লিটন ঘোষ বাপি: দেবহাটায় চাঞ্চল্যকর জুয়েল হত্যাকান্ডের দেড় মাস অতিবাহিত হলেও এখনও পর্যন্ত হত্যাকাণ্ডের রহস্য উদঘাটন করতে পারেনি আইন শৃঙ্খলা বাহিনী।
গত ২ জুন বুধবার রাতে দেবহাটায় নিজ বাড়ীর পুকুর পাড়ে দূর্বৃত্তদের হাতে নৃশংসভাবে খুন হন আশিক হাসান জুয়েল।
পোষ্ট অফিস এলাকার মৃত আনিছুর রহমানের ছেলে জুয়েল। ধনী পরিবারের সন্তান জূয়েল। প্রায় ৩৫ বিঘা সম্পত্তির বসতভিটায় বৃদ্ধ মা ও একমাত্র শিশুপুত্র আরিয়ান কে নিয়ে বাস করতেন জুয়েল। দুই ভাইয়ের মধ্যে জুয়েল ছিল ছোট। তার বড় ভাই রাজু দীর্ঘদিন ঢাকায় থাকেন।
জুয়েলের স্ত্রী অন্যত্র বিয়ে করে জুয়েলের সংসার ছেড়ে চলে গেছেন।আরিয়ান নামের একটা শিশুপুত্র রয়েছে জুয়েলের। শিশুপুত্র আরিয়ান ও বৃদ্ধ মাকে নিয়েই জুয়েলের সংসার। স্ত্রী সংসার ছেড়ে চলে যাওয়ার পর থেকে জুয়েল প্রায় প্রতিদিন সন্ধ্যার পর বাড়ির আঙিনায় থাকা নিজের বাড়ির পিছনের দিকে পুকুরের সিড়িতে বসে সময় কাটাতেন। স্থানীয়দের ভাষ্যমতে স্ত্রী চলে যাওয়ায় পর থেকে জুয়েল মাদকাসক্ত হয়ে পড়েন।
মাদকের সাথে জড়িত একাধিক ব্যাক্তি জুয়েলের বাড়িতে মাদকদ্রব্য পৌঁছে দিতো। মাঝে মধ্যে সন্ধ্যার পর জুয়েলকে সঙ্গ দিতে ওই পুকুর পাড়ে আসতো চেনা অচেনা অনেকেই।
২ মে বুধবার সন্ধ্যার পর বাড়ির কাজের ছেলেটিকে খাবার আনতে হোটেলে পাঠিয়ে জুয়েল বাড়ির পিছনের পুকুরের সিড়িতে বসে ছিলেন। আর তার শিশুপুত্রকে নিয়ে বৃদ্ধ মা শুয়ে ছিলেন ঘরে। রাত ৮ টার দিকে মোটরসাইকেল চড়ে দুজন ব্যাক্তি বাড়িতে ঢুকে জুয়েলকে খোঁজ করে। অন্ধকারে মোটরসাইকেল থাকা ব্যক্তিদের না চিনলেও তাদেরকে জুয়েলের সঙ্গী ভেবে পুকুর পাড়ের দিকে যেতে বলেন মা।
পুলিশের ধারনা ওই সময়েই পুকুরের সিড়িতে নৃশংসভাবে ভারীবস্তুর আঘাতে জুয়েলকে হত্যা করে পালিয়ে যায় দূর্বৃত্তরা। রাত ৯টার পর তাকে খুজতে গিয়ে পুকুরের সিড়িতে রক্ত পড়ে থাকতে দেখে রক্তের দাগ অনুসরণ করে পুকুরে জুয়েলের লাশ দেখতে পান স্বজনরা। থানা পুলিশকে খবর দিলে পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে জুয়েলের রক্তাক্ত লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। উদ্ধারকালে জুয়েলের জুতো মিললেও তার কাছে থাকা মোবাইল ফোন, পরিহিত লুঙ্গি এমনকি হত্যায় ব্যবহৃত অস্ত্রের এখনও কোন সন্ধান মেলেনি। অন্যদিকে হত্যার আগমুহুর্তে জুয়েলের কাছে আসা ওই দুই মটর সাইকেল আরোহী কারা সেবিষয়ে এখনও নিশ্চিত হতে পারেনি জুয়েলের পরিবার ও পুলিশ।
পরে হত্যার সাথে জড়িত সন্দেহে জুয়েলের অন্যতম সহযোগী ইমরোজ আলী ওরফে চোর ইমরোজকে গ্রেপ্তার করে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে প্রেরণ করে পুলিশ। পাশাপাশি জুয়েলের মা, ভাই রাজু, মামা মনি, স্থানীয় আথলীগ নেতা ভোলা সহ তার সংষ্পর্শে থাকা বাড়ির কাজের ছেলে আলিম, গৃহপরিচারিকা রওশন আরা, কোমরপুরের মিনহাজ, নওয়াপাড়ার হারুন বিশ্বাসসহ ডজনখানেক ব্যাক্তিদের থানায় নিয়ে দফায় দফায় জিজ্ঞাসাবাদ করে পুলিশ।
১৭ জুলাই শনিবার হত্যাকান্ডের ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন সাতক্ষীরা পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মোস্তাফিজুর রহমান। পরিদর্শনকালে তিনি নিহতের পরিবারের সদস্যদের সাথে কথা বলেন এবং মামলার তদন্ত কার্যক্রম সম্পর্কে খোঁজখবর নেন। দ্রুত সময়ের মধ্যে হত্যাকারীদের আইনের আওতায় আনতে পুলিশের সর্বোচ্চ প্রচেষ্টা অব্যহত রয়েছে বলেও তিনি জানান।