আতিয়ার রহমান, মণিরামপুর (যশার) থেকে:
শামসুন্নাহার বিধবা হয়েছেন ৪১ বছর আগে। স্বামী মোস্তাজুল হক পাটোয়ারী অসুস্থ হয়ে মারা যাওয়ার পর যশোরের মণিরামপুর উপজেলার মাহমুদকাটি গ্রামে পিতার বাড়িতে আশ্রয় নেন তিনি। পরে পাশের রঘুনাথপুর মৌজায় পৈত্রিকসূত্রে পাওয়া একখÐ জমিতে স্থায়ী ঠিকানা হয় এই নারীর। শামসুন্নাহারের দুই ছেলে তরিহ হোসেন ও সালেআহম্মদ দিনমজুর। ছেলেদের আশ্রয়ে রয়েছেন তিনি। এখন বয়সের ভারে নুইয়ে পড়েছেন।
৪১ বছর ধরে স্বামী হারা হলেও এই নারীর ভাগ্যে জোটেনি বিধবা ভাতা। ইতিমধ্যে তার বয়স হয়েছে ৬৩। এখন তিনি বয়স্কভাতা পাওয়ারও যোগ্য হয়েছেন। গত ১৫ বছর ধরে ইউপি মেম্বরসহ সমাজপতিদের দুয়ারে ঘুরে ভাতার কার্ড যোগাড় করতে পারেননি তিনি। অবশেষে উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা রোকনুজ্জামানের বদান্যতায় বয়স্কভাতার তালিকাভুক্ত হয়েছেন শামসুন্নাহার। হাতে পেয়েছেন ভাতার বই।
সরেজমিন শামসুন্নাহারের খবর নিয়ে বক্তব্য জানতে চাইলে নিউজ না করতে অনুরোধ করে কার্ডের দায়িত্ব নেন রোকনুজ্জামান। পরে কয়েকমাসের মধ্যে তিনি শামসুন্নাহারের বই প্রস্তুত করেন। বই হাতে পাওয়ার আগেই বিধবার একাউন্টে জমা পড়েছে তিন হাজার টাকা।
এদিকে ভাতার কার্ড পেয়ে খুশি শামসুন্নাহার। তিনি বলেন, স্বামীকে হারিয়ে দুই ছেলেরে নিয়ে অনেক কষ্ট করিছি। মেম্বর মুনসুর আলীসহ কতজনের দরজায় গেছি। সবাই আইডি কার্ড নেছে। কেউ একখান কার্ড দিইনি। এখন যারা আমারে কার্ড করে দেছে কাদের জন্যি মনখুলে দোয়া করতিছি।
শামসুন্নাহারের ছোট ছেলে সালেআহম্মদ বলেন, মায়ের কার্ডের জন্য যতজনকে বলিছি সবাই টাকা চেয়েছে। কয়মাস আগেও একজন কার্ড করে দেবে বলে একহাজার টাকা চাইছে। আমি দিইনি। এখন সমাজসেবা অফিসার কার্ড করে দিয়েছেন। বিনা টাকায় ভাতার কার্ড পেয়ে আমরা খুব খুশি।
মণিরামপুর উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা মো. রোকনুজ্জামান বলেন, আরো আগে ভাতা পাওয়ার কথা ছিল শামসুন্নাহারের। গণমাধ্যম কর্মীর মাধ্যমে বিষয়টি জানারপর দ্রæত ব্যবস্থা নিই। বৃহস্পতিবার বিকেলে অফিসে ডেকে শামসুন্নাহারের হাতে বয়স্কভাতার বই দিয়েছি। ইতিমধ্যে তার একাউন্টে সাড়ে চার হাজার টাকা জমা হয়েছে। আগামী সপ্তাহে ইউনিয়ন ডিজিটাল সেন্টার থেকে তিনি টাকা তুলতে পারবেন।