রোজগার করে রাজনীতির পিছনে ব্যায় করি, মুঠো খুলে দেই মুঠো ভরে নেই না;
সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের দলীয় কোন্দল প্রকাশ্যে পর্ব ৩
হাবিবুর রহমান: আমার লেখাপড়া কম তাই ছাত্ররাজনীতি নেই। পয়ত্রিশ বছর ধরে রাজনীতির সঙ্গে আছি। ধাপে ধাপে উঠে এসে আজ সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহ-সভাপতি থেকে ভারপ্রাপ্ত সভাপতি হয়েছি। শহিদুল ভাইর সাথে আমার হরিহর আত্মা। তার বাড়ীতে পিঠা-পুলি, মুরগি হলেই দাওয়াত পাই। চাকুরী করা কি মানুষের অপরাধ। এক নাগাড়ে এসব কথা বলেন, সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের নেতা শেখ আব্দুর রশিদ। আমরা দু’ভাই ঘুমিয়ে ছিলাম। ৭ ডিসেম্বর সম্মেলনের সময় শীর্ষ নেতারা আমাদের জাগালেন এবং বলেন শহিদুল ইসলাম সভাপতি, রশিদ সিনিয়র সহ-সভাপতি হবে। কিন্তু সার্কিট হাউজে বসে সে সিদ্ধান্ত পাল্টানো হলো। কেন হলো? সেটি নেতাদের কাছে আমার প্রশ্ন।
সাতনদী’র সাথে একান্ত সাক্ষাতকারে আওয়ামী লীগ নেতা শেখ আব্দুর রশিদ বর্ণনা করেছেন, ১৯৮৫ সাল থেকে তার ধারাবাহিক রাজনীতি, ব্যবসা-বাণিজ্য ও বৈবাহিক জীবনের ইতিবৃত্ত।
শেখ আব্দুর রশিদের বাড়ী কালিগঞ্জ উপজেলার চম্পাফুল ইউনিয়নে। ১৯৮৫ সালে সেখানকার ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের কমিটিতে সদস্য পদ পান। ১৯৯০ সালে তিনি জীবন-জীবিকার জন্য সাতক্ষীরা আসেন। চাকুরী নেন একটি চিংড়ীপোনা বিক্রয় কেন্দ্রে, পরে আর থেমে থাকতে হয়নি তাকে। পার্টনারশিপে চিংড়ি চাষ শুরু করেনে। ১৯৯৭ সালে তিনি সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সদস্য পদে আসীন হন। সদস্য পদের আগে তিনি দলের অন্য কোন পদে ছিলেন না। সরাসরি সদস্য পদ লাভ করেন। ২০০৩ সালে সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক হন তিনি। ২০১৪ সালে সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক হন শেখ আব্দুর রশিদ। ২০১৯ সালের ৭ ডিসেম্বর সম্মেলনে সাতক্ষীরা সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের ২ নং সহ-সভাপতি হন। এরপর সিনিয়র সহ-সভাপতি মোঃ শহিদুল ইসলাম পদত্যাগ করলে তাকে ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ঘোষণা করে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক তাকে পত্র দেন।
