আরিফের নির্দেশে উপজেলা চেয়ারম্যানকে গুলি করতে যান শাকিলসহ তিনজন

কর্তৃক porosh
০ কমেন্ট 25 ভিউস

জাতীয় ডেস্ক:

নরসিংদীর শিবপুরে উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান হারুনুর রশিদ খানকে (৭০) গুলি করে হত্যাচেষ্টায় ব্যবহৃত আগ্নেয়াস্ত্র সরবরাহ করাসহ সব পরিকল্পনা ছিল আরিফ সরকারের। তাঁর নির্দেশেই মো. শাকিলসহ তিনজন বাড়িতে গিয়ে হারুনুর রশিদকে গুলি করেন। এরপর প্রথমে মোটরসাইকেল ও পরে প্রাইভেট কারে করে সটকে পড়েন তাঁরা।

আলোচিত এই ঘটনায় গ্রেপ্তার মো. শাকিল প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে এমন তথ্যই দিয়েছেন বলে জানিয়েছে পুলিশ। গতকাল বৃহস্পতিবার ভোরে শিবপুর থানার পুলিশ পলাতক মো. শাকিলকে গাজীপুরের কালীগঞ্জের এক বস্তি থেকে গ্রেপ্তার করে।

মো. শাকিল (৩৫) উপজেলা চেয়ারম্যান হারুনুর রশিদ খান হত্যাচেষ্টা মামলার এজাহারভুক্ত ৪ নম্বর আসামি। তিনি শিবপুরের পুটিয়া ইউনিয়নের মুনসেফেরচর এলাকার বাসিন্দা। তাঁকে আজ শুক্রবার নরসিংদীর আদালতে পাঠিয়ে রিমান্ডের আবেদন করবে পুলিশ।

এদিকে উপজেলা চেয়ারম্যান হারুনুর রশিদ খানকে গুলি করে হত্যাচেষ্টার ঘটনার এরই মধ্যে ছয় দিন পেরিয়ে গেলেও প্রধান আসামি আরিফ সরকারকে গ্রেপ্তার করতে না পারায় তাঁর পরিবার ও স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতা–কর্মীরা ক্ষুব্ধ। শিবপুরের পুটিয়া ইউনিয়নের কামারগাঁও এলাকার বাসিন্দা আরিফ সরকার দেশে আছেন নাকি পালিয়ে গেছেন, এই প্রশ্নও উঠেছে। ঘটনার পরদিন রাজধানীতে ডিবি পুলিশের হাতে তিনি গ্রেপ্তার হয়েছেন, ছড়িয়ে পড়া এমন খবরের সত্যতাও নিশ্চিত করতে পারছে না পুলিশ। এ ছাড়া এখনো গ্রেপ্তার করা যায়নি হত্যাচেষ্টার মিশনে সরাসরি অংশ নেওয়া মহসিন ও ইরানকে।

পুলিশের একটি সূত্র বলছে, শাকিলকে গ্রেপ্তারের পরই তাঁকে জেলা গোয়েন্দা শাখায় নিয়ে ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। এ সময় তিনি হত্যাচেষ্টায় অংশ নেওয়ার কথা স্বীকার করেন। তাঁর ভাষ্যমতে, আরিফ সরকারের সঙ্গেই নিয়মিত সংসদ সদস্য জহিরুল হক ভূঁইয়ার বিভিন্ন রাজনৈতিক ও দলীয় কর্মসূচিতে অংশ নিতেন তিনি। হারুনুর রশিদ খানকে গুলি করার ঘটনায় আরিফই তাঁকে যেতে বলেছিলেন। ওই মিশনে তাঁর সঙ্গে ছিলেন মহসিন ও ইরান। তবে আরিফ ছাড়াও এই বিষয়ে প্রায় সবকিছুই জানতেন মহসিন। শাকিল শুধু আরিফ সরকারের নির্দেশ পালন করেছেন।

শিবপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ফিরোজ তালুকদার বলেন, আরিফ সরকারের ফুপাতো বোনের স্বামী এই শাকিল। ব্যবসা-বাণিজ্য থেকে শুরু করে বিভিন্ন অপকর্মে তিনি আরিফের সঙ্গে থাকতেন। উপজেলা চেয়ারম্যানকে গুলি করে হত্যাচেষ্টার মিশনেও আরিফের নির্দেশেই গিয়েছিলেন তিনি। তবে চেয়ারম্যানকে হত্যাচেষ্টার কারণ জানেন না বলছেন তিনি। শুধু নির্দেশ পালন করেছেন। বলছেন, আরিফ আর মহসিন কারণ জানেন। এই দুজনকে গ্রেপ্তার করা গেলেই হত্যাচেষ্টার মোটিভ জানা যাবে।

