সাতনদী ডেস্ক: অবৈধ সুযোগ সুবিধা না পেয়ে দেবহাটা রূপসী ম্যানগ্রোভ পর্যটন কেন্দ্রের সুনাম ক্ষুন্ন করতে ষড়যন্ত্রে মেতেছে স্থানীয় একটি কুচক্রীমহল। তাদের অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে সেখানকার দায়িত্বরত ব্যক্তিবর্গ। তাই ষড়যন্ত্রের হাত থেকে রক্ষা ও পর্যটন কেন্দ্রের সুনাম রক্ষায় প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহনে প্রশাসনের কর্তাব্যক্তিদের হস্তক্ষেপ কামনা করেছে ভূক্তভোগীরা।
প্রাপ্ত তথ্যমতে, ২০১০-২০১১ সালে দেবহাটার শিবনগরে ইছামতি নদীর ভাঙন কবলিত নোম্যান্স ল্যান্ট রক্ষা, জিববৈচিত্রের অভায়ারণ্য ও বিনোদন কেন্দ্র সৃষ্টির লক্ষ্যে কয়েকশত বিঘা সরকারী চর ভরাট করে বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তের দেবহাটা উপজেলার ইছামতি নদীর কোল ঘেসে সুন্দরবনের আদলে নির্মিত রুপসী ম্যানগ্রোভ পর্যটন কেন্দ্র।
যার মধ্যে বনাঞ্চল ছাড়াও রয়েছে প্রায় একুশ বিঘা জমির একটি লেক ও আশপাশে রয়েছে আরো কয়েকটি মৎস্য চাষ যোগ্য মাঝারি ও বড় আকারের বিস্তৃর্ন ঘের। এই রুপসী ম্যানগ্রোভ পর্যটন কেন্দ্রটি দেবহাটা উপজেলা ও সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসনের যৌথ তত্বাবধানে পরিচালিত হয়। দর্শনীয় পর্যটন কেন্দ্রটি গত বছর জনপ্রশাসন পদকে ভূষিত হয়েছে। ইতোমধ্যেই পর্যটন কেন্দ্রটি উন্নয়নে মেগা প্রকল্পের জন্য ২০ কোটি টাকা বরাদ্দ করেছে বর্তমান সরকার।
২০১৭-২০১৮ সালে তৎকালীন দেবহাটা উপজেলা নির্বাহী অফিসার হাফিজ আল আসাদ থাকা কালিন রুপসী ম্যানগ্রোভ পর্যটন কেন্দ্রটি দেখা শুনার জন্য দায়িত্ব দেন দেবহাটার মৃত তারাদাস ঘোষের পুত্র দিপঙ্কর ঘোষকে। বর্তমান রুপসী ম্যানগ্রোভ পর্যনট কেন্দ্রটি মানুষের বিনোদন কেন্দ্র হিসাবে গড়ে উঠেছে। কিন্তু বর্তমানে একটি মহল একের পর এক চাঁদার টাকা দাবি করায় ম্যানগ্রোভে দায়িত্বরত কর্র্মীরা পড়েছে বিপাকে।
দেবহাটা রুপসী ম্যানগ্রোভ পর্যটন কেন্দ্রে দায়িত্বরত ম্যানেজার দিপঙ্কর ঘোষ জানান, তৎকালীন দেবহাটা উপজেলা নির্বাহী অফিসার হাফিজ আল আসাদ স্যার আমাকে দেবহাটা ম্যানগ্রোভ পর্যটন কেন্দ্রে ম্যানেজারের দায়িত্ব দেন। দায়িত্ব পাওয়ার পর থেকেই প্রশাসনের নির্দেশনায় আমি ও ম্যানগ্রোভে নিয়োজিত কর্মীরা সৎ ও নিষ্ঠার সাথে দায়িত্ব পালন করে আসছি। যার ফলে আগের তুলনায় বর্তমানে ম্যানগ্রোভে দর্শনার্থী বেড়ে চলেছে। কিন্তু তিন হলুদ সাংবাদিকের অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছি। কিছুদিন পূর্বে তিন হলুদ সাংবাদিক আমার কাছে ম্যানগ্রোভের আওতাধীন ঘের ও লেক লিজ নেয়ার কথা বলে।
