হাফিজুর রহমান, কালিগঞ্জ থেকে: তৃতীয় ধাপে আগামী ২৮ নভেম্বর ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে প্রচার প্রচারনা নিয়ে প্রার্থীরা এখন ভোটারদের দ্বারে দ্বারে ভোট ভিক্ষায় ব্যস্ত সময় পার করছে প্রার্থীরা। যারা বিগত ৫ বছর ক্ষমতায় থেকে ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারে বসে এলাকার উন্নয়নে সেবা দিয়েছেন তাদের উন্নয়ন নাগরিক সেবা নিয়ে ভোটাররা এবার চুল চেরা বিশ্লেষন করে কাকে ভোট দিবেন, কাকে দিবেন না, কাকে ভোট দিলে নাগরিক সেবা এবং এলাকায় উন্নয়ন হবে এমন প্রার্থীকে খুজে বেড়াচ্ছেন। বর্তমান কালিগঞ্জ উপজেলার ৭নং তারালী ইউনিয়ন পরিষদে এবার ভোট যুদ্ধে ৪জন প্রার্থী ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রাম-গঞ্জে চষে বেড়াচ্ছেন। বিগত ৫বছর কালিগঞ্জ থানা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এনামুল হোসেন ছোট চেয়ারম্যান হিসাবে তার দায়িত্ব পালন সময় ইউনিয়ন জুড়ে ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ, স্কুল-কলেজ, রাস্তা, কালভার্ট, ব্রীজ, সাইক্লোন সেল্টার, ভিজিডি কার্ড, ভিজিএফ বয়স্কভাতা, গর্ভকালীন ভাতা সহ নানান সুবিধা দিয়ে এলাকায় ব্যাপক উন্নয়ন করেছেন। এবারও তিনি আওয়ামীলীগের দলীয় মনোনয়নে নৌকা প্রতীক নিয়ে চেয়ারম্যান হওয়ার আশায় ভোটারদের দারে দারে ভোট ভিক্ষায় ছুটে বেড়াচ্ছেন। তিনিও আশাবাদী এবারও জয়লাভ করে তারালী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারে বসে আবারও মানুষকে বেশি বেশি সেবা দিয়ে যাবেন। অন্যদিকে সাতক্ষীরা ডে-নাইট কলেজের অধ্যক্ষ এ.কে.এম শফিকুজ্জামান খোকন তেুঁতলিয়া গ্রামের সন্তান হিসেবে আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়ন না পেয়ে বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে সতন্ত্র প্রার্থী হয়ে আনারস প্রতীক নিয়ে ভোট যুদ্ধে নেমে পড়েছেন এবং তিনিও ভোট ভিক্ষায় ভোটারদের দ্বারে দ্বারে নানান উন্নয়নের প্রতিশ্রæতি দিয়ে ভোট যুদ্ধ চালিয়ে যাচ্ছেন। অধ্যক্ষ শফিকুজ্জামান খোকন তার প্রার্থী হওয়া নিয়ে ইউনিয়ন জুড়ে ব্যাপক আলোচনা সমালোচনা শুরু হয়েছে ভোটারদের মাঝে। ভোটাররা তথা জনগন চায় একটি দূর্নীতি মুক্ত, জবাবদিহীমূলক সেবা কেন্দ্র হিসেবে তারালী ইউনিয়ন পরিষদ পরিচালিত হোক। কিন্তু বিভিন্ন পত্র পত্রিকায় প্রকাশিত খবরে “সাতক্ষীরা ডে-নাইট কলেজের অধ্যক্ষ এ.কে.এম শফিকুজ্জামানের বিরুদ্ধে কোটি টাকার নিয়োগ বানিজ্য সহ কলেজের টাকা আত্মসাতের বিষয়টি নিয়ে এখন টক অব দি তারালী ইউনিয়নে পরিনত হয়েছে। এ প্রসঙ্গে তারালী ইউনিয়ন ঘুরে ভোটারদের মুখোমুখি হলে কাঁকশিয়ালী গ্রামের আব্দুল হামিদ, নির্মল চ্যাটার্জী, লক্ষন, আমিয়ান গ্রামের আজাহার, মোজাফ্ফার, সুব্রত, তারালী গ্রামের ফজের আলী, আবু নাঈম, নূর ইসলাম, জাফরপুর গ্রামের লিয়াকাত, শওকত গাজী, সুজিৎ, বরেয়া গ্রামের আব্দুস সালাম, সরজিৎ, কার্তিক এবং তেঁতুলিয়া গ্রামের তুহিন, সৌমেন দাশ সহ একাধিক ভোটাররা সাংবাদিকদের জানান, যে প্রার্থীর নামে খবরের কাগজে “সাতক্ষীরার দিবা নৈশ কলেজে শিক্ষক নিয়োগে কোটি টাকার বানিজ্য ” “ঘুষের কোটি টাকা দিতে ব্যাংক লোন নিয়েছেন ১৩জন শিক্ষক” “শিক্ষকদের এম.পি.