সচ্চিদানন্দদেসদয়, আশাশুনি থেকে: আশাশুনি উপজেলায় ভাতাভোগিদের মোবাইল একাউন্টে টাকা পাঠানোর নামে বঞ্চনার ঘটনা উপজেলা ব্যাপী সমালোচনা ঝড় তুলেছে। বঞ্চনার শিকার ভাতাভোগিরা টাকা না পেয়ে দ্বারে দ্বারে ঘুরে ফিরলেও কোন সদুত্তর বা প্রতিকার না পেয়ে চরম কষ্টে দিন যাপনে বাধ্য হচ্ছেন।
সরকার ভাতাভোগিদের হয়রানী ও টাকা লেনদেনে নানা প্রতারণা দূর করে প্রকৃত অসহায় ও যোগ্য ব্যক্তিদের হাতে সরাসরি টাকা পৌছানো নিশ্চিত করতে তাদের স্ব-স্ব মোবাইলে টাকা প্রেরণের মহৎ উদ্যোগ গ্রহন করেন। বিভিন্ন বিভাগের ভাতাভোগিদের তালিকা করার পাশাপাশি ভাতাভোগিদের নাম ও মোবাইল নম্বর তালিকাভুক্ত করার জন্য উপজেলা সমাজ সেবা অফিসকে দায়িত্ব দেওয়া হয়। সমাজ সেবা অফিস ইউনিয়ন পরিষদের সহযোগিতায় কাজ সঠিকভাবে সম্পন্নের উদ্যোগ গ্রহন করেন। দায়িত্বপ্রাপ্ত ইউনিয়ন পরিষদে তথ্য সেবা কেন্দ্রের উদ্যোক্তারা ইউনিয়নে ইউনিয়নে কাজ করে ভাতাভোগিদের তালিকা ও মোবাইল নম্বর লিপিবদ্ধ ও কম্পিউরাইজড করে সংরক্ষণ করেন। খসড়া তালিকা তৈরির পর তা ইউনিয়ন পরিষদে লটকানো ও পুনরায় সংশোধিক তালিকা কম্পিউরাইজড শেষে চুড়ান্ত তালিকা করা হয়। এরপর ভাতাভোগিদের স্ব-স্ব নামে একাউন্ট খোলানো হয়। একাউন্ট খোলেন “নগদ” এর কর্মকর্তারা ইউনিয়ন পরিষদে উপস্থিত হয়ে। পরবর্তীতে সেই একাউন্টে টাকা পাঠানো হয় বা হচ্ছে।
উপজেলা সমাজ সেবা অফিস সূত্রে জানাগেছে, আশাশুনি উপজেলায় বয়স্ক ভাতা ভোগি ১৪ হাজার ৯২৩ জন, বিধবা ভাতাভোগি ৭ হাজার ২৮১ জন, অস্বচ্ছল প্রতিবন্ধি ৪ হাজার ৫০৪ জন ও অনগ্রসর জনগোষ্টি ভাতাভোগি ৫৩ জন। এছাড়া প্রতিবন্ধি শিক্ষা উপবৃত্তি দেওয়া হয় ১৪১ জন ও অনগ্রসর জনগোষ্ঠি শিক্ষা উপবৃত্তি দেওয়া হয় ৩৯ জনকে। ভাতার টাকা মার্চ-২০২১ পর্যন্ত ৯ মাসের ১ম কিস্তির টাকা ভাতাভোগিদের মোবাইলে পাঠানো হয়েছে। ২য় ও ৩য় কিস্তির টাকাও অনেককে দেওয়া হয়েছে। এছাড়া এপ্রিল থেকে জুন-২০২১ টাকা পাঠানোর জন্য পেরোল উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠানো হয়েছে। কিন্তু সকল ইউনিয়নের ভাতাভোগিদের একটি বড় অংশের মোবাইলে টাকা পৌছায়নি। টাকা না পেয়ে ভাতাভোগিরা ইউনিয়ন পরিষদ ও সমাজ সেবা অফিসে দৌড়ঝাপ শুরু করলে টাকা বিতরণে হযবরল অবস্থার চিত্র প্রকাশ হতে শুরু করে। খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে কারো কারো মোবাইল নম্বর তারটা না বসিয়ে অন্য কারো