জি এম নজরুল ইসলাম, (শ্যামনগর) মুন্সীগঞ্জ প্রতিনিধিঃ আগের মতো কৃষকদের কাছে লাঙ্গল জোয়াল ও জোড়া গরু নিয়ে চাষের জমিতে যেতে দেখা যায় না। কৃষি জমিতে চোখ গেলেই দেখা যায় বিজ্ঞানের অত্যাধুনিক প্রযুক্তি ও নতুন নতুন যন্ত্র দিয়ে চাষাবাদ করার দৃশ্য। হারিয়ে যেতে বসেছে ঐতিহ্যবাহী গরুর হাল চাষ। আধুনিকতার সঙ্গে সঙ্গে চাষের পরিবর্তনে এখন ট্রাকটর, পাওয়ার টিলার দিয়ে চলছে জমি চাষের কাজ। তারা কর্মব্যস্ততার মাঝে কখনো কখনো মনের সুখে ভাওয়াইয়া গান গেয়ে গেয়ে জমি চাষ করতো। চাষিরা জমিতে গরু লাঙ্গল জোয়াল নিয়ে আসার আগে চিড়া গুড় অথবা মুড়ি-মুড়কি দিয়ে হালকা নাস্তা খেয়ে নিতে। পরে একটানা হট, হুট, ডাইনে যা, বামে যা, বস, বস আর ওঠ ওঠ করে যখন ক্লান্তি আসতো, তখন সূর্য প্রায় মাথার উপর খাড়া হয়ে উঠতো। চাষিরা সকালের নাস্তার জন্য হালচাষ বিরতি রেখে জমির আইলের ওপর বসতেন। তাদের নাস্তার ধরনটাও ছিল ঐতিহ্যবাহী। এক থাল পান্তাভাতের সঙ্গে কাঁচা অথবা শুকনা মরিচ, সরিষার তেল ও আলুর ভর্তা। এছাড়া বর্ষা মৌসুমে কারো জমির চাষাবাদ পিছিয়ে গেলে হাল চাষিরা নিজে থেকে গরু লাঙল-জোয়াল নিয়ে এসে পিছিয়ে পড়া চাষীদের জমি চাষ দিতেন। কাজের সঙ্গে যোগ দিতেন ধান রোপনের লোকজন। শ্যামনগর উপজেলা মুন্সিগঞ্জ ইউনিয়নে বাণিজ্যিক ভাবে কৃষকেরা গবাদি পশু লালন করতেন হাল চাষের জন্য। আবার কিছু মানুষের নিজের জমিজমা না থাকলেও চুক্তি করে অন্যের জমি চাষাবাদ করে নিজ পরিবারের ভরণ পোষণ করতেন। ইউনিয়নের কুলতলী গ্রামের কৃষক আবেরসূল গাজী জানান, গরু দিয়ে জমি চাষ করাই ছিলো আমার পেশা। তবে দেশ ডিজিটাল হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে কৃষকরাও ডিজিটাল হয়ে গেছে। তারা এখন আর গরুর হাল দিয়ে জমি চাষাবাদ করছেন না। তিনি আরও জানান গরু দিয়ে হাল চাষের অনেক উপকারীতা ছিলো। লাঙ্গলের ফলা মাটির অনেক গভীরে যায়। ফলে কৃষি জমির মাটি ভালো আলগা ও নরম হয়। জমিতে ঘাসও কম হয়। হালচাষের সময় গরুর গোবর মিশে প্রাকৃতিক জৈব সার তৈরি করতো। এতে জমিতে বাড়তি রাসায়নিক সার ব্যবহার না করলেও হতো, ফলনও ভালো হতো। এভাবে লাঙ্গল দিয়ে প্রতিদিন পঞ্চাশ শতাংশ জমি চাষাবাদ করা যেতো। কিন্তু বর্তমানে নতুন নতুন মেশিনের সাহায্যে কৃষকরা কম সময়ে ও কম খরচে জমি চাষাবাদ করছে। সরজমিনে দেখা যায়, প্রয়োজন হলেই সল্প সময়ের মধ্যেই এখন ট্রাকটর, পাওয়ার টিলার সহ আধুনিক সব যস্ত্রপাতি হাতের নাগালেই পাচ্ছেন কৃষকরা। কৃষকেরা এখন গবাদি পশু পালন না করে অন্য পেশায় ঝুঁকছেন। এতে আবহাওমান গ্রাম বাংলার ঐতিহ্য লাঙ্গল দিয়ে জমি হালচাষ প্রায় বিলুপ্তির পথে। কৃষিতে দেখা যাচ্ছে ব্যাপক পরিবর্তন, চলছে বিজ্ঞানের অত্যাধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার। শ্যামনগর উপজেলার সহকারী কৃষি কর্মকর্তা মাসুম বিল্লাহ জানান, বর্তমানে কৃষিতে আমূল পরিবর্তন এসেছে। কৃষি কাজেও এসেছে বিজ্ঞানের অত্যাধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার। সময়ের প্রয়োজনে মানুষ এখন লাঙ্গলের পরিবর্তে ট্রাকটর, পাওয়ার টিলার দিয়ে জমি চাষাবাদ করছে। এখন আর আগের মতো সেই লাঙ্গল দিয়ে জমি চাষাবাদ করতে চোখে পড়ছে না।