আব্দুল্লাহ্ আল মাহফুজ : বাড়ি কালিগঞ্জ উপজেলার রতনপুর গ্রামে। ওই গ্রামের মৃত. শামসুর রহমানের ছেলে। এলাকা থেকে বিতাড়িত হয়ে চলে আসেন সাতক্ষীরা শহরে। হয়ে উঠেন নামধারী সাংবাদিক এসকে কামরুল হাসান। শুরু করেন টাকা কামানোর ধান্দা। ধান্দা করেই শহরে পরিচিত পেয়ে যায় টাউট কামরুল হিসেবে। তার নিত্যনতুন প্রতারণার কাছে বোকা বনে গেছেন অনেকেই। অনেকের কাছ থেকেই হাতিয়ে নিয়েছেন মোটা অংকের টাকাও।
নারীদের প্রতি আসক্ত এসকে কামরুল হাসান অরফে টাউট ও চটা কামরুল বর্তমানে শহরের পাসপোর্ট অফিস সংলগ্ন একটি ফ্লাট বাসা ভাড়া নিয়ে গড়ে তোলে একটি ভুইফোঁড় অনলাইন পোর্টাল। সেই অনলাইন পোর্টালে নিয়োগ করা হয় বেশ কয়েকজন তরুণীকে। বিভিন্ন প্রলোভন দেখিয়ে ওইসব তরুণীদের বশে আনা হয়। যাদেরকে ব্যবহার করা হতো বিভিন্ন টেলিভিশন চ্যানেলের স্টাফ রিপোর্টার পরিচয় দিয়ে মানুষদের স্বাক্ষাতকার নেওয়ার কাজে। সুযোগ বুঝে ওইসব স্বাক্ষাতকার নেওয়া ব্যক্তিদের কাছ থেকে টাকা হাতায় কামরুল। আবার নিজের সঙ্গে রাখা ওই তরুণীদেরও ধর্ষণের অভিযোগ চটা কামরুলের বিরুদ্ধে। তবে ধর্ষণ চেষ্টার একটি সুনিদৃষ্ট অভিযোগ এসেছে সাতনদীর হাতে। ভুক্তভোগী ওই তরুণী ঘটনার সেই বর্ননা দিতে গিয়ে কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন। এতদিন ভয়ে মুখ খুলতে সাহস না পেলেও সাতনদী পত্রিকায় টাউট কামরুল হাসানের প্রতারণা, চাঁদাবাজি, ছিনতাইসহ নানা অপকর্মের ধারাবাহিক প্রতিবেদন প্রকাশ হওয়ার পর সাতনদী কার্যালয়ে নিজেই হাজির হন ওই তরুণী। বর্ণনা দেন সেদিনের রাতের সেই ঘটনার। ওই তরুণীকে ভূইফোঁড় অনলাইন পোর্টাল দৈনিক সাতক্ষীরাবার্তা.কমের ক্রাইম রিপোর্টার হিসেবে একটি পরিচয় পত্র হাতে ধরিয়ে দেয়। সেই তরুণীকেই ধর্ষণের চেষ্টা চালায় কামরুল।
সাতক্ষীরা সদর উপজেলার বাসিন্দা ওই তরুণী জানান, ৩-৪ মাস আগে জনপ্রতিনিধিদের স্বাক্ষাতকার বিভিন্ন টিভি ও বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রচার করবে জানিয়ে এসকে কামরুল হাসান একটি টিম নিয়ে যায় শ্যামনগর উপজেলায়। ওই টিমের সঙ্গে ছিলাম আমিও। আমার বাড়িতে বাবা-মাকে বলে রাজি করে নেয়। আমার পরিবার ও আমি তাকে বড় ভাইয়ের মত সম্মান ও শ্রদ্ধা করতাম। সেই সুবাদে বিশ্বাস নিয়ে তার সঙ্গে যেতে দিতে রাজি হয় মা-বাবা। সঙ্গে ছিল আর প্রতারক কামরুলের অফিসের সাঈদ ও ক্যামেরাম্যান বিপ্লব। সারাদিন বিভিন্ন জনপ্রতিনিধিদের স্বাক্ষাতকার নেওয়ার পর সন্ধ্যায় শ্যামনগর খাদ্যগুদামের পাশে সরকারি জায়গায় বসবাস করা খালা পরিচয় দিয়ে আমাকে সেই বাড়িতে নিয়ে যায়। সাঈদ ও বিপ্লবকে শ্যামনগর সদরের হোটেলে থাকার ব্যবস্থা করে দেয়। আমি রাতে কোথায় থাকবো এমন প্রশ্নে ওই খালা আমাকে জানায়, কেন কামরুলের সঙ্গে থাকবা। তখন আমি ভয়ে