জাতীয় ডেস্ক:
শিক্ষক ‘অপমান’ করেছেন—এমন অভিযোগ তুলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের এক নেতা ‘আত্মহত্যার চেষ্টা’ করেছেন।
ছাত্রলীগের এ নেতার নাম এস এম এহসান উল্লাহ ওরফে ধ্রুব। তিনি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হল শাখা ছাত্রলীগের প্রশিক্ষণবিষয়ক উপসম্পাদক। এহসান আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের ছাত্র।
গতকাল বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে আটটার দিকে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের শিক্ষক তানজীমউদ্দিন খানের নাম উল্লেখ করে তাঁর বিরুদ্ধে ‘অপমান’ ও ‘অন্যায়ের’ অভিযোগ তুলে একটি পোস্ট দেন এহসান। পোস্ট দেওয়ার পর থেকে তাঁর খোঁজ পাওয়া যাচ্ছিল না বলে জানান ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা।
এহসানের খোঁজ না পেয়ে গতকাল দিবাগত রাত পৌনে একটার দিকে উপাচার্যের বাসভবনের সামনে অবস্থান নেন বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের একদল নেতা-কর্মী। পরে বিভিন্ন হল থেকে ছাত্রলীগের আরও নেতা-কর্মী উপাচার্যের বাসভবনের সামনে আসতে থাকেন।
উপাচার্যের বাসভবনের সামনে ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা ‘শিক্ষকদের নগ্ন কাজ, রুখে দাঁড়াও ছাত্রসমাজ’, ‘শিক্ষার্থীর ওপর নির্যাতন কেন, প্রশাসন জবাব চাই’, ‘শিক্ষকদের কালো হাত, ভেঙে দাও গুঁড়িয়ে দাও’, ‘আমার ভাই নিখোঁজ কেন, প্রশাসন জবাব চাই’ ইত্যাদি স্লোগান দেন।
দিবাগত রাত দেড়টার দিকে ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ্ হলের পুকুরপাড়ে এহসানের খোঁজ মেলে। তাঁকে উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নেওয়া হয়। তিনি একসঙ্গে অনেকগুলো ঘুমের ওষুধ খেয়েছিলেন বলে তাঁর রাজনৈতিক সহকর্মীদের ভাষ্য। এহসানের ফেসবুক পোস্টে একই ইঙ্গিত রয়েছে।
এহসানকে খুঁজে পাওয়ার খবর আসার পরও উপাচার্যের বাসভবনের সামনে ছাত্রলীগের অবস্থান চলতে থাকে। দিবাগত রাত দুইটার দিকে সেখানে যান বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি মাজহারুল কবির ও সাধারণ সম্পাদক তানভীর হাসান। দিবাগত রাত আড়াইটার পর থেকে নেতা-কর্মীরা সেখান থেকে চলে যেতে থাকেন।
এহসানকে খুঁজে পাওয়া ও হাসপাতালে নেওয়ার ছবি ফেসবুকে শেয়ার করে ঢাবি শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক তানভীর লিখেন, ‘আমার ভাইয়ের কিছু হলে কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না। ছাত্রলীগেরও রক্তের মূল্য আছে। প্রয়োজনে রক্ত দিয়ে রক্তের মূল্য আদায় হবে। জয় বাংলা।’
হাজী মুহম্মদ মুহসীন হল শাখা ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক শাহরিয়ার শহীদ ওরফে শুভ অভিযোগ করে বলেন, ‘ছাত্রলীগ করার কারণে এহসানকে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের শিক্ষক তানজীমউদ্দিন খান অপমান করেছেন। এ অপমান সহ্য করতে না পেরে এহসান আত্মহননের চেষ্টা করেছেন।’
আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের বেশ কয়েকজন শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, এহসানের সঙ্গে বিভাগের এক ছাত্রীর বন্ধুত্ব ছিল। এহসান তাঁকে প্রেমের প্রস্তাব দিয়েছিলেন। কিন্তু ছাত্রী তা প্রত্যাখ্যান করেন। পরে ছাত্রী অন্য একজনের সঙ্গে সম্পর্কে জড়ান। এর পর থেকে দুজনের সম্পর্কের অবনতি ঘটে। কয়েক দিন আগে বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থীরা শিক্ষাসফরে যান। সফরের দায়িত্বে ছিলেন বিভাগের শিক্ষক তানজীমউদ্দিন। সফরকে কেন্দ্র করে ছাত্রীর নামে নানা অশালীন কথা ছড়িয়ে পড়ে। গত মঙ্গলবার তানজীমউদ্দিনের সঙ্গে এহসানের কথা হয়। তিনিও ওই ছাত্রী সম্পর্কে নানা অভিযোগ করেন। একে ‘গুজব’ বলে আখ্যা দেন তানজীমউদ্দিন। তিনি গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেলে ক্লাসে এহসানকে দাঁড়াতে বলেন, গুজব ছড়ানো বন্ধ করতে বলেন। গুজবটি কারা ছড়িয়েছেন, তাঁদের নামও জানতে চান তানজীমউদ্দিন। কিন্তু এহসান কারও নাম বলতে চাননি। এহসান কথা বলতে থাকলে তাঁকে ধমকের সুরে থামিয়ে দেন তানজীমউদ্দিন। তিনি বলেন, প্রেমের প্রস্তাব দিয়ে প্রত্যাখ্যাত হওয়ার কারণে সহপাঠী সম্পর্কে তিনি (এহসান) এভাবে কুৎসা রটাতে পারেন না। পরে তানজীমউদ্দিন চলে যান। এরপর এহসান আবার তানজীমউদ্দিনের কাছে গিয়ে বলেন, তিনি তাঁকে অপমান করেছেন। পরে এহসান ও তাঁর কয়েকজন বন্ধুকে ফুচকা খাওয়ান তানজীমউদ্দিন। বিষয়টি নিয়ে আবার তাঁদের মধ্যে কথা হয়।
এহসানকে ‘অপমান’ করার অভিযোগ অস্বীকার করেছেন শিক্ষক তানজীমউদ্দিন। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘এহসানের পোস্টের স্ক্রিনশট দেখে আমি তাঁর বাবার মুঠোফোন নম্বরে কল করি। তাঁর মা ফোন ধরেন। আমি তাঁকে বিষয়টি জানাই। কিছুক্ষণ পর এহসানের নম্বরে কল করি। কলটি কেটে দেওয়া হয়। তাঁর সঙ্গে পরে আমার আর যোগাযোগ হয়নি।’
তানজীমউদ্দিন আজ শুক্রবার সকালে তাঁর ফেসবুকে পোস্ট দিয়ে বলেন, চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী এহসান দ্রুত সুস্থ হয়ে উঠুক, এটাই তাঁর এ মুহূর্তের একমাত্র কামনা। এহসান এখন অনেকটা ভালো আছেন। তিনি পুরোপুরি সুস্থ হয়ে উঠুন। তারপর আসল সত্যটা জানা সবার জন্য জরুরি। তবে এহসানের ফেসবুক স্ট্যাটাস ও আত্মহনন চেষ্টা নিয়ে যে রকম নোংরামি শুরু হয়েছে, সেটা নিয়ে তিনি খুবই মর্মাহত ও হতাশ।
ঢাবির প্রক্টর এ কে এম গোলাম রব্বানী আজ দুপুরে প্রথম আলোকে বলেন, এহসান ঘুমের ওষুধ খেয়ে অচেতন হয়ে শহীদুল্লাহ্ হলের পুকুরপাড়ে পড়ে ছিলেন। পরে তাঁকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে জরুরি চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হয়। তাঁকে দেখতে তিনি গত রাতে হাসপাতালে গিয়েছিলেন। বিভাগের চেয়ারম্যান বিষয়টি সম্পর্কে অবহিত হয়েছেন। এ নিয়ে কীভাবে অগ্রসর হওয়া যায়, সে ব্যাপারে তিনি বিভাগের একাডেমিক কমিটি ও শিক্ষকদের সঙ্গে আলোচনা করবেন।