জাতীয় ডেস্ক:
ঢাকার অধস্তন আদালতের মালখানার ভেতর টাকা-পয়সা, অস্ত্র ও অন্যান্য ছোটখাটো আলামত রাখা আছে। তবে গাড়ি, মোটরসাইকেলসহ বড় বড় আলামত জায়গার অভাবে সংরক্ষণ করা সম্ভব হচ্ছে না। সিজেএম ভবন ও ঢাকা পুলিশ সুপার কার্যালয়ের সামনে যত্রতত্র বছরের পর বছর ধরে ফেলে রাখা হয়েছে বিভিন্ন ধরনের আলামত। মামলার রায় না হওয়া বা মামলা নিষ্পত্তির পর তা ধ্বংস না করায় এ অবস্থার সৃষ্টি হচ্ছে। যা এখন ময়লার ভাগাড়ে পরিণত হয়েছে।
অযত্ন-অবহেলায় ধুলাবালি ও মরিচা পড়ে সব আলামতের চেহারা পাল্টে গেছে, যা শনাক্ত করতে গেলে পুলিশকেও বিপাকে পড়তে হয়। আর এসব আলামত নষ্ট হয়ে যাওয়ায় রাষ্ট্রের কোটি টাকা ক্ষতি হচ্ছে। অন্যদিকে অপরাধীরাও পার পেয়ে যাচ্ছেন।
মালখানার বাইরে নষ্ট হচ্ছে বিভিন্ন সময় জব্দ করা লাখ লাখ টাকার আলামত
সরেজমিন দেখা গেছে, ঢাকা জেলা পুলিশ সুপার কার্যালয়ের সামনে থেকে ঢাকার জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত চত্বরের অধিকাংশ জায়গাজুড়ে স্তূপাকারে পড়ে আছে শত শত মামলার আলামত। এরমধ্যে রয়েছে ভ্যানগাড়ি, মোটরসাইকেল, প্রাইভেটকার, রিকশাসহ বিভিন্ন ধরনের যানবাহন। সিজেএম ভবনের সামনেই একটি হলুদ রঙের প্রাইভেট কার পড়ে আছে। গাড়ির সামনের কাচ ভাঙা, অন্যান্য সব যন্ত্রাংশ নড়বড়ে হয়ে খসে পড়তেছে। মানুষজন বিভিন্ন ধরনের ময়লা আবর্জনা এনে ফেলছেন গাড়ির ভেতরে-বাইরে।
কাগজপত্র না থাকায় হস্তান্তর করা যাচ্ছে না আলামতগুলো
এর পাশেই মাঝখানে আরেকটি পিকআপ ভ্যান দেখা গেছে, এটার অবস্থা আরও নাজুক। যন্ত্রাংশ খসে পড়ে মাটিতে মিশে যাচ্ছে। এরপরে এসপি অফিসের সামনে একটি বড় স্তূপ দেখা গেছে। যেখানে লোহার বিভিন্ন আলামত রয়েছে। এগুলোর মরিচা পড়ে নষ্ট হয়ে গেছে প্রায় অধিকাংশই।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ডাকাতির কাজে ব্যবহার হচ্ছে সন্দেহে কাফরুল থেকে ২০০২ সালের ৫ অক্টোবর একটি প্রাইভেটকার আটক করে থানা পুলিশ। গাড়িটির নম্বর-ঢাকা-মেট্রো-গ-১৪-২৫৮৫। আটকের পর কাফরুল থানা পুলিশ একটি ডাকাতি মামলা করে। মামলার পর নিয়ম অনুসারে আলামত হিসেবে প্রাইভেটকারটি পাঠানো হয় আদালতে। আলামত নম্বর এম আর ৭৮/০৯ (ডব্লিউ)। মালখানায় জায়গা না হওয়ায় ওই আলামত রাখা হয় ঢাকা জেলা পুলিশ সুপার কার্যালয়ের সামনে। ঝড়-বৃষ্টি, ধুলাবালিতে মরিচা পড়ে এটি এখন রূপ নিয়েছে ডাস্টবিনে।
মালখানাটি এখন রূপ নিয়েছে ডাস্টবিনে
