নিজস্ব প্রতিবেদক সাতক্ষীরা জেলায় প্রাচীন যে কয়টি উচ্চ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান রয়েছে তার মধ্যে কালিগঞ্জ উপজেলার কালিগঞ্জ সরকারি কলেজ অন্যতম। স্বাধীনতা পূর্ববতী সময়ে ১৯৬৯ সালের ১লা জুলাই কাকশিয়ালি নদীর দক্ষিণ প্রান্তে প্রতিষ্ঠিত এই কলেজটি এলাকায় শিক্ষা বিস্তারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। এই কলেজের একাডেমিক কার্যক্রম, খেলাধূলা, সহপাঠ্যক্রমিক অন্যান্য কার্যক্রম, পরীক্ষার ফলাফল বরাবরই সন্তোষজনক। কলেজের পরিবেশ, অবকাঠামো, স্থাবর সম্পত্তি উল্লেখ করার মতো। কলেজের সূদীর্ঘ পথচলার এক পর্যায়ে এই কলেজকে ঘিরে শিক্ষক, ছাত্র-ছাত্রী, অভিভাবক, পরিচালনা পর্ষদ ও এলাকাবাসীর মধ্যে দেখা দেয় এক নতুন স্বপ্ন। যদি কলেজটি সরকারী হতো তাহলে এলাকার শিক্ষা বিস্তারে এটি আরও বেশি ভূমিকা রাখতে পারতো। শুরু হয় স্বপ্ন বূনন। শুরু হয় নতুন স্বপ্ন বাস্তবায়নের পথচলা।
প্রাপ্ত তথ্যে জানা গেছে, সরকারীকরনের জন্য কলেজের অধ্যক্ষ জি এম রফিকুল ইসলাম সংসদ সদস্য, উপজেলা চেয়ারম্যান, মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার, উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সম্পাদক, জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সম্পদকের ডিও লেটারসহ মুক্তিযোদ্ধা, সূধী, অভিভাবক, শিক্ষক-কর্মচারি, ছাত্র/ছাত্রী সকলের মতামত ও সাক্ষরিত কাগজপত্র নিয়ে ২০১৫ সালের ২৮ এপ্রিল তারিখে প্রধানমন্ত্রীর দপ্তর, শিক্ষা মন্ত্রনালয়ের ডিজি বরাবর একটি আবেদন করেন, যা প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় ৫ মে ২০১৫ তারিখে গ্রহীত হয়। উক্ত আবেদনের অনুলিপি সংশ্লিষ্ট অন্যান্য দপ্তরেও প্রেরণ করা হয়। এরপর ২০ আগস্ট ২০১৫ তারিখে তৎকারীন জেলা শিক্ষা অফিসার কিশোরী মোহন বৈদ্য কলেজ সরকারী করনের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহনের জন্য ডিজি বরাবর একটি পত্র প্রেরণ করেন। এরপর প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের পরিচালক আবুল কাশেম শামসুদ্দীন স্বাক্ষরিত ৩১ মে ২০১৫ তারিখের এক পত্রে এবং ১৮ জুলাই ২০১৬ তারিখের পৃথক অপর এক পত্রে এ ব্যাপারে ব্যবস্থা গ্রহনের জন্য শিক্ষা মন্ত্রনালয়ের সচীবকে নির্দেশনা প্রদান করা হয়। ইতোমধ্যে ২২ জুন ২০১৫ তারিখে শিক্ষা মন্ত্রনালয়ের সিনিয়র সহকারী সচীব কাউসার নাসরিন স্বাক্ষরিত ৩৭.০০০.০০০.৭০.০৬.০০৩.২০১৪-২২৯ সং স্বারকের এক পত্রে এ ব্যাপারে সরেজমিনে পরিদর্শন পূর্বক প্রতিবেদন প্রেরণের জন্য মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা (মাউশি) বিভাগের মহা পরিচালক কে বলা হয়।