শেখ আব্দুর রশিদ অকপটে স্বীকার করে বলেছেন, শহিদুল ভাইর সাথে তার মনের সম্পর্ক। ভাবী পিঠা পুলি বানালে, মুরগী রান্না করলে শহিদুল ভাই ফোনে ডেকে নেন। সেই ভাইর সাথে এখন কথা নেই। এর জন্য দায়ী শীর্ষ নেতারা। শহিদুল ভাই আমি ঘুমিয়ে ছিলাম, র্শীর্ষ দু’জন নেতা আমাদের জাগালেন এবং বল্লেন ৭ ডিসেম্বরের সম্মেলনে শহিদুল সভাপতি হবে এবং রশিদ সিনিয়র সহ-সভাপতি হবে। কেন্দ্রের নেতা এস এম কামাল হোসেনও একই সুরে কথা বলেন। কিন্তু একজন নেতার বিরোধীতায় তা ভেস্তে যায়। এ জন্য দায়ী দলের শীর্ষ নেতারা। জাল-জালিয়াতি করে আমাকে ভারপ্রাপ্ত সভাপতি বানানো হয়নি। পর্যায়ক্রমে প্রক্রিয়ার মাধ্যমে ভারপ্রাপ্ত সভাপতি করা হয়েছে। তবে তিনি স্বীকার করে বলেন, প্রক্রিয়াগত ত্রæটি বিচ্যুতি থাকতে পারে এবং তা সংশোধনেরও সুযোগ আছে। এটা নিয়ে কাদা ছোঁড়াছুড়ির মানে হয়না। জেলা কমিটির পূর্ণাঙ্গ সভায় শহিদুল ভাইর পদত্যাগপত্র নিয়ে পর্যালোচনা করে সিদ্ধান্ত নিলে এ বিতর্কের অবসান ঘটবে। তিনি এও বলেন, শহিদুল ভাইকে ভারপ্রাপ্ত সভাপতি করা হলেও তার আপত্তি নেই বরং খুশীই হবেন।
রাজনীতি করতে হলে পকেটের টাকায় করতে হয় একথা উল্লেখ করে শেখ আব্দুর রশিদ বলেন, আমি নজরুল সাহেবের চিংড়ি পোনা ব্যবসায় চাকুরী নেই। পরে তার সাথে পার্টনারশিপে চিংড়ি চাষ শুরু করি। এরপর ঠিকাদারী যা এখনও চলমান। আমাকে আর পিছনে ফিরতে হয়নি। ব্যবসা করে ২৯ বিঘা জমি কিনেছি। ৯ বিঘা বিক্রি করে দলের ও রাজনীতির পিছনে ব্যয় করেছি। মুঠো খুলে দিয়েছি কিন্তু কোনদিন মুঠো ভরে নেইনি। চাকুরী করা কোন অপরাধ নয় উল্লেখ করে শেখ আব্দুর রশিদ বলেন, জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক একজন ক্লিন ইমেজের মানুষ। চাকুরীর সুবাদে তার প্রতিষ্ঠানে ঢুকেই আমি আজকের এই রশিদ। এজন্য আমি গর্ববোধ করি এবং আমি নজরুল সাহেব এর অনুসারী বলতেও দ্বিধা করিনা বরং গর্ববোধ করি।
জামায়াত বিএনপির নির্যাতন: ২০০৩ সালে জামায়াত-বিএনপির নির্যাতনে আমার ডান পা গুড়ো হয়ে যায়। আজও পায়ের মধ্যে রড আছে। ২০১৩ সালে জামায়াত-বিএনপির কয়েক’শ লোক আমার ধুলিহরের বাড়ীতে হামলা করে ভাংচুর করে। সে চিহ্ন আছে আজও।
বৈবাহিক জীবনের কথা উল্লেখ করে আব্দুর রশিদ বলেন, দূর্ভাগ্যক্রমে আমাকে একাধিক বিয়েতে বসতে হয়েছে। বিয়ের চারদিনের মাথায় আমার প্রথম স্ত্রী নূরনাহার পাগল হয়ে যায়। দ্বিতীয় স্ত্রী জাহানারা অসুস্থ হয়ে পড়লে আমি সোনিয়া পারভীন শাপলাকে বিয়ে করি কিন্তু সে আমাকে ডিভোর্স দিলে আমি তানজিলাকে বিয়ে করি। এখন আমি তিন কন্যা সন্তানের জনক। আমি পরিবার পরিজন নিয়ে সুখে শান্তিতে আছি। ব্যবসা-বাণিজ্য করে টাকা রোজগার করি। সেই টাকা খরচ করে রাজনীতি করি। হাত পেতে রাজনীতি করিনা এটা আমার গর্ব।