মো: রাকিব, চট্টগ্রাম:
করোনা ভাইরাসের ভয়াবহ আক্রমন থেকে মানুষকে বাঁচানো, আক্রান্তদের সুচিকিৎসা নিশ্চিত করা, মানুষের দৈনন্দিন জীবনকে আর্থিক ও খাদ্য সংকট রক্ষা এবং চট্টগ্রামে পরিক্ষা বুথ ও আইসিইউ সংখ্যা বৃদ্ধিসহ চট্টগ্রামে সরকারী বেসরকারী সকল হাসপাতালে করোনা রোগীদের হয়রানী কমানোর লক্ষ্যে চট্টগ্রাম নাগরিক ফোরামের ১৩ প্রস্তাব পুরনের দাবীতে ১৩ই জুন ২০২০ইং তারিখে বেলা ৩টায় মহাসচিবের সভাপতিত্বে চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবের সামনে এক মানব বন্ধন অনুষ্ঠিত হয়েছে।
মানব বন্ধনে চট্টগ্রাম নাগরিক ফোরামের চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার মনোয়ার হোসেন লন্ডন হতে তার লিখিত বক্তব্যে জানান, অসুস্থ মানুষকে বাঁচাতে, মানুষের জীবনকে বাঁচাতে, তাদের পরিবার পরিজনের জীবন রক্ষার্থে আজ সারাদেশের মধ্যে জাতীয় অর্থনীতির প্রাণকেন্দ্র ও বাণিজ্যিক রাজধানী চট্টগ্রামের স্বাস্থব্যবস্থার চরম সংকট ও নাজুক অবস্থার কথা আর গোপনীয় কোনো বিষয় নয়। এখানকার চিকিৎসা ব্যবস্থা আজ চরম ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছে। পর্যাপ্ত ভেন্টিলেশন মেশিনের অভাব, হাসপাতালে সিটের অভাব, এখানে পর্যাপ্ত ডাক্তার ও নার্সের অভাব রয়েছে। এই অভাবের কারণে করোনা ভাইরাসের রুগীতো চিকিৎসা পাচ্ছে না, এমনকি হার্ট, স্ট্রোকের রুগিরাও একই সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছেন। জেনারেল ও রেলওয়ে হাসপাতালকে ৫০০ বেডের আধুনিক হাসপাতালে উন্নীত করা এবং উপজেলা হাসপাতালগুলোতে বেডের সংখ্যা দ্বিগুন করা এবং আধুনিকায়ন করতে হবে। পরিস্থিতিতে অগ্রাধিকার ও জরুরি ভিত্তিতে চট্টগ্রামে কয়েকটা ফিল্ড হাসপাতাল সেনাবাহিনীর তত্ত¡াবধানে প্রয়োজন যাতে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে না যায়। হাসপাতালগুলিতে ভেন্টিলেশন এর সংখ্যা বাড়াতে হবে তবে এই সাথে সেট্রাল অক্সিজেন সাপ্লাই ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ও সংশ্লিষ্ট বিজ্ঞানীদের মতে নিঃশ্বাসের সমস্যা নিয়ে আগত করোনা রুগীদের ভেন্টিলেশনে সরাসরি না দিয়ে তার বিকল্প হিসেবে উচ্চ অক্সিজেন চাপ সম্পন্ন সিপ্যাপ ( ঈচঅচ -পড়হঃরহঁড়ঁং ঢ়ড়ংরঃরাব ধরৎধিুং ঢ়ৎবংংঁৎব) মেশিন এর ব্যবহার করা উচিত যার ফলে বেশিরভাগ রুগীকে ভেন্টিলেশন এ যেতে হয় না। করোনা ভাইরাসের আক্রমন স্বার্থকভাবে মোকাবিলা করার জন্য চট্টগ্রাম নাগরিক ফোরামের ১৩ টি প্রস্তাব তথা দাবি অত্যন্ত জরুরিভাবে ও সম্প‚র্ণভাবে বাস্তবায়িত করলে করোনাতে মানুষের জীবন হানি থেকে বাঁচানো সম্ভব হবে বলে তিনি জানান।
ফোরামের মহাসচিব মো. কামাল উদ্দিন বলেন, কোনো অবহেলা ও দীর্ঘস‚ত্রিতা জাতির জন্য চরম বিপদ ডেকে আনতে পারে। দুঃখের বিষয় সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোর কর্ম কর্তাদের অবহেলা ও করোনা নিয়ে ব্যবসার কারণে দেশের বিশেষ করে চট্টগ্রামের করোনা ভাইরাস পরিস্থিতির আশংকাজনক অবনতি এবং চট্টগ্রামের চিকিৎসা ব্যাবস্থার করুণ দশা দেশবাসীকে হতাশ করে দিচ্ছে। এই করোনার সংকট কালেও কিছু অসাধু ব্যক্তি মানবতাহীন কাজ করেছে এবং চালাচ্ছে করোনা ভাইরাসের আদলে ব্যবসা। যে ব্যবসার কারণে সাধারণ রোগীরা যেমন সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে তেমনি বিনা চিকিৎসায় এক হাসাপাতাল থেকে অন্য হাসপাতালের দরজায় দরজায় ধাক্কা খেয়ে এম্বুলেন্সেই প্রাণ হারাতে হচ্ছে অনেক রোগীর।
মানব বন্ধনে অন্যান্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন- জাপার কেন্দ্রীর যুগ্ম সম্পাদক ১৪ দল সমন্বয়কারী আজাদ দোভাষ, বাংলাদেশ ন্যাশনাল আওয়ামী পাটি ন্যাপ এর সাংগঠনিক সম্পাদক মিটুল দাশ গুপ্ত, নাগরিক ফোরামের যুগ্ম মহাসচিব আকরাম হোসেন, এডভোকেট মাসুদ আলম বাবলু, মৌলানা মো: নাছির উদ্দিন কাদেরী প্রমুখ। ফোরামের নেতৃবৃন্দরা জানান, আমাদের ১৩ দফা জরুরি ভিত্তিতে বাস্তবায়ন প্রয়োজন কারণ বিশেষ করে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে চট্টগ্রামকে বিবেচনা করতে হবে কারণ চট্টগ্রামে গুরুতরভাবে করোনা আক্রান্তদের সবাই চিকিৎসার সুযোগ পাচ্ছেন না। এতে প্রতিদিনই মৃত্যুর সংখ্যা বাড়ছে। মানববন্ধনে বর্তমান পরিস্থিতির আলোকে কিছুটা সংশোধিত আকারে চট্টগ্রাম নাগরিক ফোরামের সেই ১৩ দফা উপস্থাপন এবং মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে এসবগুলি বাস্তবায়নে জরুরিভাবে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেয়ার জন্য উদাত্ত আহবান জানানো হয়। মানব বন্ধনের শেষে সাবেক স্বাস্থমন্ত্রী মোহাম্মদ নাছিম এর জন্য শোক প্রকাশসহ তার রুহের মাগফিরাত কামনা করা হয়।