কোক স্টুডিও: মধ্যরাতে মেঘদলের ‘বনবিবি’ বন্দনা

কর্তৃক porosh
০ কমেন্ট 25 ভিউস

বিনোদন ডেস্ক:

গুনে গুনে পনেরো দিন পর এলো ‘কোক স্টুডিও বাংলা’ দ্বিতীয় সিজনের দ্বিতীয় গান। আগেই ঘোষণা দেওয়া হয়েছে, গানটির নাম ‘বনবিবি’। গেয়েছে ব্যান্ড ‘মেঘদল’। ‘এ হাওয়ার’ রেশ কাটাতে গানটি ঘিরে শ্রোতাদের মাঝে ছিলো বাড়তি আগ্রহ। সেই আগ্রহ-অপেক্ষার ইতি ঘটেছে বৃহস্পতিবার (৩ মার্চ) দিবাগত রাত ১টায়!

এটিও একটি ব্যতিক্রম ঘটনা বটে। রাত ১টায় কোথাও কোনও গান প্রকাশ হয়েছে কিনা, তা জানার জন্য রীতিমতো গবেষণা করতে হবে। তবে যেহেতু গানটি ‘মেঘদল’র, সুতরাং তাতে ভিন্নতা, ব্যতিক্রমতা থাকবেই।

কর্তৃপক্ষ জানালো, গানের পরিপূর্ণ স্বাদ দেওয়ার জন্যই রাত ১টায় মুক্তি দেওয়া হয়েছে। সময়টি বেছে নেওয়ার বিশেষ কারণ হচ্ছে, এই সময়ে বনের পরিবেশ থাকে শান্ত। তাছাড়া এই গভীর রাতে দর্শক-শ্রোতারাও তাদের দৈনন্দিন জীবনের কোলাহলমুক্ত পরিবেশে থেকে গানটি উপভোগ করতে পারবেন।

মেঘদল বলে, ‘এটি এমন একটি গান, যা দর্শক-শ্রোতাদের এই পৃথিবীর যত কোলাহল ও জটিলতা ভুলিয়ে দেবে। আমরা আশা করছি, এই গান শোনার পর সবাই নিজেদের প্রকৃতির আরও কাছে অনুভব করবেন। কোক স্টুডিও বাংলা’র প্রতিভাবান শিল্পীদের সাথে কাজ করাও একটা দারুণ অভিজ্ঞতা ছিল।’

‘কোক স্টুডিও’র দ্বিতীয় সিজনে ‘মেঘদল’র অংশগ্রহণের খবর আগেই প্রকাশ করেছিলো বাংলা ট্রিবিউন। এরপর থেকেই শ্রোতারা কৌতূহলী হয়ে ছিলো গানটি নিয়ে। সেই কৌতূহল কতখানি যথার্থতা পেয়েছে আর ‘বনবিবি’ গানের পেছনের গল্পই বা কী, চলুন জেনে নেওয়া যাক।

প্রথমেই দৃষ্টিপাত করা যাক গানটির মূল প্রেক্ষাপটে। ‘মেঘদল’র ভোকাল শিবু কুমার শীল বলেন, ‘‘এই গানে বাংলার কৃষিভিত্তিক প্রাণ-প্রকৃতির কথা যেমন আছে, তেমনি অসাম্প্রদায়িক বাংলার কথাও উঠে এসেছে। বরেণ্য শিল্পী এস এম সুলতানকে তার শতবর্ষে এই গানের ভেতর দিয়ে স্মরণ করেছে ‘মেঘদল’।”

এদিকে অন্তর্জাল ঘেঁটে জানা গেলো, ‘বনবিবি’র আসল উপাখ্যান। বনবিবি মূলত এক লৌকিক দেবী। যাকে সুন্দরবন অঞ্চলের অরণ্যজীবী মানুষেরা পূজা করে। তাকে ঘিরে বহু গল্পকথা প্রচলিত রয়েছে ওই অঞ্চলে। ইতিহাসবিদ সতীশচন্দ্র মিত্রের ‘যশোহর খুলনার ইতিহাস’ গ্রন্থের তথ্য অনুসারে, ১৫০০ খ্রিষ্টাব্দের দিকে সুন্দরবন এলাকায় বনবিবির অস্তিত্বের কথা জানা যায়। তিনি ছিলেন মক্কা থেকে আসা ইব্রাহিম (মতান্তরে বেরাহিম) নামের এক ব্যক্তির কন্যা। যার জন্ম হয়েছিলো জঙ্গলে, আর বেড়ে ওঠাও সুন্দরবনের গহীনে। সৃষ্টিকর্তার বিশেষ কৃপায় তিনি অলৌকিক ক্ষমতার অধিকারী হয়েছিলেন এবং বনাঞ্চলের মানুষকে শত্রু ও শোষকের হাত থেকে রক্ষা করতেন।

