মণিরামপুর (যশোর) প্রতিনিধি: মণিরামপুরের খেদাপাড়া ইউপির সাত নম্বর ওয়ার্ডের মেম্বর তায়জুল ইসলাম মিলনের বিরুদ্ধে ঘর পাইয়ে দেওয়ার কথা বলে এক বৃদ্ধার কাছ থেকে মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে।
অভিযোগ করা হচ্ছে, মেম্বর মিলন তার ওয়ার্ডের কদমবাড়িয়া গ্রামের সেলিনা বেগমকে সরকারি ঘর দেওয়ার কথা বলে চার বছর আগে ১০ হাজার টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। দীর্ঘদিন মেম্বরের পিছু হেঁটে সেই ঘর পাননি বৃদ্ধা। টাকা ফেরত চাইতে গেলে মেম্বর হুমকি দিচ্ছেন বলে অভিযোগ।
সেলিনা বেগমের পঙ্গু স্বামীকে ভাতার কার্ড করে দিয়ে পাঁচ হাজার টাকা নেওয়ার অভিযোগও রয়েছে এই মেম্বরের বিরুদ্ধে। এছাড়া বৃদ্ধার মেয়ের মাতৃত্বকালীন ভাতার কার্ড করে দেওয়ার নামে তিন হাজার টাকা নিয়ে কার্ড না করার অভিযোগ করা হচ্ছে মিলনের বিরুদ্ধে।
এসব ঘটনায় মেম্বর মিলনের শাস্তি চেয়ে ও টাকা উদ্ধারের দাবিতে সোমবার (৫ অক্টোবর) দুপুরে ইউএনও অফিসে লিখিত অভিযোগ করেছেন বৃদ্ধা।
সেলিনা বেগম বলেন, আমার স্বামী সিরাজুল ইসলাম দশ বছর ধরে পঙ্গু। তিনি কাজ করতে পারেন না। অনেক কষ্টে সংসার চলে। চার বছর আগে একদিন মিলন মেম্বর আমার বাড়ি গিয়ে বিশ হাজার টাকা চেয়ে ঘর দেওয়ার কথা বলে। আমার হাতে টাকা ছিল না। মেম্বর টাকার জন্য অন্তত ১৫ দিন আমার বাড়ি গেছে। পরে ঘরের আশায় আমি মাসিক দুই হাজার টাকা সুদ হিসেবে ১০ হাজার টাকা নিয়ে মেম্বরকে দিই। এরপর আর ঘর পাইনি। মেম্বরের পিছনে অনেক হেঁটেছি। আজ না কাল এভাবে মেম্বর ঘুরাচ্ছে। এখন টাকা ফেরত চাইলে মেম্বর হুমকি দিচ্ছে। এরমধ্যে দুই-তিন বছর আগে আমার স্বামীকে বয়স্কভাতার কার্ড করে দিয়ে মেম্বর পাঁচ হাজার টাকা নিয়েছে। আমার মেয়ের গর্ভকালীন ভাতা দেবে বলে তিন হাজার টাকা নিয়ে কার্ড দিইনি। আমি মিলন মেম্বরের বিচার চাই।
সেলিনা বেগমের প্রতিবেশী বাবুল হোসেন বলেন, মিলন ওই মহিলার কাছ থেকে ১০ হাজার টাকা নেওয়ার বিষয়টি গ্রামের অনেকেই জানে। তাছাড়া মেম্বর নিজে আমার কাছে স্বীকার করেছে।
‘জমি আছে ঘর নাই’- প্রকল্পের অধিনে বছর চারেক আগে মণিরামপুরে একলাখ টাকার ঘরের তালিকা শুরু হয়। তখন ঝাঁপা, মনোহরপুর, ভোজগাতী, মণিরামপুর সদর ইউনিয়নে অনেকে ঘর পেয়েছেন। পরে প্রকল্পটির কাজ বন্ধ হয়ে যায়। সেই ঘরই সেলিনা বেগমকে দিতে চেয়েছিলেন মিলন মেম্বর।
এদিকে মোটা অংকের টাকা নিয়ে বিধবাভাতা করিয়ে দেওয়া এবং কার্ডের নাম করে টাকা নিয়ে কার্ড না দেওয়ার একাধিক অভিযোগ রয়েছে মেম্বর মিলনের বিরুদ্ধে।
কদমবাড়িয়া গ্রামের মৃত আক্কাজ মিস্ত্রির স্ত্রী রুব্বান বেগম বলেন, এক বছর আগে বিধবা ভাতার কার্ড করে দিয়ে দুই কিস্তিতে মিলন মেম্বর ছয় হাজার টাকা নেছে।
একই গ্রামের কালু মিয়া বলেন, মিলন মেম্বর পরপর দুই বার মেম্বর হয়েছে। প্রথমবার পাশ করার পর আমারে বয়স্কভাতার কার্ড দেবে বলে দুই হাজার টাকা নেছে। আজও কার্ড পাইনি।
মাহমুদকাটি গ্রামের ভ্যান চালক ইয়াকুব বলেন, আমার স্ত্রীর গর্ভকালীন ভাতা দেবে বলে চার বছর আগে মিলন মেম্বর একহাজার টাকা নেছে। কার্ডও পাইনি, টাকাও ফেরত দিইনি।
এমন অভিযোগ মিলনের বিরুদ্ধে বহু রয়েছে বলে ভুক্তভোগীরা জানান। বিষয়গুলো তদন্ত করে মিলনের শাস্তির দাবি তাদের।
তবে অভিযোগের ব্যাপারে মেম্বর তায়জেল ইসলাম মিলন বলেন, আমি সেলিনা বেগমের কাছ থেকে ঘর দেওয়ার নামে কোন টাকা নিইনি। কোন কার্ড করতে আমি টাকা নিইনা।
জানতে চাইলে ইউএনও সৈয়দ জাকির হাসান বলেন, বষয়টি তদন্ত করে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এই ব্যাপারে কোন ছাড় হবে না।