আহাদুর রহমান: দীর্ঘ প্রতিক্ষার পর আবারও শুরু হয়েছে প্রাণসায়ের খালের অবৈধ দখল উচ্ছেদ কার্যক্রম। গতকাল শনিবার সকাল থেকে সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসন ও পানিউন্নয়ন বোর্ডের সম্মিলিত অভিযানে প্রাণ সায়ের খালের দুই ধারের অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করা হয়। উচ্ছেদের এ পর্যায়ে সাতক্ষীরা শহরের সুলতানপুর বড়বাজার ও এর আশেপাশের এলাকায় উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করা হয়। পর্যায়ক্রমে এ অভিযান চলবে বলে জানিয়েছেন সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসক এসএম মোস্তফা কামাল।
সম্প্রতি জলাবদ্ধতা নিরসনের দাবিতে সাতক্ষীরা শহরে একাধীক মানববন্ধন করা হয়। করা হয় প্রতিবাদ সভা। জলাবদ্ধতায় আটকে পৌর এলাকার মানুষেরা ফুঁসে উঠেন। এরই ধারাবাহিকতায় মানববন্ধন পাল্টা মানবন্ধন অনুষ্ঠিত। হয়। তবে প্রায় সকল মানববন্ধন ও পথ সভায় পৌর এলাকার জলাবদ্ধতার জন্য দায়ি করা হয় খালের অবৈধ দখলকে। দখলদাররা অমানবিক ভাবে দখল করে নেন প্রাণ সায়ের খাল। সাতক্ষীরার জেলা প্রশাসক এস এম মোস্তফা কামাল সাতক্ষীরাতে যোগদান করার পরপরই নজর প্রাণসায়ের খালের দুইধারের অবৈধ স্থাপণা অপসারনের। কিন্তু কিছু প্রভাবশালীরা এত বাধ সাধেন। অবশেষে সকল জল্পনা কল্পনার অবসান ঘটিয়ে গতকাল থেকে আবারও শুরু হয় উচ্ছেদ অভিযান।
সাতক্ষীরা সদর উপজেলার খেজুরডাঙ্গি বেতনা নদী থেকে সাতক্ষীরা শহর হয়ে এল্লারচর মরিচ্চাপ নদী পর্যন্ত এ খালের দূরত্ব প্রায় ১৩ কিলোমিটার। ১৯৬৫ সালের প্রথম দিকে স্থানীয় বাসিন্দাদের মতামতকে প্রাধান্য না দিয়ে বন্যার পানি নিয়ন্ত্রণের নামে খালের দুই প্রান্তে পানি উন্নয়ন বোর্ড স্লুইস গেট নির্মাণ করে। এতে খালে স্বাভাবিক জোয়ার-ভাটা বন্ধ হয়ে যায় এবং এটি বদ্ধ খালে পরিণত হয়।
সাতক্ষীরা শহরের স্টেডিয়াম ব্রীজ থেকে থানাঘাটা ব্রীজ পর্যন্ত দুই ধারের অবৈধ দখলের জন্য এখনো পর্যন্ত খনন কার্য সম্পন্ন হয়নি। মূলত কিছু দখলকারী অবৈধভাবে খালের ভিতর দ্ইু থেকে তিনতলা বাড়ি হাকিয়ে দখল করে রেখেছেন। খাল খননের সময় ঠিকাদার ও তার মেশিনারিজ নিয়ে গেলে তাদের বাধার মুখে আর খাল খনন করা সম্ভব হয়নি। এর মধ্যে আছে উত্তর পলাশপোলের আক্তারুজ্জামান বাচ্চু। তিনি খালের অভ্যন্তরে তিনতলা বাড়ি বানিয়ে রেখেছেন। খাল খনন করার সময় ঠিকাদারদের জাল ম্যাপ দেখিয়ে বিভ্রান্ত করেন। ফলে খালের এ অংশ এখনো পরিপূর্ণভাবে খনন হয়নি।
একই অবস্থা খালের দুই ধারের প্রায় সব স্থানেই। তবে এ উচ্ছেদ অভিযান জনসাধারণের মনে আশার সঞ্চার করেছে।
এক বার্তায় জেলা প্রশাসক এস এম মোস্তফা কামাল জানান, তালিকাভুক্ত সকল অবৈধ স্থাপণা উচ্ছেদ কার্যক্রম চলমান থাকবে।
তিনি আরো জানান, প্রাণসায়ের খাল সম্পুর্ণ অবৈধ দখলমুক্ত না হওয়া পর্যন্ত এ অভিযান অব্যাহত থাকবে। তিনি বলেন, ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য পরিকল্পিত, দৃষ্টিনন্দন ও আধুনিক সাতক্ষীরা শহর গড়ার লক্ষ্যে আমরা কাজ শুরু করেছি। অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ অভিযান শেষ হওয়ার সাথে সাথে সাতক্ষীরা প্রাণ সায়ের খালের দু’ধারে দৃষ্টিনন্দন কাজ শুরু হবে। ইতোমধ্যে কাজের অনেকাংশ শেষ হয়েছে।