সেই বনবিবির প্রচলিত গল্পগাঁথার নির্যাস থেকেই ‘মেঘদল’র এই গানের জন্ম হয়েছে। সঙ্গে যুক্ত করা হয়েছে বাংলায় প্রচলিত খনার বচন। গানটিতে ‘মেঘদল’র সঙ্গে কণ্ঠ দিয়ে ভিন্ন মাত্রা এনেছেন জহুরা বাউল।

‘বনবিবি’ গানের কথা লিখেছেন শিবু কুমার শীল ও মেজবাউর রহমান সুমন। শিবুর কম্পোজে আর সংগীত প্রযোজনা করেছে ‘মেঘদল’। গানটির মাধ্যমে শ্রদ্ধা নিবেদন করা হয়েছে প্রখ্যাত চিত্রশিল্পী এস এম সুলতানকে। যিনি তার চিত্রকর্মে বাংলার প্রকৃতি ও মানুষের বন্দনা করে গেছেন।

এই গানের উপস্থাপনাও ‘কোক স্টুডিও’র অন্যসব গানের চেয়ে ভিন্ন। এর জন্য প্রাকৃতিক আবহে সাজানো হয়েছে সেট। আর সেখানে রহস্যময়ী বনবিবির চরিত্রে দেখা দিয়েছেন শিরিন আক্তার শিলা। গানচিত্রটির নির্দেশনা দিয়েছেন কৃষ্ণেন্দু চট্টোপাধ্যায়। চিত্রায়নে কামরুল হাসান খসরু।

প্রতিবেদনটি লেখার আগ পর্যন্ত (৩ মার্চ বেলা ৪টা) ‘বনবিবি’ গানের ভিউ ৩ লাখ ৬১ হাজার ছাড়িয়ে। যা প্রত্যাশার তুলনায় কিছুটা কম বটে। তবে মন্তব্যের ঘরে চোখ রাখলে কিছুটা স্বস্তি মেলে। অধিকাংশ শ্রোতাই গানটির প্রশংসা করছেন। বাংলার প্রাচীন সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের এমন অনন্য উপস্থাপনায় মুগ্ধতা প্রকাশ করছেন তারা।

কোক স্টুডিও বাংলা’র সংগীত প্রযোজক শায়ান চৌধুরী অর্ণব বলেন, “বনবিবি’ গানটা প্রকৃতির বন্দনা করে। প্রকৃতির সাথে একান্ত হওয়ার বিষয়টি এখানে গুরুত্ব পেয়েছে। আমাদের লোকসংগীত ও নিজেদের শহুরে ইন্ডি সুরের মধ্যে চমৎকার একটা ফিউশন তৈরি করেছে মেঘদল। এই গানে তারা খনার বচন ও বনবিবি’র কিংবদন্তির মতো বিভিন্ন উপাদানের সাথে প্রকৃতিতে শুনতে পাওয়া নানা সুরের মিশ্রণ ঘটিয়েছে। তার সাথে যুক্ত হয়েছে ঢেঁকি ও কুলার শব্দ। গ্রামীণ বাংলার চিত্র এখানে খুব সুন্দরভাবে উঠে এসেছে। একইসাথে এই গান আমাদের নিয়ে যায় দূরের কোনও বনে, যেখানে আমরা নিজেদের প্রকৃতির কাছাকাছি অনুভব করতে পারি। দর্শক-শ্রোতাদের আমরা একটি ম্যাজিক্যাল অভিজ্ঞতা উপহার দিতে চেয়েছি। মেঘদলের সাথে কাজ করা আমরা দারুণ উপভোগ করেছি।’’

রিলেটেড পোস্ট

মতামত দিন

error: Content is protected !!