সাব-রেজিষ্টারের বিচক্ষনতায় বন্ধ হলো তঞ্চকী কাগজে জমি রেজিষ্ট্রি;
লক্ষাধীক টাকার বিনিময়ে জাল নামপত্তন করলো নায়েব আনিসুর;
দলিল লেখক এস,এম কামরুজ্জামান সাময়িক বরখাস্ত;
হাবিবুর রহমান: সহকারী ভুমি কর্মকর্তা আনিসুর রহমান এর বিরুদ্ধে জাল নামপত্তন কেন্দ্রিক লক্ষাধিক টাকা ঘুষ গ্রহণের অভিযোগ উঠেছে। তঞ্চকী কাগজে দলিল রেজিষ্ট্রি চেষ্টার অভিযোগে দলিল লেখক এস,এম কারুজ্জামান সাময়িক বরখাস্ত হয়েছে। চাঞ্চল্যকর এ ঘটনায় হতবাক তালার সাধারণ মানুষ।
অনুসন্ধানে গেছে, তালা উপজেলার হরিচন্দকাটী গ্রামের মৃত খালেক শেখের স্ত্রী ও সংরক্ষিত মহিলা মেম্বার মঞ্জুয়ারা খাতুন। তিনি জমি বিক্রির জন্য নামপত্তন করতে সহকারী ভুমি কর্মকর্তা আনিসুর রহমান এর দারস্থ হন। একপর্যায় জমির নামপত্তনের জন্য নায়েব আনিসুর রহমান উল্লেখিত মোটা অংকের টাকা দাবি করেন। ভুক্তভোগী মঞ্জুয়ারা খাতুন নায়েব আনিসুর রহমান এর চাহিদা অনুযায়ী ১ লক্ষ ৩০ হাজার টাকা তুলে দেন দালাল আটারইর গফুরের কাছে। ওই টাকা থেকে পাঁচ হাজার টাকা নিজের জন্য রেখে বাকি টাকা নায়েব আনিসুরকে প্রদান করে গফুর। যার স্বীকারোক্তি গফুর দিয়েছে।
১ লক্ষ ৩০ হাজার টাকা গ্রহণ করে নায়েব আনিসুর রহমান তালা এ,সি,ল্যান্ড অফিসের সহি-সাক্ষর জালিয়াতি করা একটি ভুয়া এবং জাল নামপত্তনের কাগজ হাতে ধরিয়ে দেন বলে দাবি করেন মঞ্জুয়ারা খাতুন। তিনি অভিযোগ করে বলেন, আমি পৈত্রিক সুত্রে তালা মৌজার মিউটেশন নং ৪২৬ খতিয়ানের ২৭৬ দাগের ১৩.৫০ শতক জমি নামপত্তনের জন্য তালা সদর ইউনিয়ন সহকারী ভুমি কর্মকর্তা আনিসুর রহমান এর দারস্থ হই এবং অফিসে জমির নামজারি নিয়ে ওনার সাথে কথা হয়। একপর্যায় নায়েব আনিসুর রহমান তাকে বলেন, তার সহকারী গফুর এর কাছে ১লক্ষ ৩০ হাজার টাকা জমা দেন তারপর আমি এ,সি, ল্যান্ড অফিসে কথা বলে নামজারির ব্যবস্থা করছি। সে মোতাবেক নায়েব আনিসুর রহমান এর সহকারী গফুরের কাছে নগদ ১লক্ষ ৩০ হাজার টাকা তিনি জমা দেন। টাকা জমা দেওয়ার ৩ মাস পরে নায়েব আনিসুর রহমান আমাকে একটি নামপত্তন করা কাগজ বুঝিয়ে দেন। উক্ত নামজারি করা জমি থেকে আমি ৫ শতক জমি আমার দেবর তালা মহিলা ডিগ্রী কলেজের রসায়ন বিভাগের শিক্ষক আব্দুল বারীর নিকট বিক্রয় করার জন্য ইসলামকাটি সাব-রেজিস্ট্রি অফিসে কাগজপত্র দাখিল করি। কাগজপত্র দাখিল করার কিছুক্ষন পর সাব-রেজিস্টার নাম পত্তনের কাগজ ভুয়া এবং জাল সাব্যস্ত করেন। এ সময় কাগজ বহনকারী আমার ছেলে শেখ মাসুদ রানাকে সাব-রেজিস্ট্রার আটক করে। পরবর্তীতে সাব-রেজিস্ট্রার অফিসে ১ সপ্তাহের সময় চেয়ে একটি লিখিত মোচলেকা দিয়ে ছেলেকে তিনি ছাড়িয়ে নিয়ে আসেন।
মঞ্জুয়ারা খাতুন আরও বলেন, নায়েব আনিসুর রহমান তাকে বৈধ নাম পত্তনের কাগজ না দিয়ে একটি জাল নাম পত্তন করা কাগজ হাতে ধরিয়ে দিয়েছেন। তিনি নেপথ্যের কারিগর হিসেবে দায়ী করেন নায়েব আনিসুর রহমা কে। মঞ্জুয়ারা বলেন, নায়েব আনিসুর রহমান নামজারি অনুযায়ী ১৩ শতক জমির দাখিলা দিয়াছেন। তিনি নামজারী যদি না করেছেন এবং সাথে সাথে সমপরিমান জমির দাখিলা দিয়াছেন। নামজারির বৈধ কাগজ না দিলে আমি ও আমার বাবা মরা ছেলে চরম ক্ষতিগ্রস্থ হবো।
