সচ্চিদানন্দদে সদয়,আশাশুনি: পরিবারের চতুর্থ সন্তান নাসির সরদার (৪০)। তার আরও ৫ ভাই ও ২-বোন রয়েছে। তার উপর বৃদ্ধ মা-বাবা। বাবা মায়ের সন্তান হিসাবে পরিবারের হাল ধরার কথা ছিল তার। কিন্তু ভাগ্য সহায় হয়নি। দুরারোগ্য এক বিরল ব্যাধি বাসা বেঁধেছে শরীরে। ডান পায়ের পাতা থেকে কোমর পর্যন্ত ফুলে প্রচন্ড ভারি হয়ে যাচ্ছে। দেখতে অনেকটাই হাতির পায়ের মত। যার প্রভাবে শরীরের ডান দিকের অংশে বুক, কান এবং মাথাও আক্রান্ত হওয়ার সম্ভবনা দেখা দিয়েছে। ফলে কোনো কাজকর্ম করা বা চলাফেরাও তার পক্ষে অসম্ভব হয়ে পড়ছে।নাসির সরদার সাতক্ষীরা জেলার আশাশুনি উপজেলার নৈকাটি গ্রামে খাস জমিতে বসবাস করেন।তার পিতার নাম আকিমুদ্দীন সরদার ও মাতার নাম মনোয়ার খাতুন।চিকিৎসকরা বলছেন, রোগের নাম ‘ফেলারিয়াসিস’। তবে, পা ফুলে হাতির পায়ের মত দেখা যায় বলে রোগটি ‘ফাইলেরিয়া অ্যালিফ্যান্ট’ নামেও পরিচিত। মশা বা এ জাতীয় বিষাক্ত কোনো প্রাণির কামড়ে এ রোগ দেখা দিয়েছে। তার সুস্থতার জন্য প্রয়োজন উন্নতমানের চিকিৎসা ও প্রচুর অর্থ। কিন্তু তার দরিদ্র পরিবারের পক্ষে অর্থের সংস্থান করা সম্ভব হচ্ছে না। যে কারণে টগবগে যুবক নাসির ধীরে ধীরে অক্ষম হয়ে পড়ছে। একদিকে নিজের অক্ষমতা, অন্যদিকে স্ত্রী,ছেলে মেয়ে মা-বাবার চিকিৎসা এবং ছোট ভাই-বোনের লেখাপড়া ও সংসার পরিচালনায় কোনো ধরনের সহযোগিতা করতে না পারার বেদনায় জীবন ক্রমান্বয়ে দুর্বিষহ হয়ে উঠছে তার।
পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, নাসির ধান ক্ষেতে কামলার কাজ করতো।আট দশ বছর আগে হঠাৎ বিল তেকে ফিরে দেখে পা ফুলতে শুরু করেছে। সঙ্গে প্রচন্ড ব্যথাও। প্রথমে স্বাভাবিক মনে করে ওষুধ সেবন করলেও নিরাময় হয়নি। নিরাময় হচ্ছে, হবে- এ আশায় কেটে যায় কয়েক বছর। কিন্তু ততদিনে হাঁটু পর্যন্ত ফুলে যায়। পা ভারি হতে থাকে। এক পর্যায়ে পায়ের প্রতিটি শিরায় প্রচন্ড যন্ত্রণা, পানি ঝরা, খিঁচুনি এবং বমিসহ বিভিন্ন ধরনের উপসর্গ দেখা দেয়।ইতি মধ্যে সাতক্ষীরা সদর,খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল,বে সরকারি খুলনা স্যার্জিক্রাল মেডিকেল কলেজ,বিভিন্ন হোমিও ডাক্তারের শরনাপন্ন হলেও কিছুই হয়নি। ভারি পা ও অসুস্থ শরীর নিয়ে প্রচন্ড মনোবলের সঙ্গে কখনও কখনও ভ্যান চালিয়েও সংসারের হাল ধরার চেষ্টা করে সে। কিন্তু এখন আর সেটি সম্ভব হয় না। এখন বাড়তে বাড়তে কোমর পর্যন্ত ফুলে গেছে। গোনে গোানে প্রচন্ড যন্ত্রনা করে তখন ঔষ ধ ও কাজ হয় না।দেখতে অনেকটাই হাতির পায়ের মত। এছাড়া এ রোগের প্রভাবে তার বুকের ডান অংশে ব্যাথা অনুভব হচ্ছে। বর্তমানে অর্থাভাবে চিকিৎসা নেওয়া সম্ভব হচ্ছে না
বিরল ব্যাধিতে আক্রান্ত নাসির তার অসহ্য যন্ত্রণা এবং দুর্বিষহ জীবনের অসহায়ত্বের কথা বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেন, একজন সুস্থ মানুষ হিসেবে অন্য দশজনের মত তারও অনেক স্বপ্ন, আশা ছিল। কিন্তু এ রোগের কারণে ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে।অসহায় ভাবে জীবন যাপন করতে হচ্ছে।অর্থাভাবে উন্নত চিকিৎসা করাতে পারছি না। তার এ অসহায়ত্ব দেখে অনেকেই আশ্বাস দিয়েছেন, কিন্তু মেলেনি কোনো সরকারি বা বেসরকারি সহায়তা। এখন তিনি তার চিকিৎসার জন্য রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর সহায়তার আশায় অপেক্ষা করছেন। আবেদন জানিয়েছেন সুস্থ জীবন ফিরে পেতে সামান্য সহানুভুতির।নাসির সরদার বলেন, ‘আমি এ দেশেরই কারও সন্তান, কারও ভাই। আমিও সুস্থ-স্বাভাবিকভাবে বাঁচতে চাই। নিজের সংসার, মা-বাবা ও ছোট ভাই-বোনদের স্ত্রী,পুত্র, কন্যার দেখাশোনা করতে চাই। ভিক্ষা করে নয়, কাজ করে খেতে চাই। কিন্তু এই ভারি পা নিয়ে আমার পক্ষে কিছুই করা সম্ভব হচ্ছে না। প্রধানমন্ত্রী অনেক অসহায়ের চিকিৎসার দায়িত্ব নিয়েছেন। তিনি আমারও দায়িত্ব নিয়ে উন্নত চিকিৎসার ব্যবস্থা করলে কৃতজ্ঞ হতাম’।
নাসিরের পিতা আকুমুদ্দীন ও মা মনোয়ারা বেগম তাদের ছেলের এ দুরারোগ্য ব্যাধির বিষয়ে চরম হতাশা ব্যক্ত করে বলেন, কামলা খেটে উপার্জিত অর্থে এতবড় সংসার চলছে। ছেলের দুরারোগ্য ব্যাধির কোনো চিকিৎসা করাতে পারছি না। ছেলের চিকিৎসার সহায়তার জন্য বৃদ্ধ এ মা-বাবা প্রধানমন্ত্রীসহ সমাজের বিত্তবানদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। তার মোবাইল নং ০১৭৩৪-১৬৫৭২৫।