হয়রানি-শুধুই হয়রানি

কর্তৃক Ahadur Rahman Jony
০ কমেন্ট 114 ভিউস
  • সিন্ডিকেটের কব্জায় সাতক্ষীরা পাসপোর্ট অফিস;

  • ঘুষ না দিলে ছয় মাসেও পাওয়া যায় না পাসপোর্ট;

আহাদুর রহমান জনি: ব্যাংকে টাকা জমা দেওয়ার রশিদ ও প্রয়োজনীয় কাগজপত্রসহ ফরম জমা দেয়ার সময় ঘুষ না দিলে নানান অজুহাতে হয়রানি করা হচ্ছে সাতক্ষীরা পাসপোর্ট অফিসে। হয়রানির শিকার সেবাপ্রার্থীরা বলছেন, ঘুষ না দিলে আবেদনপত্রে নানান ত্রুটি দেখানো হয়। মাসের পর মাস পাসপোর্ট অফিসে ধর্ণা দিয়েও আবেদনপত্র অফিসে জমা দিতে ব্যার্থ হয় তারা। তবে সরকারি ফি-এর বেশি টাকা দিলে ত্রুটি থাকলেও তা বৈধ আবেদনপত্র বলে নিয়ে নেয় কর্মকর্তারা।

এমন কয়েকজন ভুক্তভেগীর সাথে কথা বলে ও সরোজমিনে ঘটনাবলির সত্যতা জানা যায়। খোদ দৈনিক সাতনদী পত্রিকার এক সাংবাদিক তার পাসপোর্ট নবায়নের জন্য গত ২৪ মে অনলাইনে আবেদন করেন। এরপর তিনি ২৬ মে তিনি সাতক্ষীরার ট্রাস্ট ব্যাংকের অনলাইন শাখায় ২১২২-০০০৫৫৫৩৯২০১ নং চালান মূলে পাসপোর্ট ফি জমা দেন। ঐ চালানের কপি ও পুরাতন পাসপোর্ট নিয়ে তিনি সাতক্ষীরার পাসপোর্ট অফিসে জমা দিতে গেলে তার জাতীয় পরিচয়পত্রের সাথে পুরাতন পাসপোর্টের নামের বানানে একটি ‘a’ কম থাকায় জন্য তাকে একটি এফিডেভিট সহ জমা দিতে বলা হয় পাসপোর্ট অফিস থেকে। তিনি এফিডেভিট সম্পন্ন করে এফিডেভিট সহ জমা দিতে গেলে সার্ভার কাজ করছে না বলে তাকে ফিরিয়ে দেওয়া হয়। তখন তিনি পাসপোর্ট অফিসের উপ-পরিচালকের সাথে দেখা করে ঘটনাটি বললে তিনি রবিবারে আসতে বলেন। রবিবারে আসলে ওই সাংবাদিককে জানানো হয় পাসপোর্ট ফি বাড়ানো হয়েছে আপনি আরও ২৩ শ টাকা জমা দেন। ঐ দিনই তিনি টাকা জমা দিতে গেলে সার্ভার বন্দ বলে টাকা জমা করতে পারেননি। ২’জুন বৃহস্পতিবার আবার টাকা জমা দিতে গেলে একই সমস্যা দেখা গেছে। যার কারন পাসপোর্টের ফি’র অতিরিক্ত ২৩’শ টাকা আইনত তার কাছ থেকে আদায় যোগ্য নয় কারন বর্ধিত ফিস এর আগেই তিনি টাকা জমা দিয়েছিলেন। শুধু মাত্র হয়রানির উদ্দেশ্যেই এভাবে তাকে দিনের পর দিন পাসপোর্ট চক্রে ঘোরানো হচ্ছে।
