ইয়ারব হোসেন: প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষায় (পিইসি) সাতক্ষীরা জেলার ফলাফলের দিক থেকে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মধ্যে প্রথম স্থান অধিকার করেছে সাতক্ষীরা সিলভার জুবিলি মডেল প্রাথমিক বিদ্যালয়। বিদ্যালয়ের পাশের হার শতভাগের পাশাপাশি জিপিএ-৫ পেয়েছে ৪৬জন। সাতক্ষীরা জেলায় পাশের হার ৯৫ দশমিক ৫৪ শতাংশ।
সাতক্ষীরা জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস সূত্রে জানা যায়, জেলার এক হাজার ৯৫টি বিদ্যালয়ে প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষায় অংশ নেয় ২৭ হাজার ৫৮৭জন ছাত্র-ছাত্রী। এর মধ্যে উত্তীর্ণ হয়েছে ২৬ হাজার ৩৪৭জন ছাত্র-ছাত্রী। জিপিএ-৫ পেয়েছে তিন হাজার ৯১জন। পাশের হার ৯৫ দশমিক ৫৪ শতাংশ।
সাতক্ষীরা সিলভার জুবিলি মডেল প্রাথমিক বিদ্যালয় সহকারী শিক্ষক বসনা মজুমদার জানান, ২০১৯ সালে অনুষ্ঠিত পিইসি পরীক্ষায় তাদের বিদ্যালয় থেকে ৬৪জন অংশ নিয়ে শতভাগ উত্তীর্ণ হয়েছে। এরমধ্যে জিপিএ-৫ পেয়েছে ৪৬জন ও এ পেয়েছে ১৮জন। জিপিএ-৫ আর কোনো সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে ৪৬জন ছাত্র-ছাত্রী পায়নি। বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক চায়না ব্যানার্জী ২০১১ সালে যোগদান করার পর থেকে ধারাবাহিকভাবে তাদের বিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রীরা ভালো ফলাফল করে আসছে।
সাতক্ষীরা সিলভার জুবিলি মডেল প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক চায়না ব্যানার্জী জানান, ১৯৩৫ সালে প্রতিষ্ঠিত বিদ্যালয়ের ছাত্র ছিলেন, সাতক্ষীরা সদরের সাংসদ মুক্তিযোদ্ধ মীর মোস্তাক আহমেদ, সরকারি মহিলা কলেজের অধ্যক্ষ বাসুদেব বসু, প্রাক্তন প্রতিমন্ত্রী ডা. আবতাবুজ্জামান, সাবেক মেয়র আব্দুল জলিল, অতিরিক্ত সচিব গোলাম ফারুখ, অভিনেতা তারেক আনম, গজনাফর কবির, আলমগীর কবির, গফুর রহমান,সাংবাদিক সুনীল ব্যানার্জী, অরুণ ব্যানার্জী, প্রকৌশলী তরুণ ব্যানার্জী, নিমাই কর্মকার, ডা. আসিকুর রহিম, সাতক্ষীরার বিশিষ্ট ব্যবসায়ী খায়রুল মোজাফফর, ডা, আবুল কালাম, সাতক্ষীরা সরকারি কলেজের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ লিয়াকত পারভেজ, অবসর প্রাপ্ত যুগ্ম সচিব মুনসুর হোসেন, সোনালী ব্যাংকের অবসরপ্রাপ্ত উপ মহাব্যাবস্থাপক নাসিমুল হাসান,সাতক্ষীরা জেলা ক্রীড়া সংস্থার সাবেক সাধারণ সম্পাদক শেখ নিজামউদ্দিন, সাবেব মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার ইনামুল হক, মীর মাহমুদ আলীসহ অসংখ্য চিকিৎসক, প্রকৌশলী, শিক্ষক, আইনজীবী, ব্যাংকার, ব্যবসায়ী, মুক্তিযোদ্ধা ও সরকারি কর্মকর্তা এ বিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রী ছিলেন। আলোকিত এ বিদ্যালয়ে গৌরবময় অধ্যায়ের একপর্যায়ে ভাটা পড়ে।
এ বিদ্যালয়ের ছাত্রী ও প্রধান শিক্ষক চায়না ব্যানার্জী আরও জানান, ২০১১ সালে তিনি যখন এ বিদ্যালয়ে যোগদান করেন তখন বিদ্যালয়ে ছাত্র-ছাত্রী সংখ্যা ছিল ২০০জন। বর্তমানে ছাত্র-ছাত্রী সংখ্য ৪৫০জন। শহরের ঘিরে রয়েছে অসংখ্য কিন্টারগার্ডেন। সাধারণত: গরীর ও অশিক্ষিত পরিবারের ছেলে-মেয়েরা ছাড়া শহরের সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলো ভর্তি হতে চায় না। সেই ধ্যান ধারণা ভেঙ্গে এখন অনেক বিত্তবান ও শিক্ষিত পরিবারের ছেলে-মেয়েরা তাদের বিদ্যালয়ে ভর্তি হচ্ছে। ২০১৮ সালে পঞ্চম শ্রেণিতে ৫২জন পরীক্ষা দিয়ে শতভাগ পাশের পাশাপাশি জিপিএ-৫ পায় ৩৫ ও এ পায় ১৭জন, ২০১৭ সালে ৪৭জন পরীক্ষা দিয়ে শতভাগ পাশের পাশাপাশি জিপিএ-৫ পায় ২১জন ও এ পায় ২৬জন। এছাড়া, সাতক্ষীরা সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়,সাতক্ষীরা সরকারি বালিকা বিদ্যালয় ও পুলিশ লাইনস বিদ্যালয়ে তাদের বিদ্যালয়ে ছাত্র-ছাত্রীরা ষষ্ঠ শ্রেণির ভর্তি পরীক্ষায় সবচেয়ে ভালো করে আসছে দীর্ঘদিন ধরে।
তিনি বলেন, তার সঙ্গে বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের সমন্বয়ের পাশাপাশি আন্তরিক পরিবেশে পাঠদান করা হয়। পিছিয়ে পড়া ছাত্র-ছাত্রীদের বিশেষ মনিটরিংয়ের ব্যবস্থা ছাড়াও মাল্টিমিডিয়ার মাধ্যমে ক্লাস নেওয়া হয়। সবমিলিয়ে ধারাবাহিক এ ফলাফল।
সাতক্ষীরা জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা রুহুল হক বলেন, সাতক্ষীরা সিলভার জুবিলি মডেল প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক চায়না ব্যানার্জীর প্রচেষ্টায় এ বিদ্যালয়টি বর্তমানে জেলার মধ্যে এক নম্বর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পরিণত হয়েছে। চলতি বছর পিইসি পরীক্ষায় ফলাফলে এ বিদ্যালয় জেলার মধ্যে শীর্ষে। প্রধান শিক্ষকের দক্ষ মনিটরিংয়ের পাশাপাশি অন্যান্য শিক্ষকদের প্রচেষ্টা ও আন্তরিকতায় তারা ধারাবাহিকভাবে ভালো ফল করে যাচ্ছে।
সাফল্যের শীর্ষে সাতক্ষীরা সিলভার জুবিলি মডেল প্রাথমিক বিদ্যালয়
পূর্ববর্তী পোস্ট