কাপছিলাম। ওই খালার পা জড়িয়ে ধরি। বলি, আমি আপনার মেয়ের মত আমাকে আপনি বাঁচান। জানতে চাই, আপনার আপন ভাগ্নে কিনা। তখন খালা জানায়, আপন নয় সাতক্ষীরায় বাসা ভাড়া থাকতাম সেই হিসেবে পরিচয়। তখন আমি খালাকে আমাকে বাঁচানোর জন্য বলি। আমি তখন সেখানে একা ছিলাম, আমাকে রক্ষার কেউ ছিল না। পরবর্তীতে রাত ১০টার দিকে কামরুল এসে আমাকে ঘরে নিয়ে যাওয়ার জোর চেষ্টা করে। বলে, তার সঙ্গে আমার রাত কাঁটাতে হবে। খালাকে কামরুল বলে, কেউ জিজ্ঞেস করলে বলবেন, আমার বউ।
ওই তরুণী আরও জানায়, খালা আমাকে রাক্ষস কামরুলের হাত থেকে রক্ষা করে। তার সঙ্গে রাত কাঁটানোতে রাজি না হওয়ায় আমাকে গালিগালাজসহ হুমকি ধামকি দিতে থাকে। তবে আমি কোনভাবেই রাজি হয়নি। পরে আমি ওই খালার সঙ্গে রাত কাঁটিয়ে ভোরে একাকী সাতক্ষীরা ফিরে আসি। এ ঘটনা আমি পরিবারকে জানানোর কারণে আমাকে বিভিন্নভাবে হুমকি দিতে থাকে ভয়ভীতি দেখায়। আমি তাকে বড় ভাইয়ের মত দেখতাম। আমার পরিবারও তাকে সে নজরেই দেখতো। তবে তার ভিতরকার আসল রুপ জানতে পারি শ্যামনগরে যাওয়ার পর।
কাঁদতে কাঁদতে মেয়েটি আরও জানায়, কামরুলের এমন প্রতারণার স্বীকার আরও অনেক মেয়ে। সব সময় মেয়েদের তার অফিসে নিয়ে যাওয়ার কথা বলে। আমি জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপারসহ প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষন করে এই প্রতারক কামরুলের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানায়। আর যেন কোন মেয়ে তার প্রতারণার স্বীকার না হয়।
দৈনিকসাতক্ষীরাবার্তা.কম নামক ভূইফোঁড় অফিস ও কামরুলের সঙ্গ ত্যাগ করেছেন সেখানকার অপর আরেকজন তরুণীও। সাতনদী কার্যালয়ে এসে পৃথক আরেক তরুণী জানায়, অপরাধী যেই হোক আমি তার শাস্তি চাই। কামরুলের ভিতরকার রুপ আমরা আগে জানতাম না। পরে জানতে পেরে অবাক হয়ে গেছি। তবে আমাকে কখনো কুপ্রস্তাব দেওয়ার সাহস পায়নি। আমার বোনের সঙ্গে শ্যামনগরে ঘটে যাওয়া ঘটনার বিচার দাবি করছি আমিও। কামরুলের সঙ্গে কোন অপকর্মের ঘটনার সম্পৃক্ততা আমার নেই।
সাতক্ষীরা সদর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, একটি মেয়ে আমার এখানে এসেছিল। শ্যামনগের নিয়ে তাকে কুপ্রস্তাব ও ধর্ষণের চেষ্টা চালায় মর্মে অভিযোগ নিয়ে আসে। তবে ঘটনাটি শ্যামনগর হওয়ায় মেয়েটিকে শ্যামনগর থানায় যাওয়ার কথা বলা হয়েছে। প্রশাসন তার সহযোগিতা করবে। এছাড়াও কেউ সুনিদৃষ্ট অভিযোগ নিয়ে থানায় আসলে কামরুলের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। (পরবর্তী পর্বে থাকবে ভুইফোঁড় নামসর্বস্ব দৈনিকসাতক্ষীরাবার্তা.কম নামক অনলাইন পোর্টাল করে পদপদবী বেচাকেনার সুনির্দিষ্ট খবর)
প্রতারক কামরুল কিভাবে তরুণীকে পটায় তার একটি ভিডিও দেখতে নিচের লিংকে ক্লিক করুন:-