মোঃ আমজাদ হোসেন মিঠু,শ্যামনগরঃ “শেখ হাসিনার উদ্যোগ; ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ” এই প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে বর্তমান সরকার সারা বাংলার প্রতিটি ঘরকে বিদ্যুতের আলোয় আলোকিত করতে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। এরই ধারাবাহিকতায় সাতক্ষীরা পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি সাতক্ষীরার সাতটি উপজেলার মধ্যে দুটি উপজেলাকে ইতিমধ্যে শতভাগ বিদ্যুতায়ন ঘোষণা করেছে। বাকী ৫টি উপজেলাকে আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে শতভাগ বিদ্যুতায়ন ঘোষণা করার লক্ষে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে সাতক্ষীরা পল্লী বিদ্যুৎ বিভাগ। কিন্তু কতিপয় স্বার্থন্বেসী ব্যক্তি বা মহল সরকারের এই উন্নয়ন কাজকে বাধা গ্রস্ত করছে। দুষ্ট এই চক্রটি আর্থিক ফায়দা লুটের জন্য তৃণমূল পর্যায়ে বিদ্যুৎ সংযোগ দেওয়ার নাম করে বিদ্যুৎ প্রত্যাশীদের নিকট থেকে মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। এমন অভিযোগ উঠেছে সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলার কাশিমাড়ী ইউনিয়নের কাচিহারানিয়া গ্রামে।
সরেজমিনে পরিদর্শন ও ভুক্তভোগীদের বরাত দিয়ে জানা যায়, গত দুইবছর ধরে বিভিন্ন মেয়াদে কাচিহারানিয়া গ্রামের মোঃ আহমেদ শেখের পুত্র আব্বাস আলী শেখ ঐ এলাকায় বিদ্যুৎ পাইয়ে দেওয়ার নাম করে গ্রাহক পিছে ২৫০০ -৩০০০ করে টাকা নিয়েছে। এই এলাকায় বিদ্যুৎ প্রত্যাশী প্রায় ৫৩ জন ভুক্তভোগী গ্রাহকের নিকট থেকে প্রায় লক্ষাধিকের বেশি টাকা আত্মসাৎ করেছে বলে অভিযুক্ত আব্বাস আলী শেখের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে। ভুক্তভোগীরা আরও জানান, বিদ্যুৎ দেওয়ার নাম করে দুবছর ধরে শুধু আশ্বাস দিয়ে যাচ্ছে আব্বাস আলী শেখ। বিদ্যুৎ ও দিচ্ছে না, টাকা ও ফেরত দিচ্ছে না! ভুক্তভোগী সুরেন্দ্র মন্ডলের ছেলে কালিপদ মন্ডল জানান, আব্বাস আলী গত দুবছর আগে কারেন্টের মিটার দেওয়ার নাম করে তিন হাজার টাকা নিয়েছে। বর্তমানে মিটার ও দিচ্ছে না, টাকা ও ফেরত দিচ্ছে না। একই এলাকার মৃত সাকাত আলী গাজীর ছেলে লুৎফর রহমান জানান, কারেন্ট দেওয়ার নাম করে গত এক বছরেরও উর্ধে আব্বাস আলী আড়াই হাজার টাকা নিয়েছে। এখনও কারেন্ট দেয়নি। আব্বাস আলীকে বারবার বলছি, তবে সে বলছে “শীতকালে কারেন্ট কি করবা”?
