সাতনদী অনলাইন ডেস্ক: করোনার প্রাদুর্ভাব বেড়ে যাওয়ায় চারটি সংসদীয় আসনের উপনির্বাচন ও দেশের প্রায় সাড়ে চার হাজার ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) ও অন্যান্য স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানের ভোট ঝুলে গেছে। এই নির্বাচনগুলো কবে অনুষ্ঠিত হবে, সে বিষয়ে কিছু বলতে পারছে না নির্বাচন কমিশন (ইসি)। সংসদীয় আসনগুলোতে সম্ভাব্য প্রার্থীদের মধ্যে তোড়জোড় শুরু হয়ে গেলেও ইসি করোনা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসার অপেক্ষায় রয়েছে।
ইউপি নির্বাচন বিষয়ে গত শুক্রবার নির্বাচন কমিশনার রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘যথাসময়ে এ নির্বাচন না হওয়ায় আগের নির্বাচিতরাই মেয়াদ শেষেও দায়িত্ব পালনের সুযোগ পাবেন। এটা ভালো দৃষ্টান্ত নয়। কিন্তু করোনা মহামারির কারণে আমাদের কিছু করার নেই।’
এ বিষয়ে নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) শাহাদৎ হোসেন চৌধুরী বলেন, ‘আমরা করোনার ব্যাপক সংক্রমণের মধ্যেই প্রতিবেশী দেশ ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের বিধানসভার নির্বাচনের কথা জেনেছি। কিন্তু নির্বাচন জীবনের চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ নয়। সরকারও এক ধরনের লকডাউন দিয়ে রেখেছে। এ অবস্থায় রোজার মধ্যে নির্বাচন নিয়ে কমিশন কোনো চিন্তা-ভাবনা করছে না। রোজার পর পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করে এসব বিষয়ে আলোচনা করা যেতে পারে।’
এদিকে ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচন বিলম্বিত হওয়ার কারণে সম্প্রতি স্থানীয় সরকার বিভাগ দেশের জেলা প্রশাসকদের জানিয়ে দিয়েছে, মেয়াদ শেষ হয়ে গেলেও ভোট না হওয়া পর্যন্ত ইউনিয়ন পরিষদের আগের চেয়ারম্যান ও মেম্বাররাই দায়িত্ব পালন করবেন।
উল্লেখ্য, মার্চের মাঝামাঝি থেকে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ উদ্বেগজনক হারে বেড়ে যাওয়ায় গত ১ এপ্রিল নির্বাচন কমিশন এক ঘোষণায় ১১ এপ্রিল যেসব নির্বাচন হওয়ার কথা ছিল সেগুলো স্থগিত করে। ১১ এপ্রিল প্রথম ধাপে ৩৭১ ইউনিয়ন পরিষদ ও ১১টি পৌরসভায় সাধারণ নির্বাচন, লক্ষ্মীপুর-২ আসনে উপনির্বাচন এবং কয়েকটি উপজেলা ও জেলা পরিষদের বিভিন্ন পদে উপনির্বাচন হওয়ার কথা ছিল। এ ছাড়া পরের ধাপের ইউপি নির্বাচনগুলোর তফসিলই ঘোষণা হয়নি।
গত ১ এপ্রিল নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে বলা হয়, পরিস্থিতি ‘স্বাভাবিক’ না হওয়া পর্যন্ত এসব নির্বাচন হবে না। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে নির্বাচন যে অবস্থায় বন্ধ হয়েছিল, সেখান থেকে এ প্রক্রিয়া আবার শুরু করা হবে। এসব নির্বাচনী এলাকায় প্রচারে ছিলেন প্রার্থীরা। স্থগিতের পর সব ধরনের প্রচার এখন বন্ধ থাকবে। পরে যখনই ভোটের তারিখ নির্ধারণ করা হবে, এই প্রার্থীরাই তখন নির্বাচনে অংশ নেবেন। ওই দিন নির্বাচন কমিশন থেকে আরো জানানো হয়, জাতীয় সংসদের সিলেট-৩ শূন্য আসনের উপনির্বাচনের বিষয়েও পরে সিদ্ধান্ত হবে।
সিলেট-৩ আসনটি সংসদ সদস্য মাহমুদ উস সামাদ চৌধুরী কয়েসের মৃত্যুতে গত ১১ মার্চ শূন্য হয়। সংবিধানের ১২৩ অনুচ্ছেদের দফা-৪ অনুসারে আগামী ৮ জুনের মধ্যে এ আসনের উপনির্বাচনের অনুষ্ঠানের বাধ্যবাধকতা আছে। কিন্তু করোনা পরিস্থিতির কারণে প্রধান নির্বাচন কমিশন এ সময়ের মধ্যে এ নির্বাচন অনুষ্ঠান সম্ভব নয় মর্মে সিদ্ধান্ত নিয়েছে এবং সংবিধান প্রদত্ত নিজ ক্ষমতাবলে ৮ জুনের পরের ৯০ দিনের মধ্যে এ নির্বাচন হবে বলে জানিয়েছে। নির্বাচন কমিশন থেকে গত ২৯ এপ্রিল এসংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে।
লক্ষ্মীপুর-২ আসনে উপনির্বাচনও স্বাভাবিক পরিস্থিতিতে গত ২৭ এপ্রিলের মধ্যে অনুষ্ঠানের সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতা ছিল। কিন্তু করোনাভাইরাসের কারণে এ নির্বাচনও পরবর্তী ৯০ দিনের মধ্যে অনুষ্ঠানের সিদ্ধান্ত নিয়ে গত ৪ এপ্রিল প্রজ্ঞাপন জারি করে নির্বাচন কমিশন। এ ছাড়া গত ৪ এপ্রিল সংসদ সদস্য আসলামুল হকের মৃত্যুতে ঢাকা-১৪ আসন এবং গত ১৪ এপ্রিল সাবেক আইনমন্ত্রী আবদুল মতিন খসরুর মৃত্যুর কারণে কুমিল্লা-৫ আসনটি শূন্য হয়েছে। করোনা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে না এলে এই দুই শূন্য আসনের নির্বাচনের বিষয়েও ইসি সিদ্ধান্ত নিতে পারছে না।