নিজস্ব প্রতিবেদক: আশাশুনির নাকনা-দশহালিয়া খেয়াঘাটে অতিরিক্ত অর্থ আদায়, পর্যাপ্ত খেয়া নৌকা না থাকা, পারাপারে অব্যবস্থাপনা, সরকারি নিয়ম মেনে না চলাসহ জনভোগান্তির অভিযোগ পাওয়া গেছে। জানা গেছে, আশাশুনি উপজেলার প্রতাপনগর ইউনিয়নের নাকনা ও অপর প্রান্তে কয়রা উপজেলার মহারাজপুর ইউনিয়নের দশহালিয়া খেয়াঘাটটি একটি জনগুরুত্বপূর্ন আন্তঃজেলা খেয়াঘাট। এই খেয়াঘাটটি দিয়ে প্রতিদিন খুলনা, পাইকগাছা, কয়রা, আশাশুনির প্রতাপনগর, আনুলিয়া, খাজরা এবং শ্যামনগর, কালিগঞ্জসহ বিভিন্ন এলাকার সহস্রাধিক মানুষ, অসংখ্য সাইকেল-মোটরসাইকেলসহ অন্যান্য ছোটখাট যানবাহন পারাপার হয়। এখান দিয়ে প্রতিদিন অসংখ্য রেণু পোনার মাছের গাড়ি, বাগদা চিংড়ী, কাঁকড়া, শাকসবজি, কাঁচামাল, মৌসুমি ফল ও এর ব্যবসায়ীরা পারাপার হয়ে থাকে। এছাড়া কিছু ছাত্র- শিক্ষক ও সরকারি কর্মকর্তা কর্মচারীরাও যাতায়াত করে থাকেন। কিন্তু সব থেকে বড় সমস্যা হলো এখানে পারাপারের জন্য খেয়া নৌকা রয়েছে মাত্র একটি। নৌকাটি নদীর এক প্রান্তে থাকলে অপর প্রান্তের যাত্রীদের দীর্ঘক্ষন অপেক্ষা করতে হয়। বিশেষ করে দুপুর বেলা ও সন্ধ্যার পর এই অপেক্ষা যেন শেষ হতে চায় না। আর নৌকার ইঞ্জিন খারাপ হলেতো সারাবেলা লেগে যায়।
সূত্রে প্রকাশ, স্থানীয় সরকার খুলনা বিভাগের পরিচারক ও আন্ত:জেলা খেয়াঘাট ইজারা কমিটির মাধ্যমে সর্বশেষ বাংলা ১৪৩০ সালের জন্য দশহালিয়া (কয়রা, খুলনা, আশাশুনি, সাতক্ষীরা) খেয়াঘাটটির জন্য ৫ লক্ষ ৩২ হাজার ৫’শ ৭৪ টাকা সরকারি মূল্য নির্ধারন করে দরপত্র আহবান করা হয়। বিধি মোতাবেক আশাশুনি উপজেলার দক্ষিন একসরা গ্রামের আব্দুল সানার পুত্র আকবর সানা খেয়াঘাটটির ইজারা প্রাপ্ত হন।
নিয়মানুযায়ী, নদীর উভয়পাড়ে পারাপারের টোলের পরিমান সম্বলিত সাইনবোর্ড, পর্যাপ্ত খেয়ানৌকা, রাতের বেলায় আলোর ব্যবস্থা, ইজারাদারের নিজস্ব টোলঘর, যাত্রী ছাউনিসহ অন্যান্য ব্যবস্থা থাকার কথা থাকলেও এ রিপোর্ট লেখা পর্ন্ত এখানে এসবের কোনটাই নেই। পারাপারের জন্য সরকার নির্ধারিত ভাড়ার চাইতে দ্বিগুন বা কখনো কখনো ৩/৪ গুন টাকাও আদায় করা হয় বলে অভিযোগ সাধারন যাত্রীদের।
