হাফিজুর রহমান কালিগঞ্জ প্রতিনিধি: যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা হাতকড়া পরানোর অভিযোগে ও বিভিন্ন অনিয়ম ও দূর্নীতির কারণে অবশেষে সাতক্ষীরার কালিগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সরদার মোস্তফা শাহীনকে বাগেরহাট জেলার শরনখোলায় বদলী করা হয়েছে। শনিবার সকাল ১০টায় তিনি শ্যামনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে দায়িত্ব হস্তান্তর করেন। এদিকে দূর্নীতিবাজ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে বদলীর বিরোধিতা করে চাউল দেওয়ার নাম করে গ্রাম থেকে শত শত নারী পুরুষ এনে শনিবার সকালে মিছিল ও মানববন্ধন করেছে একটি মহল। সূত্রমতে গত ১ সেপ্টেম্বর শীতলপুর গ্রামের মরিয়ম খাতুন তার জমিতে পানি ফেলা নিয়ে প্রতিবেশি পুলিশ সদস্য আজিমুদ্দিন এর নামে অভিযোগের প্রেক্ষিতে ২ সেপ্টেম্বর উপজেলা নিবার্হী সরদার মোস্তফা শাহিন ঘটনাস্থলে যায়। সেখানে পুলিশ সদস্য ৫হাজার টাকা জরিমানা করে পাশ^বর্তী যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা অবসর প্রাপ্ত বিজিবি কর্মকর্তা শেখ নুরুল ইসলামকে বাড়ী থেকে ডেকে ৫হাজার টাকা জরিমানা অনাদায়ে ১ মাসের জেল ঘোষনা করে। ঐ সময় কাছে টাকা না থাকায় মুক্তিযোদ্ধা নুরুল ইসলাম সময় চাহিলে তাকে পুলিশ দিয়ে হাতে হ্যান্ডকাপ পরিয়ে গ্রেফতার করে। পরে অপমানের হাত থেকে বাঁচাতে গ্রামের জৈনক মাহিলা বাড়ীতে থেকে ৫ হাজার টাকা এনে দিলে তাকে ছেড়ে দিয়ে আসে। বিষয়টি নিয়ে ৪ সেপ্টেম্বর ভুক্তভোগী মুক্তিযোদ্ধা নুরুল ইসলাম সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসক এস.এম. মোস্তফা কামালের নিকট অভিযোগ করে। উক্ত অভিযোগের প্রেক্ষিতে জেলা প্রশাসক মহোদয় বৃহস্পতিবার বিকাল সাড়ে ৫টার সময় কালিগঞ্জ মুক্তিযোদ্ধা সংসদে এক সভায় মিলিত হয়। উক্ত সভায় উপজেলা নিবার্হী কর্মকতা উপস্থিত মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে মারমুখি আচরণ করলে আলোচনা ভন্ডল করে জেলা প্রশাসক মহোদয় চলে যায়। পরে উপজেলা নিবার্হী কর্মকর্তার অপসারণের দাবিতে আন্দোলন কর্মসূচি ঘোষনা করলে তাকে বদলী করলে শনিবার দায়িত্ব বুঝে দিয়ে বাগেরহাট জেলার শরনখোলা উপজেলায় চলে গেলে কালিগঞ্জ মুক্তিযোদ্ধা সংসদের পক্ষ থেকে এবং জেলা প্রশাসকের অনুরোধে আন্দোলন কর্মসূচি স্থগিত করেন। এছাড়া আরও একাধিক দায়িত্বশীল সূত্র জানায়, মানবাধিকার কর্মী মোসলম আলী হত্যা, ২০১২ সালের ৩১ মার্চ ফতেপুরে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের বাড়িতে অগ্নিসংযোগ ও লুটপাটের নেতৃত্বে দানকারিসহ কমপক্ষে এক ডজন নাশকতা মামলার আসামী কালিগঞ্জ উপজেলার চৌমুহুনী দার“ল উলুম ফাজিল মাদ্রাসার অধ্যক্ষ সাড়ে নয় বছরে দাখিল পাস আব্দুল কাদের হেলালী জেল হাজতে যাওয়ার কারণে ২০১২ সালের অক্টোবর মাসে জিবি কমিটি তাকে সাময়িক বরখাস্ত করে। উচ্চ আদালতের নির্দেশে তিনি চাকুরি ফিরে পেলেও পুলিশ তাকে আবারো গ্রেপ্তার করতে পারে জিবি সভাপতির কাছে এমন আবেদন জানিয়ে দীর্ঘদিন প্রতিষ্ঠানে আসেননি। বিগত উপজেলা নির্বাচনে সাঈদ মেহেদী জয়লাভ করার পর তিনি আবারো অধ্যক্ষ হিসেবে যোগদানকরার পায়তারা করতে থাকেন। এজন্য তিনি সিরাজুল মেম্বরকে