়ে ১০টায় উপজেলা পরিষদ মিলানাতায়নে মুক্তিযোদ্ধাদের সংবর্ধনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে উপজেলা নিবার্হী কর্মকর্তা মোজাম্মেল হক রাসেল সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি হিসাবে বক্তব্য রাখেন সংসদ সদস্য এস. এম. জগলুল হায়দার, বিশেষ অতিথি হিসাবে বক্তব্য রাখেন উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান সাঈদ মেহেদী, থানা অফিসার্স ইনচার্জ দেলোয়ার হুসেন, জেলা আওয়ামীলীগের সাংগঠিক সম্পাদক অধ্যাক্ষ জাফরুল আলম বাবু, থানা আওয়ামীলীগের সভাপতি নরিম আলী মুন্সি, থানা যুবলীগের সভাপতি ও থানা আওয়ামলীগের সাংগঠিক ও উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান নাজমুল আহসান, উপজেলা পরিষদের মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান দিপালী রানী ঘোষ, মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক ডেপুটি কমান্ডার আব্দুল হাকিম, থানা মুক্তিযোদ্ধা সন্তান কমান্ডের সাধারণ সম্পাদক ফারুক হোসেন প্রমুখ। বেলা উপজেলা পরিষদ মাঠে ১১টায় ক্রিড়া প্রতিযোগীতা ও পুরষ্কার বিতরনী অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়। বাদ যোহর সকল মসজিদে জাতীর সুখ সমৃদ্ধী কামনা করে বিশেষ মোনাজাত ও দোয়া অনুষ্ঠিত হয়। বিকাল ৩টায় উপজেলা মাঠে ফুটবল প্রতিযোগীতা এবং লেডিস ক্লাবে মহিলাদের ক্রীড়া প্রতিযোগীতা অনুষ্ঠিত হয়। দুপুর ১২টায় সোহরাওয়ার্দী পার্কে অবস্থিত মুক্তিযোদ্ধা সংসদ মিলনায়তনে পৃথক ভাবে এক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। সন্ধ্যায় উপজেলা পরিষদ মাঠে এক মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়। সন্ধা ৭টায় উপজেলা প্রশাসনের আয়োজনে উপজেলা পরিষদ মাঠে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান এবং মুক্তিযোদ্ধা ভিত্তিক নাটক অনুষ্ঠিত হয়। একই সময় মুক্তিযোদ্ধা সংসদের আয়োজনে সোহারাওয়ার্দী পার্ক ময়দানে রীনা পারভীনের নেতৃত্বে সাংস্কৃতিক ও জারী গান অনুষ্ঠিত হয়। অনুষ্ঠান শেষে র্যাফেল ড্র এর মাধ্যমে বিজয়ীদের মাঝে পুরুষ্কার বিতারণ করা হয়।
কালিগঞ্জে যথাযোগ্য মর্যদায় বিজয় দিবস পালিত


পূর্ববর্তী পোস্ট