নম্বর বসানো হয়েছে। কারো নম্বর ঠিক থাকলেও এখনো টাকা পৌছায়নি। আবার অফিস থেকে যে নাম্বারে টাকা পাঠানো হয়েছে সে নম্বর সরবরাহ করা হলে দেখাগেছে টাকা যাওয়া নম্বরটি দেশের অন্য কোন জেলার মানুষ ব্যবহার করছে। অনেক নম্বর বন্ধ পাওয়া গেছে। কারো টাকা দু’বার পাঠানো হলেও ভিন্ন ভিন্ন অন্য কারো নাম্বারে চলে গেছে।
ভাতাভোগি নৈকাটি গ্রামের মৃত ইব্রাহিম সরদারের স্ত্রী ঝরনা খাতুন (বিধবা ভাতা), আরার গোবিন্দপুর গ্রামের মৃত এমান আলির পুত্র আঃ লতিফ (বয়স্ক), মৃত কেরামত সরদারের স্ত্রী ফাতেমা খাতুন, দরগাহপুর গ্রামের রবিউল ইসলামের পুত্র নাজমুল (প্রতিবন্ধী), আরার গ্রামের মৃত আজিবর মোড়লের স্ত্রী আবিরা (বিধবা), রামনগর গ্রামের মৃত প্রফুল্ল পালের পুত্র বিনয়, খাসবাগান গ্রামের মৃত মুনছোপ মোড়লের পুত্র আঃ গফুর (বয়স্ক), দরগাহপুর গ্রামের মৃত গহর গাজীর পুত্র আব্দুল্লাহ গাজী মধু (প্রতিবন্ধি), একই গ্রামের মৃত মোক্তার এর স্ত্রী মালুতা বেগম (বয়স্ক ভাতা) তাদের মোবাইলে টাকা না পেয়ে দ্বারে দ্বারে ঘুরেও কোন প্রতিকার পাননি। এছাড়া আরও শত শত ভাতাভোগি তাদের খুবই কাঙ্খিত ও অতিব প্রয়োজনীয় ভাতার টাকা না পেয়ে হাপিত্তেশ করছেন। তারা এটা তাদের সম্বল হিসাবে বিবেচনা করে থাকেন। প্রতিবন্ধি নাজমুল জানান, তার মোবাইল নং ০১৭৮৯৫১০৬৪৯, হলেও অফিস জানাচ্ছে তার টাকা ০১৭৮৯৫১০৬৫৯ নম্বরে চলে গেছে। অর্থাৎ নম্বরের শেষ দু’টি সংখ্যা ৪৯ এর পরিবর্তে ৫৯ নম্বরে পাঠানো হয়েছে। এরকম নানা রকম হেরফের হয়ে টাকা ভিন্ন মানুষের হাতে চলে যাওয়ায় এসব অসহায় মানুষের টাকা ফেরৎ পাওয়ার কোন উপায় করা হচ্ছেনা।
এব্যাপারে আশাশুনি উপজেলা সমাজ সেবা অফিসার রফিকুল ইসলাম জানান, ভাতাভোগিদের ডাটাবেজ করা হয়েছে ইউনিয়ন পরিষদে। ১১ ইউনিয়নে ইউনিয়ন ডিজিটাল সেন্টারের উদ্যোক্তারা ডাটাবেজ লিপিবদ্ধ করেন। যতদূর জানাগেছে, উদ্যোক্তারা মোবাইল নম্বরের কোন কোন ডিজিট ভুল করায়, আবার কিছু গ্রামপুলিশ ও ইউপি সদস্যরা ভাতাভোগির নম্বার না দিয়ে তাদের আত্মীয়-স্বজনের নম্বর দেওয়ায় সমস্যা সৃষ্টি হয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। ডাটাবেজ তৈরি, একাউন্ট খোলার কাজের সাথে সমাজ সেবা অফিসের কোনরূপ সংশ্লিষ্টতা বা কোন ভূমিকা ছিলনা। তবে আমরা ৩১ জুলাই পর্যন্ত যে অভিযোগ পাব সেগুলো থানায় জিডি করে অধিদপ্তরকে অবহিত করবো। যাতে এব্যাপারে একটা সুরাহার ব্যবস্থা করা হয়।