রোহিঙ্গাদের প্রতি সংহতি জানিয়ে সৈকতের আকাশে রং বেরংয়ের ঘুড়ি

কর্তৃক porosh
০ কমেন্ট 23 ভিউস

জাতীয় ডেস্ক:

রং-বেরংয়ের ঘুড়ি উড়ছে বিশ্বের সর্ববৃহৎ সমুদ্র সৈকত কক্সবাজারের আকাশে। দর্শনার্থীদের চোখে বিস্ময়ের ঘোর ছড়িয়ে অদূর আকাশে হারিয়ে যাচ্ছে ঘুড়ি, ফিরে আসছে ফের ঘুড়িওয়ালার কব্জায়।

বৃহস্পতিবার বিকেলে বর্ণাঢ্য ঘুড়ি উৎসবে মেতেছিলেন বিদেশিসহ হাজারো মানুষ। শৈশবে ঘুড়ি ওড়ানোর দুরন্তপনার স্মৃতিচারণও করছিলেন অনেকে।

শেষ বিকেলে সৈকতের মুক্ত আকাশে উড়ছে হরেক রঙের ঘুড়ি। একে অন্যের গা ঘেঁষে ভাসছিল আর মনোরম এই দৃশ্য হাজারো দেশি-বিদেশি দর্শক ও পর্যটককে বিমোহিত করে। সৈকতের আকাশে উড়ে ঈগল, উড়োজাহাজ, প্রজাপতি, স্পাইডারম্যান, ডরিমনসহ আরও নানা রঙের কার্টুন আকৃতির ঘুড়ি। এসব ঘুড়িতে প্রথমবারের মতো যেমন বিদেশিরা মেতেছেন, ঠিক তেমনি মেতেছিল শিশুরা।

সিফাত নামের এক শিশু বলেছে, বালিয়াড়িতে ঘুড়ি উড়াতে খুব ভালো লাগছে। এই প্রথম বালিয়াড়িতে ঘুড়ি উড়াচ্ছি।

সৈকত নামের আরেক শিশু বলেছে, প্রথমে ঈগলের ঘুড়ি উড়িয়েছি। তারপর ডরিমনের ঘুড়ি উড়িয়েছি। বেশ মজা পেয়েছি।

এক বিদেশি নারী বলেন, এই ধরনের উৎসব এই প্রথম দেখেছি। নিজ দেশ কিংবা অন্য কোথাও এই উৎসব দেখেনি। ঘুড়ি উড়িয়ে নতুন এক অভিজ্ঞতা অর্জন করেছি, সঙ্গে বেশ মজাও পেয়েছি।

দুরন্ত শৈশব, ঘুড়ি-লাটাই, মুক্ত আকাশ, গ্রামের বিস্তৃত মাঠ- সবই এখন স্মৃতি। কিন্তু ঘুড়ি উৎসবে ঘুড়ি-লাটাই হাতে যেন সেই হারানো শৈশবকে ফিরে পেয়েছেন অনেকে।

সৈকতে বালিয়াড়িতে ছেলে নিয়ে ঘুড়ি উড়াচ্ছিলেন ছৈয়দ মোহাম্মদ। সে জানায়, ঢাকার আকাশে ঘুড়ি উড়ানোর পরিবেশ নেই। ইচ্ছা করলেও ঘুড়ি উড়ানো যায় না। কিন্তু পরিবারের সঙ্গে বিশাল এই সমুদ্র সৈকতের আকাশে ঘুড়ি উড়াতে পেরে খুব ভাল লাগছে।

পর্যটক নিরা আক্তার বলেন, ‘দুরন্ত শৈশব, ঘুড়ি-লাটাই, মুক্ত আকাশ, গ্রামের বিস্তৃত মাঠ- সবই এখন স্মৃতি। আজ জীবনের এই মধ্যবেলায় ঘুড়ি-লাটাই হাতে যেন সেই হারানো শৈশবকে ফিরে পেয়েছি।’

জাতিসংঘের শরণার্থী সংস্থা ইউএনএইচসিআর, বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি ও আর্টোল্যুশনের সঙ্গে কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতের সী গাল পয়েন্টে ঘুড়ি উৎসবের আয়োজন করে। রোহিঙ্গাদের প্রতি সংহতি জানিয়ে কক্সবাজারের সাধারণ মানুষেরা সেখানে স্বতস্ফুর্তভাবে অংশ নেয়। একই সঙ্গে ঘুড়ি উৎসবে অংশ নেন দেশের নানা প্রান্ত থেকে আসা পর্যটকরাও।