প্রধান হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করতে থাকেন। একপর্যায়ে গত ৫ মে উপজেলা চেয়ারম্যানকে সঙ্গে নিয়ে সিরাজুল মেম্বরসহ কয়েকজনকে ম্যানেজ করে মাদ্রাসার চলমান অধ্যক্ষের দায়িত্বে থাকা মনিরুজ্জামানকে বাঁশতলা বাজার থেকে তুলে এনে শিক্ষক হাজিরা খাতায় কাটাকুটি করে লাল কালি দিয়ে দুই মাস গরহাজির লেখার উপর হাজির লেখেন। এমনকি উপজেলা চেয়ারম্যানের বলা বক্তব্য অনুযায়ি ননজুডিশিয়াল স্টাম্পে লিখিয়ে নিয়ে তাতে মনিরুজ্জামানকে সাক্ষর করে সিল মারতে বাধ্য করানো হয়। এ ঘটনায় জিবি কমিটির সভাপতি নুরুল হক বাদি হয়ে উপজেলা চেয়ারম্যান সাঈদ মেহেদী ও কাদের হেলালীসহ আটজনের বিরুদ্ধে দ্রুত বিচার আইনে মামলা করেন। যাহা বর্তমানে বিচারাধীন রয়েছে। সূত্রটি আরো জানায়, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বিশেষ সুবিধা নিয়ে গত ১৩ জুন হেলালীকে অধ্যক্ষ পদে বহাল রাখার জন্য তার পক্ষে একমনগড়া প্রতিবেদন দেন। যা’ কাদের হেলালী বিভিন্ন দপ্তরে জমা দিয়ে জিবি কমিটির বিরুদ্ধে বিষাদগার করেন। একইভাবে কাদের হেলালীকে অবৈধভাবে বেতন ভাতা দেওয়ার জন্য অতিরিক্ত জেলা প্রশাসকের কাছে লিখিতভাবে সুপারিশ করেন। সে অনুযায়ি রুপালী ব্যাংক নলতা শাখা ব্যবস্থাপক পবিত্র কুমার রায় এর উপর চাপ সৃষ্টিকরা হয়। অবস্থা বেগতিক বুঝে নরুল হক গত ৮ সেপ্টেম্বর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার বিরুদ্ধে সাতক্ষীরা প্রেসক্লাবে সংবাদ সস্মেলন করেন। সংবাদ সম্মেলনে তার মানহানি হয়েছে বলে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা গত বৃহষ্পতিবার নরুল হককে কারণ দর্শানোর নোটিশ দিয়ে একসপ্তাহের মধ্যে জবাব দিতে বলেন। এ ছাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার বিরুদ্ধে এক উচ্চ পর্যায়ের জনপ্রতিনিধির সঙ্গে সখ্যতা রেখে তার অফিসের প্রকৌশলী শাহাবুল আলমের আড়াই শত এর বেশি পায়রার ক্ষতিসাধন করার অভিযোগ রয়েছে। পরে তাকে বদলী করেন। অভিযোগ রয়েছে বসন্তপুরের নাসিরউদ্দিন ও ফিরোজ হোসেনের কাছ থেকে অবৈধ সুবিধা নিয়ে নাজিমগঞ্জ বাজারে পেরিফেরি জমির উপর গত শুক্রবার ছুটির দিনে জোরপূর্বক দ্বিতলা ভবন বানাতে সহযোগিতা করার। এদিকে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে স্টান্ড রিলিজ করা হয়েছে এমন খবর পাওয়া মাত্রই কৃষ্ণনগর ইউপি চেয়ারম্যান আকলিমা খাতুন, উপজেলা মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান দীপালী রানী ঘোষ ও অ্যাড. হাবিব ফেরদৌস শিমুল এর নেতৃত্বে শনিবার সকাল সাড়ে ১১টায় উপজেলা পরিষদের সামনে থেকে একটি মিছিল বের হয়। মিছিলটি ফুলতলা মোড়ে শেষ হলে সেখানে এক মানববন্ধন কর্মসুচিতে ওইসব বক্তারা উপজেলা নিবার্হী কর্মকর্তাকে একজন সৎ ও যোগ্য ব্যক্তি দাবি করে তার প্রত্যাহার আদেশ বাতিলের দাবি জানান। তবে শ্যামনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ কামরুজ্জামান বলেন, জেলা প্রশাসকের নির্দেশে তিনি সরদার মোস্তফা শাহীনের কাছ থেকে অতিরিক্ত দায়িত্ব বুঝে নিয়েছেন। তবে তাকে বাগেরহাট জেলায় শরনখোলা উপজেলায় বদলী করা হয়েছে এমনটি জেনেছেন।
মুক্তিযোদ্ধাকে হাত কড়া পরানোর ঘটনায় কালিগঞ্জ ইউএনওকে বদলী


পূর্ববর্তী পোস্ট