আজিবর নামের এক যাত্রী বলেন, খেয়াঘাটে মাত্র একখানা নৌকা হওয়ায় পারাপারে অনেক সময় লাগে, অনেক ভোগান্তি পেতে হয়। কিছু বললেই নৌকার মাঝি বা সহকারি ঠাস ঠাস করে কিছু ছোট বড় কথা শুনিয়ে দেয়।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক যাত্রী বলেন, সরকারি নিয়মানুযায়ী এই ধরনের নদীতে জনপ্রতি টোল ৫ টাকা, মোটর সাইকেল ১০ টাকা নেয়ার কথা থাকলেও এখানে জন প্রতি ১০ টাকা ও মোটর সাইকেল কখনো ৩০ টাকা কখনো ৪০ টাকা নেয়া হয়। আর সন্ধ্যর পর যাত্রী সংখ্যা একটু কম হলে এই ভাড়া আরও ৩/৪ গুন বেশি আদায় করা হয়।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক শ্যামনগর নিবাসী একজন সরকারি কর্মকর্তা বলেন, আমি মাঝে মাঝে মোটর সাইকেল নিয়ে এই ঘাট পার হই। পারের জন্য ৪০ টাকা দিতে হয়। এই পরিমান একটু বেশি বলেই আমার মনে হয়।
স্থানীয় এক ব্যবসায়ী জানান, গত ১৬ সেপ্টেম্বর একমাত্র খেয়ানৌকার ইঞ্জিনে সমস্যা হয়, ফলে উভয় পাড়ে যাত্রীদের জট পড়ে যায়। ৩/৪ ঘন্টা পর ইঞ্জিন সারাই হওযার পর যাত্রীদের ভোগান্তির অবসান হয়।
এসব ব্যাপারে ঘাটমালিকের ভাই টোল আদায়কারী জহুরুল বলেন, জনপ্রতি ভাড়া ৫ টাকার একটু বেশি তবে যাত্রীদের ঘাট ছাড়া নৌকায় কোন টাকা দিতে হয় না তাই ১০ টাকা নেয়া হয়। আর মোটর সাইকেলের জন্য ২০ টাকা সাথে একজন লোকের জন্য আরও ১০ টাকা যোগ করে ৩০ টাকা এবং দু’জন লোক থাকলে ২০ টাকা যোগ করে মোট ৪০ টাকা নেয়া হয়। ইজারার শর্তানুযায়ী ভোর ৫টা থেকে রাত ১২ টা পর্যন্ত যথানিয়মে পারাপারের ব্যবস্থা করার কথা থাকলেও সন্ধ্যার পর অধিক পরিমান ভাড়া নেয়ার বিষয়টি তিনি এড়িয়ে যান। আর টোল চার্ট বাড়ীতে আছে বলে জানান।
এসব ব্যাপারে ঘাটের ইজারাগ্রহনকারী আকবর সানার সাথে মোবাইলে কথা হলে নিয়মানুযায়ীই টোল নেয়া হয বলে তিনি দাবী করেন। তবে প্রকাশ্য টোল চার্ট, আলোর ব্যবস্থা, নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় যাত্রী ছাউনি না থাকার বিষয়ে তিনি কোন সদুত্তর দিতে পারেননি।
এ ব্যাপারে আশাশুনি উপজেলা নির্বাহী অফিসার রনি আলম নুর এর কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, বিষয়টি একবার একজন ইউ, পি মেম্বর আমাকে জানান, তবে ওখানে নাকি রাস্তা একটু খারাপ আছে। আর এ ব্যাপরে আমার কাছে কেউ লিখিত অভিযোগ করেনি। অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এ ব্যাপারে কয়রা উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. মমিনুর রহমান জানান, সরকারি নিয়মের বাইরে অতিরিক্ত টাকা নেয়ার কোন সুযোগ নেই। টোল চার্ট স্থাপনসহ ইজারার সব শর্তই ইজারাদারকে প্রতিপালন করতে হবে। তিনি আরও বলেন, এ ব্যাপারে কেউ লিখিত অভিযোগ করেনি। অভিযোগ পেলে তদন্ত পূর্বক তিনি ব্যবস্থা নিবেন।
নাকনা-দশহালিয়া খেয়াঘাটে অতিরিক্ত অর্থ আদায়ের অভিযোগ
পূর্ববর্তী পোস্ট