ইয়ারব হোসেন: কলারোয়া উপজেলা সহকারী পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা (পদায়নকৃত) পিযুষ কুমার ঘোষ অফিস না করেই বেতন ভাতা উত্তোলন করছেন মাসের পর মাস। অভিযোগ আছে তিনি মাঠ পরিদর্শন না করেই ভূয়া যাতায়াত বিল উত্তোলন করে আত্মসাত করেছেন। ৪ কিলোমিটার পথ ৪০কিলোমিটার দেখিয়ে ভুয়া বিল করে ম্যাজিক দেখিয়েছেন তিনি।
তথ্যানুসন্ধানে জানা গেছে, কলারোয়া পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা না থাকায় আশাশুনি উপজেলা পরিবার পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা মো: জাহাঙ্গীর আলম অতিরিক্ত দায়িত্ব পালন করে আসছেন। তিনি সপ্তাহে দুই একদিন আসেন। এমতাবস্থায় সহকারী কর্মকর্তা পিযুষ কুমার ঘোষ অফিসের সর্বেসর্বা।
উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা অফিস সুত্র জানায়, তিনি গত ২০১৬ সালের ১৪ জুলাই কলারোয়ায় যোগ দান করেছেন। যোগদানের পর থেকে তিনি সরকারি মোটর সাইকেলটি ব্যক্তিগত কাজে ব্যবহার করে আসছেন। অফিসে তিনি অনিয়মিত আসেন। মাঝে মধ্যে আসলেও ফিল্ড ভিজিট করার নাম করে বেরিয়ে যায়। আর তিনি অফিসে ফিরে আসেন না।
সরেজমিনে উপজেলার কেরালকাতা ইউনিয়নের হাটুনি গ্রামে ৫-৫-১৯ তারিখে স্যাটালাইট ক্লিনিক পরিদর্শনে না যেয়েও ১৬ কিলোমিটার রাস্তার স্থলে ৪২ কিলোমিটার দেখিয়ে ভ্রমন ভাতা উত্তোলন করেছেন। একইভাবে উপজেলার হেলাতলা ইউনিয়নের ঝাপাঘাট গ্রামে ৯/৬/১৯ স্যাটালাইট ক্লিনিক পরিদর্শন করার কথা উল্লেখ করে ৮ কিলোমিটার রাস্তার স্থলে ২০ কিলোমিটার রাস্তা দেখিয়ে ভূয়া বিল দাখিল করে তা আত্মসাত করেছেন। কেরালকাতা ইউনিয়নের নাকিলা গ্রামে পরিবার কল্যান সহকারী বলে কেউ নেই। অথচ তিনি সেখানে আট ঘন্টা ধরে ভিজিট করার কথা উল্লেখ করে দ্বিগুন পথের দুরত্ব দেখিয়ে ভূয়া বিল দাখিল করে সরকারি টাকা হজম করে দিয়েছেন।
এ বিষয়ে খোজ নিতে উপজেলার কয়লা ইউনিয়নের আলাইপুর দফাদার পাড়ায় গত ৩/৬/১৯ পরিবার কল্যান সহকারীর মাঠ কাজ তদারকি করেছেন উল্লেখ করে যাতায়াত বিল উত্তোলন করেছেন। সরেজমিনে ওই পরিবার কল্যান সহকারীর পরিদর্শন বইতে তার কোন প্রমান পাওয়া যায়নি। এখানে আট ঘন্টা ফিল্ড ভিজিট দেখিয়ে ৬ কিলোমিটার রাস্তা ২০ কিলোমিটার দেখানো হয়েছে। গত ১০/৬/১৯ জয়নগর, যুগীখালী, দেয়াড়া ও কুশোডাঙ্গা ইউনিয়ন স্বাস্থ্যকেন্দ্র পরিদর্শন দেখানো হলেও খাতা কলমে তার কোন প্রমান পাওয়া যায়নি। গত ১৪/৫/১৯ জয়নগর ইউনিয়নের গাজনা গ্রামের পরিবার কল্যান সহকারীর সাথে মাঠ পরিদর্শন দেখিয়ে ভ্রমন বিল উত্তোলন করেছেন। এখানেও উপজেলা সদর থেকে রাস্তার দুরত্ব ৮ কিলোমিটার হলেও তিনি দেখিয়েছেন ৪০ কিলোমিটার। ১৯/৫/১৯ চন্দনপুর ইউনিয়নের হিজলদী গ্রামের পরিবার কল্যান সহকারীর মাঠ পরিদর্শনে না যেয়েও ২৮ কিলোমিটার পথের দুরত্ব ৪২ কিলোমিটার দেখিয়ে ভূয়া বিল ভাউচার তুলে নিয়েছেন। এভাবে তিনি প্রতিদিন উপজেলার কোন না কোন এলাকায় ভিজিট দেখিয়ে সরকারের লক্ষ লক্ষ টাকা উত্তোলন করে তা আত্মসাত করেছেন।
উপজেলা হিসাব রক্ষক অফিসের দেয়া তথ্য মতে গত দুই মাসে (মে-জুন) ১৩ হাজার চারশত চল্লিশ টাকা উত্তোলন করেছেন। কোন ফিল্ড ভিজিট না করে যদি তিনি এভাবেই বিল উত্তোলন করে থাকেন তবে গত চার বছরে প্রায় তিনি ৩ লাখ ১২ হাজার সরকারি টাকা আত্মসাত করেছেন।
এছাড়াও তার বিরুদ্ধে অফিস ফাঁকি দেয়ার অভিযোগ আছে। তিনি অফিসে এসেই ফিল্ডে যাওয়ার কথা বলে বেরিয়ে যান। আসলে তিনি ফিল্ডে না যেয়ে অফিসের মোটর বাইক নিয়ে নিজ বাড়িতে অবস্থান করেন।
অনিয়মের এসব বিষয় নিয়ে জানতে চাইলে উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা পিযুষ কুমার ঘোষ বলেন, আমি সাংবাদিকদের তথ্য দিতে বাধ্য নই। আমার উপরের কর্মকর্তার সাথে পরামর্শ করেই আমি সব করি। প্রয়োজন হলে তার কাছ থেকে জেনে নিন।
উপজেলা কর্মকর্তা (অতি:দায়িত্ব) মো: জাহাঙ্গীর আলম বলেন, এ বিষয়ে তার জানা নেই। পিযুষ কুমার দায়িত্বে অবহেলা করলে তার দায় তিনিই বহন করবেন।
সাতক্ষীরা জেলা সহকারী পরিচালক (পরিবার পরিকল্পনা) রওশন আরা জামান জানান, এ বিষয়ে তার কিছু জানা নেই।