সুভাষ চৌধুরী : শনিবার রাত ১১টায় শহরের শিবতলায় ছাত্রলীগ নেতা আজমীর হোসেন ফারাবি সন্ত্রাসীদের হামলায় পায়ে গুলিবিদ্ধ হয়েছে। একই সময় আহত হয় জেলা ছাত্রলীগের সাধারন সম্পাদক সৈয়দ সাদিকুর রহমান। আহতদের সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। পুলিশ জানিয়েছে, জেলা ছাত্রলীগ সম্পাদক সৈয়দ সাদিকুর রহমানের নেতৃত্বে ছাত্রলীগের বেশ কয়েকজন সদস্য শহরের শিবতলা এলাকায় পৌছাতেই তাদের লক্ষ্য করে সন্ত্রাসীরা গুলিবর্ষন করে। এতে পায়ে গুলিবিদ্ধ হয় জেলা ছাত্রলীগের প্রস্তাবিত যুগ্ম সম্পাদক আজমীর হোসেন। তিনি সাতক্ষীরা পৌর আওয়ামী লীগের সাধারন সম্পাদক শাহাদাত হোসেনের ছেলে। একই সময়ে সন্ত্রাসীদের ছোড়া ইটপাটকেলে গুরুতর আহত হয় জেলা ছাত্রলীগের সাধারন সম্পাদক সৈয়দ সাদিকুর রহমানসহ আরও কয়েকজন। গুলিবিদ্ধ আজমীর হোসেনের বাবা শাহাদাত হোসেন জানান, নাশকতার লক্ষ্যে একদল সন্ত্রাসী শিবতলার ব্যাংক কর্মকর্তা খলিলুর রহমানের বাড়ির ছাত্রমেসে জড়ো হয়েছে এমন খবর যাচাই করতে ছাত্রলীগের সদস্যরা সেখানে যায়। এ সময় পুলিশকেও খবর দেয় তারা। তিনি জানান, পুলিশ ঘটনাস্থলে আসতে না আসতেই সন্ত্রাসীরা তাদের লক্ষ্য করে প্রথমে গুলি ও পরে ইটপাটকেল ছোড়ে। খবর পেয়ে গ্রামবাসী সেখানে পৌছালে সন্ত্রাসীরা পালিয়ে যাবার চেষ্টা করে। তাদের চারজনকে গনপিটুনি দেয় গ্রামবাসী। পুলিশ তাদের আটক করে নিয়ে যায়।
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার বলেন,
সাতক্ষীরার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোঃ ইলতুৎমিশ শনিবার রাতে জানান কারা এই হামলা ও গুলি করেছে তা খুঁজে বের করতে মাঠে নেমেছে পুলিশ। এ ঘটনায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য চারজনকে আটক করা হয়েছে। এরা হচ্ছে খুলনার কয়রা উপজেলার মো. ইব্রাহিম, যশোরের মনিরামপুরের মহিবুল্লাহ রুবেল, সাতক্ষীরার ঘোনার এমদাদুল হক মিলন ও গাংনি গ্রামের মুস্তাকিমবিল্লাহ। তাদের কক্ষ থেকে জামায়াত ও শিবিরের বেশ কিছু লিফলেট চাঁদার রসিদ, মাসিক মিটিংয়ের রুটিন ও বইপত্র জব্দ করা হয়েছে। এ ঘটনায় পুলিশ বাদি হয়ে অজ্ঞাত ৪০/৫০ জনের বিরুদ্ধে মামলার প্রস্তুতি নিয়েছে।
গুলিবিদ্ধ আজমীর বলেন,