এছাড়াও মাদকদ্রব্য বহন করায় তেজগাঁও থানা এলাকা থেকে ২০০২ সালের ১১ নভেম্বর একটি পিকআপ আটক করে তেজগাঁও থানা পুলিশ। আটকের পর মাদকদ্র্রব্য আইনে মামলা হয়। পিকআপটির নম্বর ঢাকা-মেট্রো-ঠ-১১-০৯৬০। নিয়ম অনুযায়ী আলামত হিসেবে পিকআপটি আদালতে পাঠানো হয়। স্থান স্বল্পতায় সেটিও রাখা হয় ঢাকা জেলা পুলিশ সুপার কার্যালয়ের সামনে। পিকআপটির ওপর জন্মেছে আগাছা। অযত্ন-অবহেলায় পরিণত হয়েছে ময়লার স্তূপে।
সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ঢাকার আদালতের মালখানা দুই ভাগে বিভক্ত। একটি জেলা মালখানা, অপরটি মহানগর মালখানা। জেলা মালখানা বর্তমানে চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের আন্ডারগ্রাউন্ডে ও মহানগর মালখানা সিএমএম আদালতের আন্ডারগ্রাউন্ডে। জায়গা স্বল্পতার কারণে পুলিশ সুপার কার্যালয় থেকে শুরু করে ঢাকার জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের সামনে পর্যন্ত আলামত রাখা হয়েছে। অনেক ক্ষেত্রে বছরের পর বছর মামলার কার্যক্রম শেষ না হওয়ায় আদালত আলামত মালিককে বুঝিয়ে দিতে পারছেন না। আবার যানবাহনের মালিকরা তাদের নিজস্ব জিম্মায় আলামত নিতে চাইলেও বিভিন্ন কাগজপত্র, প্রমাণ ও আইনি জটিলতায় তা নিতে পারছেন না।
আদালতের আদেশ ছাড়া আলামতগুলো ধ্বংসও করা যাচ্ছে না
ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) অপরাধ তথ্য ও প্রসিকিউশন বিভাগের ডিসি আনিছুর রহমান বলেন, আদালত থেকে যেসব আলামত ধ্বংসের জন্য আমাদের চিঠি দেওয়া হয় সেগুলো আমরা ধ্বংস করি। আদালতের আদেশ ছাড়া আমরা কোনও আলামত ধ্বংস করতে পারি না। বুঝিয়ে দিতেও পারি না।
এ বিষয়ে ঢাকা মহানগর পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) আব্দুল্লাহ আবু বলেন, এভাবে মামলার আলামত ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকার কারণে আদালতের পরিবেশ নষ্ট হচ্ছে। এসব আলামত ভালো জায়গায় সংরক্ষণ করা উচিত। মামলা প্রমাণের জন্য আলামত গুরুত্বপূর্ণ। তাই রাষ্ট্রের স্বার্থে এসব আলামত সংরক্ষণ করা উচিত।
সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকার আমলের বিশেষ পিপি (পাবলিক প্রসিকিউটর) ফারুক আহম্মদ বলেন, অপরাধ প্রমাণের ক্ষেত্রে মামলার আলামত খুবই গুরুত্বপূর্ণ, তাই আলামত সংরক্ষণের জন্য দ্রুত সরকারকে যথাযথ ব্যবস্থা নিতে হবে। বর্তমানে মামলা শেষ করতে সময় লাগছে। কোনও কোনও মামলা রয়েছে, যা ২৮ থেকে ৩০ বছরেও সমাধান হচ্ছে না। মামলা যত দ্রুত শেষ হবে, তত দ্রুত মালখানার আলামত নষ্ট করতে বা বিক্রি করে দিতে টেন্ডার দিতে পারবে সরকার।