ভুল চিকিৎসায় গৃহবধূর মৃত্যু, হাসপাতাল ভাঙচুর

কর্তৃক porosh
০ কমেন্ট 25 ভিউস

জাতীয় ডেস্ক:

মাদারীপুরে ভুল চিকিৎসায় এক গৃহবধূর মৃত্যু হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন স্বজনেরা। এ ঘটনায় ক্ষুব্ধ হয়ে ওই নারীর স্বজন ও স্থানীয় লোকজনরা শহরের পানিছত্র এলাকার কে আই হাসপাতালে ভাঙচুর চালিয়েছেন।

শুক্রবার (৩ মার্চ) রাত ১১টার দিকে ঘটনাটি ঘটে।

মারা যাওয়া ওই গৃহবধূর নাম শারমীন বেগম (৩০)। তিনি সদর উপজেলার ছিলারচর এলাকার আনোয়ার খালাসির স্ত্রী।

পুলিশ ও স্থানীয়রা জানান, গত ২৩ ফেব্রুয়ারি শহরের পপুলার হাসপাতালে অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে শারমীন এক পুত্র সন্তানের জন্ম দেন। এই হাসপাতালের চিকিৎসক সাইয়েদা সিদ্দিকা এলিজা অস্ত্রোপচার করেন। চিকিৎসার ৭দিন পরে রোগীকে বাবার বাড়িতে নিয়ে যান শারমীনের স্বামী। গত দুই দিন ধরে শারমীন মেরুদণ্ডে প্রচণ্ড ব্যথা অনুভব করতে শুরু করেন। গতকাল শুক্রবার সকাল ৯টায় ডা. সাইয়েদা সিদ্দিকা এলিজাকে বিষয়টি ফোনে জানায় রোগীর স্বজনরা। পরে ডা.সাইয়েদা সিদ্দিকা এলিজা রোগীকে কে.আই হাসপাতালে ভর্তি করার পরামর্শ দেন। সেখানে ডা.সাইয়েদা সিদ্দিকা এলিজার তত্ত্বাবধায়নে শারমীনের চিকিৎসা শুরু হয়। দুপুর ১টার দিকে মেরুদণ্ডের ব্যথা কমানোর জন্য শারমীনের শরীরে ঘুমের ইনজেকশন পুশ করেন চিকিৎসক। রাত ৯টার দিকে হাসপাতালের শয্যায় শারমীনের মৃত্যু হয়। বিষয়টি গোপন রেখে রাত সাড়ে ৯টার দিকে উন্নত চিকিৎসার জন্য শারমীনকে ফরিদপুর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানোর প্রক্রিয়া শুরু করলে বিষয়টি ধরা পড়ে।

শারমীনের স্বজনরা ক্ষুব্ধ হয়ে প্রতিবাদ জানান। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ওই রোগীর স্বজনদের সঙ্গে একপর্যায় কথা কাটাকাটি ও হাতাহাতিতে জড়িয়ে পরেন। পরে মারা যাওয়া রোগীর স্বজন ও স্থানীয় লোকজন ক্ষুদ্ধ হয়ে হাসপাতালটি সামনের গ্লাস ইট দিয়ে ভেঙে ফেলেন এবং অভ্যর্থনা কক্ষে ভাঙচুর চালায়। এরপরই ঘটনার বিচার দাবিতে হাসপাতালের সামনের সড়কে বিক্ষোভ করেন স্বজনেরা। খবর পেয়ে পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।

মারা যাওয়া শারমীনের স্বামী আনোয়ার খালাসী বলেন, ‘পপুলার হাসপাতালে আমার স্ত্রী সিজার করে সাইয়েদা সিদ্দিকা এলিজা। তার ভুল চিকিৎসার কারণে আমার স্ত্রী গত ৭ দিন ধরে ব্যথায় ভুগছিলেন। তার সঙ্গে ব্যথার বিষয়টি নিয়ে পরামর্শ করলে তিনি আমার স্ত্রীকে কে.আই হাসপাতালে ভর্তি করাতে বলেন। তার কথামতো হাসপাতালে ভর্তি করি। পরে হঠাৎ শুনি আমার স্ত্রী আর জীবিত নেই। আমি নিশ্চিত করে বলতে পারি, পিঠের ব্যথায় আমার স্ত্রী মারা যাননি। ডাক্তারের ভুল চিকিৎসা ও অবহেলার কারণে আমার স্ত্রীকে মরতে হয়েছে। আমি বিচার চাই।’

কে.আই হাসপাতালের ব্যবস্থাপনা পরিচালক কবির হোসেন বলেন, ‘আমি ওই রোগীর বিষয় কিছুই জানি না। হাসপাতাল কেন তারা ভাঙচুর চালালো তাও জানি না। তবে চিকিৎকের কোনো ভুল নেই। তিনি তার সঠিক চিকিৎসাই দিয়েছেন।’

পপুলার হাসপাতালের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মনির হোসেন বলেন, ‘সিজার আমাদের এখানে হলেও রোগী সুস্থ্য হয়ে বাড়ি চলে যান। এরপর নাকি অন্য হাসপাতালে রোগী মারা গেছে। আমরা এর বেশি আর কিছুই জানি না।’

মাদারীপুর সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মনোয়ার হোসেন চৌধুরী বলেন, ‘আমরা রোগীর স্বজনদের বুঝিয়ে বলেছি, তারা লাশটি আমাদের কাছে দিয়েছেন। আমরা মারা যাওয়া নারীর লাশ ময়নাতদন্তের জন্য সদর হাসপাতালের মর্গে পাঠিয়েছি। স্বজনদের থানায় অভিযোগ দিতে বলা হয়েছে, তারা অভিযোগ দিলে পুলিশ চিকিৎসক ও হাসপাতালটির বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেবে।’

মাদারীপুর সিভিল সার্জন ডা. মুনীর আহমেদ বলেন, ‘আমরা বিষয়টি শুনেছি। বিষয়টি তদন্ত করে দেখবো।’



রিলেটেড পোস্ট

মতামত দিন

error: Content is protected !!