লিটন ঘোষ বাপি : দেবহাটার কুলিয়া লাবণ্যবতী খাল এখন অস্তিত্ব সংকটে। লাবন্যবতী খালটি ইছামতি নদীর ঐতিহাসিক কোমরপুর স্লুইচ গেট নামক স্থান থেকে উৎপত্তি হয়ে কুলিয়া ইউনিয়নের বুক চিরে শশাডাঙ্গার উপর দিয়ে এল্লারচর হয়ে ব্যাংদহার উপর দিয়ে বয়ে চলেছে অবিরাম। সেই প্রাণবন্ত লাবণ্যবতী খালটি এখন নিষ্প্রাণ প্রায়। কোথাও কোথাও মাটি ভরাট হয়ে সমতল ভূমির সঙ্গে মিশে গেছে। আবার কোথাও কোথাও প্রভাবশালীরা দখল করে গড়ে তুলেছে অবৈধ স্থাপনা। জানা যায়, দেবহাটার লাবণ্যবতী খালটি এক সময় এলাকার মানুষের চলাচল এবং ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রসারে যাতায়াত ও যোগাযোগের সেতুবন্ধন হিসেবে খালটি খনন করা হয়। খালের বুক চিরে চলতো পাল তোলা নৌকা। সেই খালটিতে এখন নৌকা চলাতো দূরের কথা, এক ধাপেই পার হওয়া যায়। এছাড়াও খালটি খননের ফলে লাবণ্যবতীর নান্দনিক সৌন্দর্যে ফিরে আসে কিন্তু আজ খাল দখলের প্রতিযোগিতা চলছে। দৃশ্যত: কুলিয়ার বালিয়াডাঙ্গার শেষ দিকটা বসতি সহ প্রায় সকল জায়গায় খালে জেগে ওঠা চরগুলোতে স্থায়ীভাবে বসতি গড়ে তুলে অবকাঠামো ও ইচ্ছামত খালের ভিতরের জায়গায় ভেড়ি বাধ দিয়ে তৈরি করা হচ্ছে ছোট বড় ঘের। পানির অবাধ চলাচলে বড় বাধা সৃষ্টি করলেও এগুলো যেন কেউ দেখতেই পায়না। ‘সাদা সোনা খ্যাত বাগদা চিংড়ী’ সিংহ ভাগই উৎপাদন হয় এই দেবহাটা উপজেলায়। আর এই চিংড়ী উৎপাদন করার জন্য লাবন্যবতী খালের পানির উপর ভর করে শাখরা থেকে ব্যাঙদাহ পর্যন্ত আনুমানিক ৫০ হাজার বিঘা জমিতে মৎস্য চাষ হয়। অথচ দেখা যায়, বিভিন্ন ময়লা-আবর্জনায় আর অবৈধ দখলদারিত্বেও কারনে খালটি প্রায় ঢেকে গেছে। যারফলে একটু বৃষ্টি হলেই এলাকার মৎস্য ঘের সহ ফসলী জমি পানিতে তলিয়ে যায়। এতে করে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে মৎস্য ও ফসলী চাষীরা।
কুলিয়া দত্তডাঙ্গার মৎস্য চাষি কবির বলেন, ‘এক সময় লাবণ্যবতী খাল দিয়ে কুলিয়া ইউনিয়নের ও তার আশেপাশের পানি নিষ্কাশন হতো। কিন্তু এই লাবণ্যবতী খালটি প্রায় ভরাট হয়ে যাওয়ায় এলাকার পানি নিষ্কাশন বাঁধাগ্রস্থ হচ্ছে’। এলাকার ঘের ব্যবসায়ী চন্দ্রকান্ত বলেন, ‘ লাবণ্যবতী খাল পুনঃখনন করা না হলে আসন্ন বর্ষা মৌসুমে আবারও ডুবে মরতে হবে আমাদের।’ তিনি আরও বলেন, ‘লাবণ্যবতী খাল পুনঃখনন করে দেবহাটার ইছামতি নদীর সঙ্গে সংযুক্ত করতে পারলে জলাবদ্ধতার হাত থেকে কিছুটা রক্ষা পাবে এলাকাবাসী।’ জাতীয় হিন্দু মহাজোটের সাতক্ষীরা জেলা সদস্য সচিব প্রভাষক সুজন ঘোষ বলেন, লাবণ্যবতী খাল দখলদারীদের কাছ থেকে দখলমুক্ত করতে হবে। খালের অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করে লাবণ্যবতী খাল পুনঃখনন করে প্রবাহ সৃষ্টি করতে হবে। তবেই বন্যা ও জলাবদ্ধতা থেকে মুক্তি পাওয়া যাবে।
দেবহাটার ১নং কুলিয়া ইউনিয়ন পরিষদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান আলহাজ্ব আসাদুল ইসলাম বলেন, মাননীয় প্রধান মন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা খালে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করে খালকে দখল মুক্ত করার ঘোষনা দিয়েছেন। আমি চাই লাবণ্যবতী খালে যারা অবৈধভাবে খাল দখল করে অবৈধ স্থাপনা গড়ে তুলেছে সেসব স্থাপনা উচ্ছেদ করে লাবণ্যবতী খাল অবৈধ দখলমুক্ত করা হোক। ‘ অতিদ্রুত লাবণ্যবতী খাল পুনঃখনন করতে না পারলে এলাকাবাসী পানিতে ডুবে মরবে। জলাবদ্ধতার শিকার হয়ে হাজার হাজার মানুষের জীবনে নেমে আসবে চরম দুর্দিন। লাবণ্যবতী খালের পুনঃখননের প্রতিবন্ধকতার অন্যতম কারণ অবৈধ দখলদারিত্ব এবং অবৈধ স্থাপনা মুক্ত করনের প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করেন’। এলাকাবাসী লাবণ্যবতী খালকে জীবন্ত দেখতে চায় এবং পুনঃখননে সব ধরনের দখলদারিত্ব অবসান কামনা করেন।
অবৈধ স্থাপনায় অস্তিত্ব সংকটে কুলিয়া লাবণ্যবতী খাল
পূর্ববর্তী পোস্ট