রোকনুজ্জামান : সাতক্ষীরা সদরের ব্রহ্মরাজপুরে এক মেম্বর পুত্রের যৌতুক নিয়ে বাল্য বিয়ের তথ্য ফাঁস হয়ে পড়েছে। এ নিয়ে রীতিমত এলাকায় হৈ চৈ পড়ে গেছে। আইন সবার জন্য সমান নাকি ব্যক্তি বিশেষের জন্য প্রযোজ্য এমনি নানান প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে এই বাল্য বিয়েকে ঘিরে। শুধু তাই নয় সরকারী নিয়ম-নীতির বিরুদ্ধে বৃদ্ধাঙ্গলী দেখিয়ে মেম্বর পুত্রকে বাল্য বিয়ে দেওয়ায় এ ক্ষমতার উৎস কোথায় সেটিও জানতে চায় সচেতন মহল।
এলাকাবাসীর তথ্যে প্রকাশ, সাতক্ষীরা সদর উপজেলার ৯নং ব্রহ্মরাজপুর ইউনিয়নের ৮নং ওয়ার্ডের মেম্বর ও নুনগোলা গ্রামের কুরবান আলী (নুনু খোয়া) এর ছোট পুত্র ইয়াসিন আরাফাত (ভল্টু) এর সাথে পার্শ্ববর্তী রামচন্দ্রপুর গ্রামের মোঃ আব্দুল আলিমের কন্যা এন,বি,বি,কে আল-মদিনা দাখিল মাদ্রাসার দশম শ্রেনীর ছাত্রী সাবেকুন নাহার (ছায়া) এর সাথে ঈদুল আযহার কয়দিন আগে সম্পূর্ন গোপনে নোটারী পাবলিকে এফিডেভিটের মাধ্যমে বিয়ে সম্পন্ন হয়। ঈদের পরের দিন মঙ্গলবার (১৩ আগষ্ট) কুরবান মেম্বরের বাড়ীতে ঈদের সুযোগে ঘরোয়া পরিবেশে বৌ-ভাত অনুষ্ঠান সম্পন্ন হয়। এর পরেই এলাকার লোকজনের মাঝে বাল্য বিয়ের তথ্য প্রকাশ পায় ও জানাজানি হয়।
এ প্রতিবেদক গত শুক্রবার (১৬ আগষ্ট) একটি মেয়েকে দিয়ে ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করতে ছায়ার বান্ধবী সাজিয়ে শারমিন (ছদ্মনাম) ব্যবহার করে ভুলবশত প্রথমেই রামচন্দ্রপুর গ্রামের জনৈক আলিমের সাথে মোবাইলে কথা হয়। এ সময় আলিম মোবাইলে জানায়, ছায়ার আব্বার মোবাইল নাম্বার এটা নয়। ছায়ার আব্বার নামও আলিম। সে মোবাইলে ছায়ার বিয়ের সব ঘটনা স্বীকার করেন।
পরবর্তীতে শারমিনের (ছদ্মনাম) সাথে মোবাইলে মাদ্রাসার বান্ধবী পরিচয়ে সাবেকুন নাহার (ছায়া), তার পিতা আব্দুল আলিম ও ছায়ার স্বামী ইয়াসিন আরাফাত (ভল্টু) এর কথা হয়। তারা সকলেই বিয়ের কথা স্বীকার করে। স্বামী ইয়াসিন আরাফাত (ভল্টু) এর সাথে শারমিন (ছদ্মনাম) যখন মোবাইলে কথা বলছিল তখন ছায়া তার পাশে ছিল। এ সময় ছায়ার সাথেও তার কথা হয়। তবে সে শারমিন (ছদ্মনাম) কে চেনেন না বলে জানায়। তবে শারমিন (ছদ্মনাম) যখন ইয়াসিন আরাফাত (ভল্টু) এর সাথে কথা বলছিল তখন যৌতুক হিসেবে মোটরসাইকেল নিয়েছেন এমন তথা বলতেই কিছুটা চুপ থেকে ভল্টু কথা অন্যদিকে ঘুরিয়ে নিয়ে যান। এ সংক্রান্ত কয়েকটি ভয়েস রেকর্ডিং এ প্রতিবেদকের হাতে রয়েছে।
ছায়ার পিতা আব্দুল আলিম জানান, ছেলের পিতার মতামতে এই বিয়ে হয়েছে। তবে জামাইকে মোটরসাইকেল হিসেবে যৌতুক দেওয়ার কথা তিনি অস্বীকার করেন।
মেম্বর কুরবানী আলী (নুনু খোয়া) ছেলের বিয়ের কথা স্বীকার করে জানান, আমার জানা মতে বউমা ছায়ার বয়স কিছুটা কম থাকতে পারে। এজন্য তো পারিবারিকভাবে গোপনে বিয়ে সম্পন্ন হয়েছে। ছেলের বিয়েতে তিনি যৌতুক নেওয়ার কথা অস্বীকার করেন। তবে এলাকার লোক তার পক্ষে আছে বলে উল্টা-পাল্টা মন্তব্য করেন। একজন জনপ্রতিনিধি হিসাবে আইনের লোক হয়ে এমন কাজ করতে পারেন কিনা এমন প্রশ্ন করলে তিনি কৌশলে এড়িয়ে যান।
এন,বি,বি,কে আল-মদিনা দাখিল মাদ্রাসার সুপার এ,বি,এম হাফিজুর রহমান জানান, সাবেকুন নাহার ছায়া ২০১৮ সালে নবম শ্রেণী পাশ করেছে। সে বর্তমানে দশম শ্রেণীর ছাত্রী। অভিভাবকরা গোপনে এ ধরনের বাল্য বিয়ে দিলে আমাদের কি বা করার আছে বলে তিনি জানান।
এদিকে এ বাল্য বিয়ের খবর প্রকাশ হওয়ায় এলাকায় নানান গুঞ্জন শুরু হয়েছে। অনেকেই বলছেন রক্ষক যখন ভক্ষকের ভূমিকায়, তখন আইন প্রয়োগ করবে কে? আবার অনেকেই এ ধরনের বাল্য বিয়ের উপযুক্ত শাস্তি হলে ভবিষ্যতে আর কেউ বাল্য বিয়ে দিতে সাহস পাবে না বলেও মতামত প্রকাশ করেছেন।