তখন আমি ঘের বা লেক লিজ নেয়ার ব্যাপারে তাদেরকে উপজেলা প্রশাসনের সাথে যোগাযোগ করতে বলি। তাতে তারা খুশি/সফল না হওয়ায় আবারও কিছু দিন পর এসে বলে ম্যানগ্রোভ পর্যটন কেন্দ্রে অনেক দূর্নীতি হচ্ছে। আমি দূর্নীতি সম্পর্কে জানতে চাইলে তারা অঅমার বিরুদ্ধে নিউজ করবে বলে বিভিন্ন ভয়-ভীতি দেখায়। এক পর্যায়ে তারা বলে আমাদের অফিস ডেকরেশন কাজ চলছে ১০ হাজার টাকা দেন। আমি বলি কিসের জন্য দেব? তখন তারা বলে অনেক সমস্যা আছে দিতে হবে তা না হলে আপনাকে ম্যানগ্রোভ থেকে তাড়িয়ে ছাড়বো।
এরপর চাঁদার টাকার বিষয়টি দেবহাটা উপজেলা নির্বাহী অফিসার সাজিয়া আফরিন স্যারকে জানাই। তিনি বলেন কাউকে কোন চাঁদা দিবেন না। বিষয়টি আমি দেখছি। শুধু তাই নয় ইতোপূর্বে তারা বিভিন্ন অনুষ্ঠানের নাম করে চাঁদা দাবি করে। এছাড়া ১৯ ডিসেম্বর ২০১৯ তারিখে তাদেরই একজন তার পত্রিকার সম্পাদকের নাম করে আমার কাছ থেকে ২০ কেজি পারশে মাছ নিতে আসে। অথচ আমি খোঁজ নিয়ে জানতে পারি উক্ত সম্পাদক এ ব্যাপারে কিছুই জানেন না। বর্তমানে কুচক্রি মহলের সদস্যরা মাছ না পেয়ে ছিপে কামড় দিতে শুরু করেছে। এই তিন হলুদ সাংবাদিকের অত্যাচারে আমরা অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছি।
ম্যানগ্রোভ পর্যটন কেন্দ্র দায়িত্ব পালনে ব্যাপকভাবে হয়রানির শিকার হতে হচ্ছে। এইভাবে চলতে থাকলে দেবহাটার রুপসী ম্যানগ্রোভ পর্যটন কেন্দ্রটি সাংবাদিক নামধারী চাঁদাবাজদের হাতে জিম্মি হয়ে যাবে। তাই আমরা ম্যানগ্রোভে নিয়োজিত কর্মীরা হয়রানি ও এই চাঁদাবাজ সাংবাদিকদের হাত থেকে রক্ষা পেতে উপজেলা ও জেলা প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করছি।
অন্যদিকে নাম প্রকাশে অনচ্ছুক অনেকেই জানান, সাংবাদিক নামধারী তিন জন প্রতি নিয়ত বিভিন্ন ব্যবসায়ী ও সাধারণ মানুষকে নিউজ করার ভয়-ভীতি দেখিয়ে চাঁদা আদায় করে আসছে। আমরা এই তিন সাংবাদিক নামধারী চাঁদাবাজদের হাত থেকে রেহাই পেতে উদ্ধর্তন প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করছি।
এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী অফিসার সাজিয়া আফরিনের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ধারাবাহিক ভাবে উন্নয়ন চলমান রয়েছে। আমি আসার পর থেকে আয় ব্যায়ের হিসাব ও লেনদেন ব্যাংকের মাধ্যমে হচ্ছে। তাই এই পর্যটন কেন্দ্রকে নিয়ে কাউকে ষড়যন্ত্র করতে দেয়া হবে না।