ঐ এলাকার ভোলানাথ মন্ডলের স্ত্রী দীপালী জানান, মিটারের জন্য আব্বাস শেখের কাছে এক বছর আগে তিন হাজার টাকা দিয়েছি, এখনও আমরা কারেন্ট পাইনি। মুজিবর নামে অপর এক বিদ্যুৎ প্রত্যাশী ব্যক্তি জানান, আমার বাড়িতে দুটি মিটারের জন্য পাঁচ হাজার টাকা নিয়েছে আব্বাস শেখ। পরে বিদ্যুতের খুঁটি হতে আমার বাড়ি পর্যন্ত সার্ভিস তাঁর টানানোর সময় আরও পাঁচশত টাকা নিয়েছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এমন ভুক্তভোগীদেরও বিদ্যুৎ নিয়ে অভিযোগের শেষ নেয়। যারা গত দুবছর ধরে তাদের কষ্টার্জিত অর্থ বিদ্যুৎ সংযোগ নেওয়ার জন্য স্থানীয় প্রভাবশালী আব্বাস শেখের হাতে তুলে দেয়। কিন্তু আব্বাস আলী স্থানীয়দের সাথে বিদ্যুৎ নিয়ে গত দুবছর ধরে তালবাহানা করে আসছে। আসলে এই আব্বাস শেখ বিদ্যুৎ বিভাগের কে? যে কিনা বিদ্যুৎ দেওয়ার নামে স্থানীয়দের নিকট থেকে লক্ষাধিক টাকা হাতিয়ে নিয়ে দিব্যি ঘুরে বেড়াচ্ছে। আব্বাস আলী শেখ কাছে ভুক্তভোগীরা টাকা ফেরত চাইতে গেলে সে হুমকি দিয়ে বলে, এরকম টাকা মেরে দেয়ার ক্ষমতা আমার আছে। পারলে তোরা টাকা আদায় করে নিস। সরেজমিনে তদন্তের করলে ভুক্তভোগীদের নিকট থেকে এমন অভিযোগের সত্যতা মিলবে। এ বিষয়ে মোবাইল ফোনে আব্বাস আলী শেখের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, মোস্তাফিজুর ও আমি একসাথে কাজ করি। টাকা আমি একা খায়নি, মোস্তাফিজুরকে ও দিয়েছি। এবং সে দৈনিক সাতনদী পত্রিকার প্রতিবেদককে বলেন, এব্যাপারে আমি আপনাদের সাথে কোন কথা বলতে চাই না। এটি আমার গ্রামের ও বিদ্যুৎ বিভাগের বিষয়। আপনি আমার কাছে এ বিষয়ে আর কখনো ফোন দেবেন না, বলে ফোন কেটে দেয়। এ বিষয়ে মোবাইল ফোনে মোস্তাফিজুর রহমানের সঙ্গে কথা হলে তিনি বলেন, আমি ও একজন সাংবাদিক। আব্বাস আলীর সাথে আমার সম্পর্ক আছে। তবে সে বিদ্যুৎ সংযোগ বা মিটার বাবদ আমাকে কোন টাকা পয়সা দেইনি। এলাকা সুত্রে জানা যায়, মোস্তাফিজুর শ্যামনগর ১৪ এর সাবেক পরিচালক মোঃ নজরুল ইসলাম চৌকিদার বাবলুর সাথে থাকতেন এবং তারই নাম ভাঙিয়ে বিভিন্ন জায়গা থেকে বিদ্যুৎ সংযোগ ও মিটার দেয়ার নাম করে লক্ষ লক্ষ টাকা সংগ্রহ করছেন। তার কাশিমাড়ি আদম মোল্লার মোড়ে একটি মুদি দোকান ছিল। এই কর্মকান্ডের সাথে যুক্ত হবার পর থেকে অল্পদিনে লাখপতি বনে গেছেন, এবং ইতি মধ্যে তিনি কাশিমাড়ি বল্লার টোপ গ্ৰামে আলিশান বাড়ি নির্মাণ করছেন। তাছাড়াও কাশিমাড়ীতে শামীমা নার্সিং পয়েন্ট নামে তার একটি রেনু বাগদার ব্যবসা প্রতিষ্ঠান রয়েছে। এলাকাবাসী জানান, মোস্তাফিজুর রহমান নতুন শার্টের মত প্রায়াই সময় নিত্যনতুন মোটর সাইকেল ব্যবহার করে। এলাকায় এখন তার অনেক নাম। সে নিজেকে বিদ্যুতের লোক পরিচয় দিয়ে এলাকায় বিদ্যুৎ সংযোগের নামে হাজার হাজার টাকা নিয়ে আজকে সে লাখপতি বনে গেছেন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক অনেকে জানান, মোস্তাফিজুরের বাড়ি কাশিমাড়ীর বোল্লারটোপ গ্রামে। কয়েক বছর ধরে মোস্তাফিজুর নিজেকে বিদ্যুৎ বিভাগের ‘লোক’ বলে দাবী করে ইউনিয়নের প্রায় প্রত্যেকটি গ্রামে বিদ্যুৎ বিভাগের কর্মীদের সাথে কাজ করে কয়েক লক্ষ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। তারা আরও বলেন, বিদ্যুৎ অফিসের অনেক কর্মকর্তা – কর্মচারীর সাথে মোস্তাফিজুরের রয়েছে গভীর সম্পর্ক। ভুক্তভোগী ও এলাকাবাসীর অভিযোগ তাদের কষ্টার্জিত অর্থ ফেরত পাওয়া সহ মোস্তাফিজুর রহমান ও আব্বাস আলী কতৃক বিদ্যুৎ সংযোগ দেয়ার নাম করে সাধারণ মানুষের সাথে প্রতারণার ও টাকা আত্মসাতের বিরুদ্ধে তদন্তপূর্বক আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানান। এবং অতি দ্রুত বিদ্যুৎ সংযোগের জন্য সাতক্ষীরা -৪আসনের মাননীয় সাংসদ এসএম জগলুল হায়দার সহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের আশু হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।