কলেজ সরকারিকরনের জন্য বিভিন্ন দপ্তরে যোগাযোগ করা, বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন দপ্তরে দৌড় ঝাপ করা, সংশ্লিষ্ট উর্দ্ধতন কর্মকর্তা ও দপ্তরে প্রয়োজনীয় তথ্য উপাত্ত উপস্থাপন ও জমা দেয়ায় নিরলস পরিশ্রম করেন কলেজের কর্তব্যপরায়ন অধ্যক্ষ জি এম রফিকুল ইসলাম। কলেজ সরকারিকরনের কাজ যখন এগিয়ে চলতে থাকে ঠিক তখনই থলের বিড়াল বেরিয়ে যাওয়ার ভয়ে কলেজের একটি সুবিধাবাদী চক্র “কলেজ সরকারি হবে না, সরকারিকরনের কাজ এগিয়ে গেছে মর্মে অধ্যক্ষ যা কিছু বলছেন তার কোন ভিত্তি নেই”- এ জাতীয় বিভিন্ন কথা বলে গুজব রটাতে থাকে। সে সময়ে অধ্যক্ষের এ সকল কার্যক্রমকে জাল ভূয়া ও বানোয়াট বলে বিএম শাখার এক শিক্ষক তুচ্ছ তাচ্ছিল্য করে এবং শিক্ষক-কর্মচারিদের মধ্যে বিভিন্নভাবে বিভ্রান্তিকর পরিস্থিতি সৃষ্টি করে। এমনকি কলেজের গন্ডি পেরিয়ে বাহিরের বিভিন্ন জায়গায় সে এ ব্যাপারে লোকজনদেরকে অপব্যাখা ও নানা ধরণের অপপ্রচার ছড়িয়ে কলেজের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন করে। এ বিষয়ে গত ৮ আগস্ট ২০১৬ তারিখে কলেজ পরিচালনা পর্যদের মিটিংয়ে সর্বসম্মত সিদ্ধান্ত মোতাবেক ঐ শিক্ষককে শোকজও করা হয়। তাছাড়া ঐ শিক্ষক সকলকে বিভ্রান্ত করে কলেজের অন্যান্য কতিপয় শিক্ষককে সঙ্গে নিয়ে গোপনে শপথ পড়িয়ে জোট তৈরি করে সরকারীকরনের এবং সরকারিকরনে যিনি বা যারা প্রচেষ্টা চালাতে থাকে তাদের বিরুদ্ধে শক্ত অবস্থান তৈরি করে।
কিন্তু সেই সব সুবিধাবাদী ও দূর্বল সার্টিফিকেটধারী অসাধু ব্যক্তিদের কল্পকাহিনী মিথ্যা প্রমাণিত হয় মাউশি অধিদপ্তর খুলনা অঞ্চলের অতিরিক্ত দায়িত্বপ্রাপ্ত আঞ্চলিক পরিচালক টি এম জাকির হোসেন ও মাউশি অধিদপ্তর খুলনা অঞ্চলের সহকারী পরিচালক সিরাজুল ইসলাম সহ সংশ্লিষ্টরা ২০১৬ সালের ২১ আগস্ট তারিখে কলেজটি সরেজমিনে পরিদর্শন করায়। তাদের পরিদর্শন প্রতিবেদনের প্রেক্ষিতে কালিগঞ্জ কলেজটি সরকারিকরনের নিমিত্তে ২০ মে ২০১৭ তারিখে কলেজের ডিড অফ গিফ্ট সম্পাদন হয়। অর্থাৎ কলেজের যাবতীয় স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তি বাংলাদেশ সরকারের মহামান্য রাষ্ট্রপতির নামে দলিল সম্পাদন করা হয়। এরপর প্রয়োজনীয় কার্যাদি সম্পন্নের মাধ্যমে ১২ আগস্ট ২০১৮ তারিখে ৩৭.০০.০০০০.০৭০.০০২.০০৪.২০১৮-৮৩ নং স্মারকে কালিগঞ্জ কলেজ সরকারিকরনের আদেশ (জিও) জারী হয়, যা ৮ আগস্ট ২০১৮ তারিখে থেকে কার্যকর হবে বলে উক্ত পত্রে উল্লেখ করা হয়। এই আদেশ জারী হওয়ায় কলেজের শিক্ষক-কর্মচারী, ছাত্র-ছাত্রী ও এলাকাবাসীর মধ্যে আনন্দের হিল্লোল বয়ে গেলেও চক্রান্তের পথে বড় ধাক্কা খায় ঐ সব সুবিধাবাদীরা। উল্লেখ্য জিও জারির পর কলেজের শিক্ষক কর্মচারীদের পদ সৃজনের জন্য গত ১৬ মে ২০১৯ তারিখে ডিজি-তে ফাইল প্রেরণ করা হয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে। এখন অপেক্ষা পদ সৃজন আর এডহক নিয়োগের। আর এর মাধ্যমে একটি পরিপূর্ণ সরকারি কলেজে রুপ লাভ করবে কালিগঞ্জ কলেজ। স্বপ্ন পূরণ হবে এলাকাবাসীর। ছাত্র-ছাত্রী ও শিক্ষক- কর্মচারীরা ভোগ করবে পূর্ণাঙ্গ সরকারি সুবিধা। এলাকার শিক্ষা বিস্তারে আরও অগ্রনী ভূমিকায় অবতীর্ন হবে কালিগঞ্জ সরকারি কলেজ।