সাতক্ষীরা জেলা ছাত্রলীগের প্রস্তাবিত যুগ্ম সম্পাদক গুলিবিদ্ধ আজমীর হোসেন ফারাবি সদর হাসপাতাল শয্যা থেকে বলেন ‘রাতে আমরা শহরের কুখরালিতে এক স্থানে ছিলাম। খবর পাই শিবতলার ওই মেসে নাশকতার লক্ষ্যে কয়েক ব্যক্তি গোপন সভায় বসেছে। বিষয়টি আমরা সদর থানার ওসিকে জানাই। আমরা একটি প্রাইভেট কার ও কয়েকটি মোটর সাইকেল নিয়ে সেখানে যেতেই উপরতলার একটি কক্ষ থেকে বলা হয় পাশের রুমে তারা মিটিং করছে। তিনি বলেন আমরা দরজা ঠেলে ঢুকতেই ছাত্ররা আমাদের ওপর আঘাত করে । প্রথমে ইটপাটকেল ছুড়ে আমাদের প্রতিহত করার চেষ্টা করে। পরপরই তারা গুলি করে। এই গুলিতে আমি আহত হই। ইটের আঘাতে আহত হন সৈয়দ সাদিকুর রহমানও। তবে জেলা ছাত্রলীগের সাধারন সম্পাদক সৈয়দ সাদিকুর রহমান অসুস্থ অবস্থায় হাসপাতাল বেডে নিদ্রামগ্ন থাকায় তার সাথে কথা বলা যায়নি। ছাত্রলীগ নেতাদের হাতে লাঠিসোটা ছিল কিনা জানতে চাইলে আজমীর বলেন কয়েকজন সদস্য গাছের ডাল ভাংছিল। আমি নিষেধ করেছিলাম।
জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি যা বলেন,
জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি রেজাউল ইসলাম রেজা বলেন ঘটনার সময় আমি বাড়িতে ছিলাম। তবে যা জেনেছি তা হলো ১৫ আগস্ট জাতীয় শোক দিবসকে সামনে রেখে নাশকতার লক্ষ্যে একদল সন্ত্রাসী শিবতলার ওই ছাত্র মেসে জড়ো হয়ে গোপন বৈঠক করছিল। তারা শোক দিবসের ওই দিনকে ‘ইসলামী শিক্ষা দিবস’ ঘোষনা করে কর্মসূচি প্রনয়ণ করেছে। তাদেরকে ধরিয়ে দিতেই সদর থানার ওসিকে জানিয়ে ছাত্রলীগের ১০/১২ জন সদস্য সেখানে যায়। এরপরই তাদের ওপর হামলা হয়। এতে গুলিবিদ্ধ হয় আজমীর। আহত হয় জেলা সম্পাদক সৈয়দ সাদিকুর রহমান। রেজা বলেন, রাতের ঘটনায় ছাত্রলীগের যে সব নেতাকর্মী সাদিকুর ও আজমীরের সাথে ছিলেন তারা হলেন নাহিদ, জাহিদ, জাকির, নোমান,দ্বীপ, সাইফুল, নয়ন, জামাল ও রাজীব। তারাও কম বেশি আহত হন।
গ্রামবাসী যা বলেন,
শিবতলার দ্বিতল মেস বাড়িটির মালিক ইসলামী ব্যাংক অফিসার মো. খলিলুর রহমান। কিছুদিন আগে তিনি সেটি কিনেছিলেন হায়াত আলি নামের এক ব্যক্তির কাছ থেকে। খলিলুর রহমান বলেন আমার বাড়ির উপরতলায় দুটি কক্ষে শিমুল ও মেহেদির নেতৃত্বে ৪/৫ জন করে মোট ১০ জন ছাত্র থাকে। তারা কোনো রাজনীতি কিংবা তারা কোনো সন্ত্রাসের সাথে জড়িত কিনা তা তিনি জানেন না। তবে তারা বিভিন্ন কলেজে লেখাপড়া করে থাকে। পাঁচ মাস আগে তারা বাড়ির উপরতলার মেসে ওঠেন। বাড়ির নিচতলায় একটি ফ্যামিলি থাকে। এলাকাবাসীও বলেন ছেলেগুলির গতিবিধি চালচলন আচরন মোটেও খারাপ নয়। গ্রামবাসী বলেন তারা দেখেছেন ছাত্রলীগের ছেলেরা লাঠিসোটা নিয়ে দ্রুত বেগে সামনের দিকে যাচ্ছে। এতে আমরা আতংকিত হয়ে পড়ি। পরে শুনতে পাই চিৎকার চেচামেচি।