ও ভুক্তির বাহিরেও লক্ষ লক্ষ টাকা ডোনেশন নিয়েছেন অধ্যক্ষ” এরকম বিভিন্ন সংবাদের শিরোনাম হয় সে কিভাবে ইউনিয়ন বাসীর সেবা দিবে বিষয়টি আমাদের বোধোগাম্য নয়। যার সারা শরীরে দূর্নীদির ক্ষত চিহ্ন সে কিভাবে ইউনিয়ন পরিষদকে দূর্নীতিমুক্ত করবে। অধ্যক্ষ শফিকুজ্জামান খোকন যদি একটি কলেজের অধ্যক্ষ হয়ে বাসায় অফিস খুলে জাল জালিয়াতির মাধ্যমে সব কাগজপত্র তৈরি করে সভাপতির অগোচরে অন্তত ১৩জন গরীব অসহায় শিক্ষকের নিকট হতে ৫ থেকে ১০ লক্ষ টাকা ঘুষ নিয়ে নিয়োগ এবং এমপিও ভুক্তির বাণিজ্য করে কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়ার ঘটনা আমরা বিভিন্ন পত্র পত্রিকায় পড়ে বিশ্মিত হয়েছি। আরো দেখেছি যেসমস্ত গরীব, অসহায় শিক্ষককেরা টাকা যোগাড় করতে পারেনি তাদের নামে ব্যাংক একাউন্ট খুলে ব্যাংকে লোন করিয়ে টাকা হাতিয়ে নিয়েছে অধ্যক্ষ। তারা আরো বলেন একজন শিক্ষক হয়ে গরীব অসহায় শিক্ষকদের যে অধ্যক্ষ রক্তচুষে খেতে পারে সে আর যাইহোক তার দ্বারা ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান বানিয়ে ঐ চেয়ারে বসানো যায় না। তিনি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারে বসে গরীবের উন্নয়নের টাকা দিয়ে রক্ত চুষে খাবে না তার কি নিশ্চয়তা আছে? বিষয়টি নিয়ে তারালী ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে ৪জন প্রার্থীকে নিয়ে চুল চেরা হিসাব নিকাশ করছে ভোটাররা। তবে এই সমস্ত বিষয়ে অধ্যক্ষ এ.কে.এম শফিকুজ্জামানের মুঠোফোনে সত্যতা জানার জন্য কথা বললে তিনি সাংবাদিকদের জানান কলেজের খবর সঠিক না। ম্যানেজিং কমিটির দলাদলি নিয়ে একটি পক্ষ এমন সংবাদ প্রকাশ করিয়েছে। আমি তারালী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হলে প্রথমে ঘেরের মাছ চুরি করা বন্ধ তারপর মাদক ও দূর্নীতিমুক্ত ইউনিয়ন পরিষদ গড়ে জনগনের ভাগ্য উন্নয়ন করবো। আরো ২জন প্রার্থীর মধ্যে জামায়াতের সুরা সদস্য সাবেক চেয়ারম্যান মাওঃ আব্দুল গফুর এবার সতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মোটরসাইকেল প্রতীক নিয়ে ভোটারদের দারে দারে চষে বেড়াচ্ছেন। এবার নির্বাচন সুষ্ঠু এবং নিরপেক্ষ হলে জামায়াতের ভোট ব্যাংক খ্যাত তারালী ইউনিয়নে সাড়ে ৫ হাজার ভোট পাবে বলে তিনি আশাবাদী। অন্যান্য দলীয় ভোট কিছু পেলেই তিনি চেয়ারম্যান নির্বাচিত হবেন এটা শতভাগ নিশ্চিত করেন। অন্যদিকে খেলাফত আন্দোলনে কালিগঞ্জ কাঁকশিয়ালী গ্রামের মহব্বত আলী হাতপাখা নিয়ে তারালী ইউনিয়নের এ প্রান্ত থেকে ও প্রান্ত গ্রামে গ্রামে ঘুরে বেড়াচ্ছেন ভোটারদের দারে দারে। সেও জয়ের ব্যাপারে বেশ আশাবাদী। এবারের নির্বাচন প্রসঙ্গে বর্তমান চেয়ারম্যান এবং কালিগঞ্জ থানা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক নৌকা প্রতীকে এনামুল হোসেন ছোট সাংবাদিকদের বলেন ঘাপটি মেরে থাকা আওয়ামীলীগের এক শীর্ষ নেতা ও জনপ্রতিনিধির ইন্ধনে অধ্যক্ষ শফিকুজ্জামান খোকন সহ বিভিন্ন ইউনিয়নে সে প্রার্থী দিয়ে ঘোলা পানিতে আওয়ামীলীগ প্রার্থীদের পরাজয়ে মাছ শিকার করে চলেছে। তারালী ইউনিয়নে আমাকে প্রতিহত করার জন্য তারই ইন্ধনে শফিকুজ্জামান খোকনকে প্রার্থী করে মাঠে ছেড়ে দিয়েছে। আমি যেভাবে জনগনের মাঝে থেকে ৫টি বছর সেবা দিয়েছি আশাকরি সেটা বিবেচনা করে আগামী ২৮ নভেম্বর ব্যালটের মাধ্যমে তারা সঠিক রায়টি দিবে। আমার দায়িত্ব পালন সময়ে ইউনিয়ন পরিষদ আমার বাড়ী এবং ইউনিয়ন বাসী আমার পরিবারের সদস্য ভেবে তাদের মতামতের ভিত্তিতে এলাকায় দলমতের নির্বিশেষে যথাসাধ্য সেবা দিয়েছি। আমার ইউনিয়নে সর্বোচ্চ সেবা দিয়ে ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ, রাস্তাঘাট, স্কুল-কলেজ, মাদ্রাসা, সাইক্লোন সেল্টার, ব্রীজ, কালভার্ট সহ নানামুখী উন্নয়ন করে মানুষকে সেবা দেওয়া হয়েছে। আশাকরি আমাকে ভোট দিয়ে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাতকে শক্তিশালী করে আগামীতে তাদের পাশে দাড়ানোর সুযোগ করে দিবে।