তালা ইউনিয়ন সহকারী ভুমি কর্মকর্তা আনিসুর এর ব্যক্তিগত সহকারী গফুর এর সাথে মুঠোফোনে আলাপকালে ১ লক্ষ ৩০ হাজার টাকা উৎকোচ গ্রহণ এর বিষয় জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি মঞ্জুয়ারার নিকট থেকে ৫ হাজার টাকা নিয়ে বাকি টাকা নায়েব আনিসুর রহমান স্যারকে দিয়ে কাজ করে দিয়েছি।
অর্থ নিয়ে জাল কাগজপত্র তৈরির বিষয়ে জানতে তালা সদর ইউনিয়ন সহকারী ভুমি কর্মকর্তা আনিসুর রহমান এর সাথে মুঠোফোনে আলাপকালে তিনি জানান, জমিটির মিউটেশন দিয়েছি ১.৩৫, হোল্ডিং ১.৩৫, খাজনা দাখিলা ১.৩৫। বাকি প্রশ্নের উত্তর আপনারা খঁুঁজে নেন বলেই ফোনের সংযোগ বিচ্ছিন্ন করেন।
২২সেপ্টেম্বর তারিখের মঞ্জুয়ারা খাতুনের জমি বিক্রয়ের লিখিত দলিল রেজিস্ট্রি বন্ধ রাখার বিষয়ে সাতক্ষীরা তালা ইসলামকাটি সাব-রেজিস্টার মইনুল হক জানান, মঞ্জুয়ারা খাতুন জমি হস্তান্তর করার জন্য রেজিস্ট্রি অফিসে প্রয়োজনীয় কাগজ সহ জমির নামপত্তনের কাগজ জমা দেন। নামপত্তনের কাগজটি দেখে সন্দেহ হয়। সেকারণে তিনি তাৎক্ষণিক জমি রেজিস্ট্রি করা বন্ধ ঘোষণা করেন। পাশাপাশি তিনি উল্লেখিত নামপত্তনের কাগজটি তার দপ্তরস্বারক নম্বর ৪১৪ তারিখ ২৮-৯-২০২২ মোতাবেক এসি ল্যান্ড অফিসে যাচাই বাছাই করার জন্য প্রেরন করেন। তাছাড়া ১৩.৫০শতক খাজনা মূল দাখিলাও তার কাছে সংরক্ষিত আছে। সেটিও যাচাই বাছাইয়ের জন্য এসিল্যান্ড অফিসে প্রেরণ করা হয়েছে। অপরদিকে তঞ্চকী কাগজপত্রের মাধ্যমে দলিল রেজেষ্ট্রির চেষ্টার অভিযোগে দলিল লেখক এস,এম কামরুজ্জামান কে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। যা নিশ্চিত করেছেন সাব-রেজিষ্টার মোঃ মইনুল হক।
তালা সহকারী কমিশনার (ভুমি) মোঃ রুহুল কুদ্দুস এর সাথে মুঠো ফোনে আলাপকালে তালা ইসলামকাটি রেজিস্ট্রি অফিস থেকে সাব-রেজিস্টার মইনুল হক মঞ্জুয়ারা খাতুন নামে জমির নামপত্তনের কাগজ টি যাচাই বাছাই করার জন্য প্রেরন করেছেন সে কাগজটি সঠিক কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, অতিরিক্ত দায়িত্ব বুধবার, বৃহস্পতিবার আশাশুনিতে রবিবার অফিসে এসে বিষয়টি অবগত হয়ে জানাবেন।
জনৈক দলিল লেখক বলেন, মিউটেশনের অনলাইন কপিতে ১.৩৫ শতক ডেলিভারি কপিতে ১৩.৫০ শতক এবং নায়েব আনিছুর সাক্ষরিত খাজনার দাখিলা প্রদান করা হয়েছে ১৩.৫০ শতক। নায়েব এর যোগসুত্র আছে বলেই মিউটেশন অনুযায়ী দাখিলা প্রদান করা হয়েছে।
তালা সদরের সহকারী ভুমি কর্মকর্তা আনিছুরের বিরুদ্ধে অসংখ্য অভিযোগ রয়েছে। বাংলাদেশ সরকারের খাজনা দিতে এসে হয়রানির শিকার হতে হয় সাধারণ মানুষদের যা সংশ্লিষ্ট দপ্তর অবহিত আছে। এদিকে জনগনের পকেট কেটে সরকার ও প্রশাসনের সুনাম নষ্ট করে সম্পদের পাহাড় গড়েছে সহকারী ভুমি কর্মকর্তা আনিছুর রহমান।