আয়োজকরা জানায়, ৫২ বছর আগে এই মার্চ মাসে বাংলাদেশের মানুষ বাধ্য হয়েছিল শরণার্থী হতে, আর তারাই আজ উদারভাবে আশ্রয় দিচ্ছে মিয়ানমারে সহিংসতা ও নিপীড়ন থেকে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গা শরণার্থীদের। কক্সবাজারের মানুষের মানবিক চেতনা আজ আবারও দৃশ্যমান হয়, যখন অনুষ্ঠানে বন্ধু-বান্ধব ও পরিবার নিয়ে আসা স্থানীয় মানুষেরা ঘুড়ি উড়ানোর পাশাপাশি প্রকাশ করছিলেন রোহিঙ্গাদের জন্য অনুপ্রেরণামূলক বার্তা।

ইউএনএইচসিআরের হেড অব কমিউনিকেশন রোজিনা ডি লা পোর্টিলা বলেন, আপনারা যাদের জীবন বাঁচিয়েছেন আমরা তাদের নিজ বাসভূমিতে ফেরানোর জন্য চেষ্টা করছি। আমরা আজকে সেটা মনে করানোর জন্যই ঘুড়ি উড়াচ্ছি যে আমরাও একসময় শিশু ছিলাম, আমাদেরও স্বপ্ন আছে, আশা আকাঙ্ক্ষা আছে। ক্যাম্পের এই যে শিশুরা যাদের খেলার মতো কোন খেলনা নেই। তাদের প্রতি সেই সার্বভৌমত্বের বার্তাটাই আমরা আজকের এই ঘুড়ি উড়ানোর মাধ্যমে পৌঁছে দিতে চাই। বিপুল সংখ্যক রোহিঙ্গা শরণার্থীকে আশ্রয় দেয়ার জন্য এবং আমাদের সব ধরনের সহযোগিতা করার জন্য আবারও বাংলাদেশ সরকারের প্রতি আমরা কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি।

কক্সবাজারে নিযুক্ত ইউএনএইচসিআর-এর প্রধান কর্মকর্তা ইয়োকো আকাসাকা বলেন, ‘ঘুড়ি উড়ানোর সময় আমরা সবাইকে মনে করিয়ে দিতে চাই আমাদের শৈশবের কথা, যখন আমাদের সবারই কিছু আশা ও স্বপ্ন ছিল। রোহিঙ্গা শিশুদেরও এরকম অনেক স্বপ্ন আছে, আর আমরা চাই তাদেরকে যথাযথ শিক্ষা ও দক্ষতা দিয়ে সে স্বপ্নগুলো পূরণে তৈরি করতে। যেন প্রত্যাবাসনের উপযোগী পরিবেশ তৈরি হওয়ার পর তারা নিজ দেশে গিয়ে নিজেদের সমাজ পুনর্গঠন করতে পারে। বাংলাদেশের সরকারের সঙ্গে মিলে রোহিঙ্গা শরণার্থী ও কক্সবাজারের মানুষের জন্য আমরা কাজ করে যাবো।’

অনুষ্ঠানে উপস্থিত হয়ে নিজ হাতে ঘুড়ি উড়িয়েছিলেন কক্সবাজারের টুরিস্ট পুলিশ সুপারিন্টেন্ডেন্ট মো. জিল্লুর রহমান। তিনি বলেন, ‘এই ঘুড়ি উৎসব আমার শৈশবের কথা মনে করিয়ে দিয়েছে। উপস্থিত দর্শকদের আনন্দ দেখে আমি অভিভূত। বন্ধুত্ব ও সংহতির এই ধরনের অনুষ্ঠান আরও আয়োজন করা দরকার।’

অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মো. শাহিনুল হক মার্শাল, প্রেস ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ মুজিবুল ইসলাম। উৎসবে উড়ানো হয় ৫০০ ঘুড়ি। পরবর্তীতে স্থানীয় ও রোহিঙ্গা শিশুদের এসব ঘুড়ি উপহার হিসেবে দেয়া হবে।



রিলেটেড পোস্ট

মতামত দিন

error: Content is protected !!