নিজস্ব প্রতিবেদক: এবার খোদ সরকার দলীয় একজন প্রার্থী একটি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান পদের উপ-নির্বাচনে উপজেলা নির্বাহী অফিসারের বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগ বিরোধী আচরনের অভিযোগ এনে ফলাফল বাতিলের দাবি জানিয়েছেন। একই সাথে পুনঃনির্বাচনের দাবি করে ২২ দফা অভিযোগ তিনি প্রধানমন্ত্রী, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, জনপ্রশাসন মন্ত্রী ও স্থানীয় সরকার মন্ত্রী সহ প্রধান নির্বাচন কমিশনের কাছে তুলে ধরেছেন। শনিবার দুপুরে সাতক্ষীরা প্রেসক্লাবে আয়োজিত এক সাংবাদিক সম্মেলনে লিখিত এই বক্তব্য রাখেন কালিগঞ্জ উপজেলার কুশুলিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান পদে উপনির্বাচনে প্রার্থী উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারন সম্পাদক বর্তমানে জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য শেখ মোজাহার হোসেন কান্টু। গত ২৫ জুলাই এই উপনির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী শেখ এবাদুল ইসলাম (ঘোড়া প্রতীক) ৬ হাজার ৮৮২ ভোট পেয়ে জয়ী হন এবং তার একমাত্র প্রতিদ্বন্দ্বী আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী শেখ মোজাহার হোসেন কান্টু (নৌকা) লাভ করেন ১ হাজার ১৪৩ ভোট।
সাংবাদিক সম্মেলনে নৌকার প্রার্থী শেখ মোজাহার হোসেন কান্টু বলেন কালিগঞ্জ উপজেলা চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগ সম্পাদক সাইদ মেহেদী এবং নির্বাহী অফিসার সরদার মোস্তফা শাহীনের যোগসাজশে একটি বিতর্কিত ফলাফল ঘোষনা করা হয়েছে। তিনি এ নির্বাচন প্রত্যাখ্যান ও ফলাফল বাতিল করে পুননির্বাচন দাবি করেন। রিটার্নিং অফিসার (উপজেলা নির্বাচন অফিসার) বরাবর প্রদত্ত অভিযোগে তিনি বলেন, রিটার্নিং অফিসারের স্থলে ইউএনও বিধি বহির্ভূত দায়িত্ব পালন করেছেন। নির্বাচনের আগের রাতে উপজেলা নির্বাহী অফিসার সরদার মোস্তফা শাহীন নিজ বাসভবনে প্রিজাইডিং অফিসারদের নৈশভোজে আমন্ত্রন জানিয়ে ব্যালট পেপারে স্বাক্ষর করিয়ে এবং ঘোড়া প্রতীকে সিল মেরে নিজের হেফাজতে রেখে দেন। পরদিন সেই ব্যালট পাঠানো হয় কেন্দ্রে। তিনি আওয়ামী লীগ দলীয় নেতাকর্মী ও সমর্থকদের মোটরসাইকেল দাঁড় করিয়ে হাওয়া খুলে দেন। নির্বাচনের আগের দিন এবং নির্বাচনের দিন ইউএনও আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী ও সমর্থকদের পিটিয়ে আহত করেন। কোন কোন কেন্দ্রে নির্বাচনের আগের দিন এবং কোন কোন কেন্দ্রে নির্বাচনের দিন ব্যালট পেপার পাঠানো হয়েছে এবং ভোটগ্রহন ৮টা থেকে ৪টার স্থলে ৯টা থেকে ৫টা পর্যন্ত করা হয়েছে। নির্বাহী অফিসার ভোটকেন্দ্রে উপস্থিত হয়ে আইনশৃংখলা বাহিনীর সদস্যদের দ্বারা আওয়ামী লীগ নেতাকর্মী ও ভোটারদের মারপিট ও লাঞ্ছিত করে ঘোড়া প্রতীকে সিল মারা ব্যালটে বাক্স ভরে দিয়েছেন। নির্বাহী অফিসার নির্বাচন চলাকালে ভোটকেন্দ্রে ১৪৪ ধারা জারি করে আওয়ামী লীগ কর্মীশূন্য করে ঘোড়া প্রতীকের পক্ষে জালভোট প্রদান করেছেন। কেন্দ্র এলাকা তেকে নৌকার ভোটারদের তাড়িয়ে দেওয়ারও অভিযোগ করেন তিনি।
সাংবাদিক সম্মেলনে তিনি আরও বলেন, নৌকা প্রতীকের ভোটাররা তাদের ভোটার নম্বর এবং আইডি কার্ড দেখিয়েও কেন্দ্রে ঢুকতে পারেননি । এমনকি তিনি ঘোড়া প্রতীকের ভোটার স্লিপ ছাড়া কাউকে কেন্দ্রে যেতে না দেওয়ার জন্য পুলিশকে নির্দেশ দেন। অভিযোগ করে তিনি আরও বলেন নির্বাহী অফিসার সরদার মোস্তফা শাহীনের বাড়ি নড়াইল জেলায় এবং একই সাথে জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট, নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট, পুলিশ অফিসার সহ প্রায় সবার বাড়ি একই জেলায়। মোজাহার হোসেন কান্টু আরও বলেন, আমি প্রার্থী হওয়া সত্ত্বেও বাইরে থেকে ভোটার স্লিপ না নেওয়ায় আমাকে ভোটকেন্দ্রে প্রবেশ করতে দেওয়া হয়নি। কেবলমাত্র আমার কেন্দ্রে ভোট প্রদানের সময় ছাড়া অন্য কেন্দ্রের মধ্যে প্রবেশ করতে দেওয়া হয়নি। তিনি অভিযোগ করে বলেন তার উপস্থিতিতে তার শিশুপুত্রের ওপর লাঠিচার্জ করা হয়েছে। এমনকি প্রার্থী হিসাবে তাকে চারচাকার গাড়ি ব্যবহারের অনুমতিও দেওয়া হয়নি। মোজাহার হোসেন কান্টু আরও বলেন, প্রিজাইডিং অফিসারকে উপেক্ষা করে নির্বাহী অফিসার নিজে ব্যালট পেপার গননা করে প্রতি কেন্দ্রের নৌকায় সিল মারা ২০০ থেকে ২৫০টি ব্যালট পেপার অকারনে বাতিল করেছেন।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে কালিগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার সরদার মোস্তফা শাহীন বলেন তার অভিযোগগুলি সম্পূর্ন কল্পিত। আমার সামনেই তিনি একাধিক কেন্দ্রে কয়েকবার পর্যবেক্ষনে গেছেন। এছাড়া অন্য যেসব অভিযোগ তিনি করেছেন তা ভিত্তিহীন। উপজেলা নির্বাহী অফিসার হিসাবে আমার দায়িত্বের মধ্যে যেটুকু পড়ে আমি সেটুকু করেছি বলে জানান তিনি।
প্রার্থী মোজাহার হোসেন কান্টু বলেন, নির্বাচন চলাকালীন এসব অভিযোগ তিনি রিটার্নিং অফিসারসহ সরকারের বিভিন্ন দফতরে প্রেরন করেছেন। সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা মোঃ লুৎফর রহমান, আব্দুর রহিম, শেখ আব্দুর রাশেদ ও আজিবর রহমান।
কালিগঞ্জ ইউএনও’র বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগ নেতার ২২ নালিশ
পূর্ববর্তী পোস্ট