পুলিশ বলছে, মহসিন, ইরান ও শাকিল—এই তিনজন প্রথমে মোটরসাইকেলে করে হারুনুর রশিদ খানের বাড়িতে যান। পাঁচতলা বাড়িটির তৃতীয় তলায় প্রবেশের অল্প সময়ের মধ্যেই মিশন শেষ করে বের হয়ে আসেন তাঁরা। হারুনুর রশিদ খানের বুকে গুলি করার মিশন নিয়েছিলেন তাঁরা, ঘুরে যাওয়ায় গুলি লাগে তাঁর পিঠে। ফেরার সময় মোটরসাইকেলটি পালপাড়া এলাকার এক বাড়ির সামনে রেখে সেখানে অবস্থান করা নূর মোহাম্মদের প্রাইভেট কারে করে পালিয়ে যান। পরে একেকজন একেক দিকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েন।

স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতা–কর্মীরা বলছেন, সংসদ সদস্য জহিরুল হক ভূঁইয়ার ছোট ভাই জুনায়েদুল হক ভূঁইয়া ওরফে জুনুর ডান হাত এই আরিফ সরকার। তাঁর গাড়িতে সব সময়ই আরিফকে দেখা যায়। সংসদ সদস্যের দলীয় ও ব্যক্তিগত নানা কর্মসূচিতে তিনি লোক সরবরাহ করাসহ বিভিন্নভাবে সামনে থেকে নেতৃত্ব দেন। একসময় বিএনপির কর্মী হিসেবে রাজনীতি করা আরিফকে দলে টেনে আনেন এই জুনায়েদুল হক। তাঁর নির্দেশেই আরিফ সরকার সবকিছু করেন। সংসদ সদস্যের সঙ্গে উপজেলা চেয়ারম্যান হারুনুর রশিদ খানের সম্পর্ক ভালো থাকার সময় জেলার সবচেয়ে বড় পুটিয়া গরুর হাটের ইজারা আরেকজনের সঙ্গে যৌথভাবে পেয়েছিলেন আরিফ সরকার। কিন্তু বর্তমানে দুজনের মধ্যে রাজনৈতিক সম্পর্কের দূরত্ব থাকায় এবার আরিফ সরকার ওই হাটের ইজারা পাননি।

এই বিষয়ে জানতে চাইলে জুনায়েদুল হক ভূঁইয়া বলেন, আরিফ সরকারের মতো শিবপুরে হাজার হাজার কর্মী আছেন। এখন কেউ যদি আকাম-কুকাম করেন, এই দায়ভার তো তাঁর নয়। উপজেলা চেয়ারম্যানকে গুলি করার ঘটনায় আরিফ জড়িত কি না, তা–ও তিনি জানেন না। তবে ঘটনার পর থেকে আরিফ পলাতক। যাঁরাই এ ঘটনায় জড়িত, তাঁদের শাস্তি চান জুনায়েদুল।

গত শনিবার সকাল সোয়া ৬টার দিকে শিবপুর পৌর এলাকার বাজার সড়কে নিজের বাড়িতে সন্ত্রাসীদের হাতে গুলিবিদ্ধ হন হারুনুর রশিদ খান। পরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হলে ওই দিন দুপুরেই তাঁর পিঠে (মেরুদণ্ডসংলগ্ন) বিদ্ধ হওয়া দুটি গুলি অপসারণ করা হয়। বর্তমানে তিনি সেখানেই চিকিৎসাধীন। গুলিবিদ্ধ হারুনুর রশিদ খান উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি।

এ ঘটনায় গত সোমবার দুপুরে হারুনুর রশিদ খানের ছেলে নুর রশিদ খান বাদী হয়ে ৬ জনের নাম উল্লেখ করে এবং অজ্ঞাতনামা আরও ১০–১২ জনকে আসামি করে শিবপুর থানায় হত্যাচেষ্টার অভিযোগে মামলা করেন। মামলার আসামিরা হলেন শিবপুরের পুটিয়া ইউনিয়নের কামারগাঁও এলাকার আরিফ সরকার (৪০), পুঠিয়া ইউনিয়নের পূর্ব সৈয়দনগর এলাকার মো. মহসিন মিয়া (৪২), কামারগাঁও এলাকার ইরান মোল্লা (৩০), মুনসেফের চর এলাকার মো. শামিল (৩৫), কামারগাঁও এলাকার মো. হুমায়ূন (৩২) ও নরসিংদী শহরের ভেলানগর এলাকার গাড়িচালক নূর মোহাম্মদ (৪৮)।



রিলেটেড পোস্ট

মতামত দিন

error: Content is protected !!