সাতনদী অনলাইন ডেস্ক: সংঘবদ্ধ একটি অপরাধী চক্র। ছোটখাটো ব্যবসায়ীরাই তাদের টার্গেট। নারায়ণগঞ্জে এমনই একটি প্রতারক চক্রের মূল হোতাসহ চার সদস্যকে আটক করেছে র্যাব। যারা দীর্ঘ এক যুগ যাবত প্রতারণার মাধ্যমে বিভিন্ন জেলার মানুষের কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে চক্রটি।
অল্প সময়ে বিত্তবান বানিয়ে দেয়ার নানা প্রলোভন দেখিয়ে প্রতারণার মাধ্যমে ফাঁদে ফেলে বিভিন্ন ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে অর্থ হাতিয়ে নেয়াই ছিল চক্রটির পেশা।
র্যাব জানায়, লিখিত অভিযোগের ভিত্তিতে শনিবার (০৮ মে) রাতে ফতুল্লার বিভিন্ন এলাকা থেকে র্যাব-১১ ব্যাটালিয়ানের একটি দল আটক করে ইসহাক আলী, মামুন, খন্দকার রাজু আহমেদ মাসুদ ও ফারুক কবির নামে প্রতারক চক্রটির চার সদস্যকে।
তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ, দেশের বিভিন্ন জেলার ক্ষুদ্র ও মধ্যম শ্রেণির ব্যবসায়ীদের লাভজনক ব্যবসার প্রলোভন দেখিয়ে ঠিকাদারী কাজ বা ডিলারশিপ পাইয়ে দেয়া এবং এজেন্ট নিয়োগের কথা বলে জেলার বিভিন্ন এলাকায় বাসাবাড়িতে তাদের অস্থায়ী সুসজ্জিত অফিসে ডেকে নিয়ে আসে। তাদের কেউ কেউ নিজেদের প্রধানমন্ত্রীর আত্মীয়, শিল্প গ্রুপের মালিক ও ভারতীয় নামিদামি ব্যবসায়ী হিসেবে পরিচয় দিয়ে নানা কৌশলে এইসব ব্যবসায়ীদের প্রতারণার ফাঁদে ফেলে। পরে জামানত বা বিনিয়োগ বাবদ মোটা অঙ্কের টাকা তাদের কাছ থেকে নিয়ে আত্মসাৎ করে আসছে।
অভিযোগ আছে, চক্রটি শুধু কুমিল্লা জেলারই চার ব্যবসায়ীর কাছ থেকে অন্তত ৬৬ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। লাকসাম এলাকার এক শিক্ষকের কাছ থেকে ২৮ লাখ, দাউদকান্দি এলাকার কাঠ ব্যবসায়ীর কাছ থেকে ১১ লাখ ৫৭ হাজার, একই এলাাকার কৃষিজাত ব্যবসায়ীর কাছ থেকে ১৮ লাখ এবং অপর এক ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীর কাছ থেকে সাড়ে ৮ লাখ টাকা নিয়ে মোবাইল ফোন বন্ধ করে অফিস গুটিয়ে নেয় প্রতারকরা।
র্যাব-১১ ব্যাটালিয়ানের সিনিয়র সহকারী পরিচালক মো. জসীম উদ্দিন চৌধুরী সময় নিউজকে জানান, ২০১৯ সালে কুমিল্লার ভুক্তভোগী এমন চার ব্যবসায়ীর লিখিত অভিযোগের ভিত্তিতে চক্রটির সন্ধানে নামে র্যাব-১১ ব্যাটালিয়ানের গোয়েন্দা দল। প্রতারক চক্রের সদস্যদের মোবাইল নম্বর বদলানো ও বারবার অফিস পরিবর্তনের কারণে তাদের শনাক্ত করতে র্যাবের প্রায় দুই বছর সময় বেগ পেতে যায়।
‘এরই ধারাবাহিকতায় শনিবার (৮ মে) রাতে ফতুল্লার গলাচিপা এলাকা থেকে প্রথমে আটক করা হয় খন্দকার রাজু আহমেদ মাসুদকে। পরে তার দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে মাসদাইর এলাকা থেকে র্যাব দুই সহযোগিসহ দেওভোগ এলাকা থেকে আটক করে চক্রটির মূল হোতা ইসহাক আলীকে। তাদের কাছ থেকে উদ্ধার হয় আত্মসাৎকৃত প্রায় অর্ধ লাখ টাকা ও বেশ কিছু মার্কিন ডলার।’
র্যাবের এই কর্মকর্তা আরও জানান, এই প্রতারক চক্রের সদস্যরা অবৈধ পন্থায় বিপুল পরিমাণ অর্থ সম্পদের মালিক হয়েছে। তবে দীর্ঘ এক যুগের প্রতারণার পেশায় এখন পর্যন্ত কোনও সদস্য আইন শৃংখলা বাহিনীর হাতে ধরা পড়েনি। তাদের ফাঁদে পড়ে শত শত ব্যবসায়ী সর্বস্বান্ত হয়েছে বলে আটককৃতরা জিজ্ঞাসাবাদে স্বীকার করেছে।’
তিনি আরও জানান, আটককৃতদের কাছ থেকে প্রাপ্ত তথ্য ও তাদের অনুসন্ধান অনুযায়ী ধারণা করা হচ্ছে সংঘবদ্ধ প্রতারক চক্রটির সাথে আরও অন্তত ১২ থেকে ১৪ জন সদস্য জড়িত আছে এবং তারা বিভিন্ন এলাকায় আত্মগোপন করে রয়েছে। তাদের গ্রেফতারে র্যাবের অভিযান অব্যাহত আছে বলেও জানান র্যাবের এই কর্মকর্তা।