হাফিজুল ইসলাম নামের এক ব্যক্তি জানান, আমি ইন্ডিয়াতে চিকিৎসা করাতে যাব বলে পার্সপোর্ট করতে হয়। পাসপোর্ট করতে গেলে প্রথমে ফরমে ভুল দেখিয়ে ফিরিয়ে দেয়। পরবর্তীতে অফিস সংলগ্ন এক দালালকে ১৫০০ টাকা ঘুষ দিয়ে পার্সপোর্ট করিয়ে নেই। আমার দুলাভাই সৌদিতে যাবে বলে পাসপোর্ট করাতে গেলে তাকেও ১ সপ্তাহ হয়রানি করে। পরবর্তীতে তিনিও বাধ্য হয়ে এক দালালকে ১৫০০ টাকা ঘুষ দিয়ে পার্সপোর্ট করিয়ে নেন। সাতক্ষীরা পার্সপোর্ট অফিসে প্রতিদিন কত মানুষ হয়রানির স্বীকার হচ্ছে তা বলার অপেক্ষা রাখেনা। আমি নিজেই এর ভুক্তভোগী।
শ্যামনগরের কৈখালীর মোক্তার আলীর ছেলে মোঃ আব্দুর রহমান একটি সাধারণ পাসপোর্টের আবেদন করেন। যা ২০২১ সালের ২৯ ডিসেম্বরের মধ্যে হাতে পাওয়ার কথা। অথচ ৬মাস পার হলেও এখনও তিনি পাসপোর্টটি হাতে পাননি।
শ্যামনগরের বংশীপুর গ্রামের ন‚রুল ইসলাম এর পুত্র মোস্তাফিজুর রহমান, আব্দুল হামিদ এর পুত্র শাহিনুর রহমান, ধুমঘাট গ্রামের মৃত শামছুর রহমানের পুত্র মোঃ নূরুজ্জামান সবাই দুই থেকে চার মাস ধরে পাসপোর্ট অফিসে ধর্ণা দিচ্ছে। অথচ এখনও ছবিই তুলতে পারেনি।
সাতক্ষীরা জেলা পাসপোর্ট অফিসে গ্রাহক হয়রানির চিত্র তুলে ধরে ইতোপূর্বে আরো একটি রিপোর্ট সাতনদীতে প্রকাশ হয়েছিলো। তাতে যে সকল ভোগান্তির শিকার গ্রাহকের কথা বলা হয়েছিলো তাদের মধ্যে দেবহাটা উপজেলার সখিপুরের আলমগীর হোসেন অন্যতম। আলমগীর সাতনদীকে জানান যে সকল গ্রাহকের বক্তব্য ওই সংবাদে প্রকাশ হয়েছিলো তাদের পরের দিনই অফিসে ডেকে ছবি তুলে পাসপোর্ট প্রদান করে। কিন্তু তার কিছু দিন পরই আলমগীর হোসেনের ভগ্নিপতি নলতার সাইফুল ইসলাম পাসপোর্ট করতে গিয়ে প্রচন্ড হয়রানির শিকার হন। অবশেষে পাসপোর্ট অফিস সংলগ্ন একটি কম্পোজের দোকানীর মাধ্যমে দেড় হাজার টাকা দিয়ে এ যাত্রায় নিস্তার পান।
শুধু মাত্র দালালদের বিশেষ চিহ্ন আবেদনে না থাকার কারনে আবেদনগুলো জমা নেয়না পাসপোর্ট অফিস। অফিস টাইমের মধ্যে স্বয়ং পাসপোর্ট অফিসের কর্মচারীরা বাইরে এসে অথবা জরুরী ক্ষেত্রে দালালরা অফিসের মধ্যে গিয়ে পাসপোর্টের উৎকোচ লেনদেন করে। কেউ কেউ আবার সাপ্তাহিক ছুটির দিনে কর্মকর্তাদের সাথে দেখা করে ঘুষের টাকা বুঝিয়ে দিয়ে আসে। এ ক্ষেত্রে এক একটি বিটের টাকা আদায়ের দায়িত্বে আলাদা আলাদা কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা থাকে। এছাড়ও বিশেষ ক্ষেত্রে বিকাশেও টাকা নেয় তারা। বিস্তারিত জানতে চোখ রাখুন সাতনদীর তৃতীয় পর্বে……..



রিলেটেড পোস্ট

মতামত দিন

error: Content is protected !!