জমি দখল চেষ্টার যে ঘটনা সামনে আসেনি।
সাতক্ষীরা পৌর আওয়ামী লীগের ২ নম্বর ওয়ার্ড সভাপতি ছিলেন মো. আইউব আলি। ২০১৬ সালের ১৫ মার্চ তিনি কিডনী জটিলতায় মারা যান। তার নিঃসন্তান স্ত্রী হোসনে আরা খাতুন বলেন তার চারজন দেবর। স্বামীর মৃত্যুর দিনেই তার দেবর আমিনুর কিছু কাগজপত্রে তার স্বাক্ষর নিয়ে বলেননা হলে সরকারি চাল আটা উত্তোলনের ক্ষমতা অন্যরা নিয়ে নেবে। তিনি বলেন কিছুদিন পর জানতে পারি আমার স্বামীর সেই লাইসেন্স দেবর আমিনুর নিজ নামে করে নিয়েছেন। স্বামীর সাড়ে তিন বিঘা জমির আম কাঁঠাল ও অন্য ফল দেবর ইচ্ছা মতো নিয়ে নেয়। ইচ্ছা মতো গাছও কেটে নেয়। এ নিয়ে আমার সন্দেহ জাগে আস্তে আস্তে আমার স্বামীর সম্পদ দেবর দখল করে নিচ্ছেন কিনা । তিনি বলেন কিছুদিন আগে তার অনুপস্থিতিতে তার রান্না ঘরের খোলার চাল ভেঙ্গে চুরে দেয় দেবর আমিনুর। বসতঘরে তালা ঝুলিয়ে দিতে গিয়েছিলেন। কিন্তু অনেকের আপত্তির মুখে তা তিনি পারেন নি। এমনকি আমার বিরুদ্ধে অপপ্রচারও চালান তিনি। আমার স্বামীর নামের রাইস মিলটি সচল করতে দেননি দেবর। এসব ঘটনায় সম্পদ হারানোর আশংকা করছিলেন হোসনে আরা। তিনি বলেন আমার স্বামীর চিকিৎসা ব্যয়ের জন্য ১০ লাখ টাকা দেনা হয়েছিলাম আমি। দেবর আমিনুর তার ভাই হিসাবে দেনার টাকা আস্তে আস্তে পরিশোধ করে দেবেন বলেও জানিয়েছিলেন।
গ্রামের মানুষের কাছ থেকে জানতে পেরে হোসনেআরা বলেন শনিবার রাতে একদল ছাত্রলীগ নেতা আমার স্বামীর বাড়ি জমি দখল করতে এসেছিল। দেবর আমিনুর তাদের ব্যবহার করে তা দখলে আনতে চুক্তি করেছিল তাদের সাথে। তিনি বলেন রাতে ছাত্রলীগের সদস্যরা আমার বাড়ি চিনতে না পেরে নিকটস্থ ব্যাংকার খলিলের বাড়ির মেসে উঠে পড়ে। সেখানেই গুলি কিংবা ইটছোড়ার ঘটনা ঘটে। তিনি বলেন শুনেছি আমিনুর নিজে আমার স্বামীর জমি বাড়ি দখল করতে সাহস পাচ্ছিলেন না। কারণ আমার ভাই আবদুল মান্নান যুবলীগের জেলা আহবায়ক। তাই ছাত্রলীগের ছেলেদের কৌশলে ব্যবহার করে আমার দেবর আমিনুর স্বামীর বাড়ি জমি দখল করতে এসেছিল। রোববার সকালে গোয়েন্দা পুলিশের এক কর্মকর্তাও আমাকে এই খবরটি দিয়ে গেছেন। আমি এর পর থেকে আতংকিত হয়ে পড়েছি বলে জানালেন হোসনে আরা।
তবে আমিনুরের সাথে যোগাযোগ করা যায়নি। তিনি শনিবার রাত থেকেই বাড়ি থেকে উধাও বলে জানান পাড়ার লোকজন।
সাতক্ষীরায় ছাত্রলীগ নেতা আজমীর গুলিবিদ্ধ : বিভিন্ন জনের বর্ণনা
পূর্ববর্তী পোস্ট