আব্দুর রহিম, কালিগঞ্জ: দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে ক্ষমতাসীন দল বাংলাদেশ আ.লীগের পাশাপাশি বর্তমানে সংগঠনকে মজবুত ও তৃণমূলের চাহিদাকে প্রাধ্যান্য দিয়ে প্রার্থী বাছাইয়ে মনোনিবেশ করেছে রাজনৈতিক দলগুলো। সাতক্ষীরাতেও তার ব্যতিক্রম নয়। এক সময়ের বিএনপি ও জামায়াতের ঘাঁটি খ্যাত সাতক্ষীরায় গত একযুগে বর্তমান সরকারের নানামূখী উন্নয়নের ফলে এখন অনেকটাই সমৃদ্ধ হয়েছে আ.লীগের ভোট ব্যাংক। আর এই কৃতিত্বের একমাত্র ধারক ও বাহক হলেন বাংলাদেশ আ.লীগের কেন্দ্রীয় উপদেষ্টা মন্ডলীর সদস্য, সাবেক স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা মন্ত্রী, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সাংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি, সাতক্ষীরা ৩ আসনের বারবার নির্বাচিত সংসদ সদস্য, বিশ্ববরেণ্য অর্থোপেডিক সার্জন অধ্যাপক ডা. আ. ফ. ম রুহুল হক। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আস্থাভাজন ডা. রুহুল হকের হাতেই ঘুরে দাঁড়িয়েছে সাতক্ষীরার উন্নয়নের চাকা। যে কারণে জেলার অন্যান্য সাংসদীয় আসনগুলোতে ক্ষমতাসীন দলের প্রার্থীজট থাকলেও, সাতক্ষীরা ৩ আসনে এখনও পর্যন্ত অধ্যাপক ডা. আ. ফ. ম রুহুল হকের বিকল্প নেই বলে মনে করছেন জনসাধারণ থেকে শুরু করে ক্ষমতাসীন দলের তৃণমূল ও শীর্ষস্থানীয় নেতারা। এ আসনে বর্তমানে ভোটার সংখ্যা প্রায় ৪ লাখ। আসনটি তৈরি হওয়ার পর থেকে জাতীয় সংসদ নির্বাচনগুলোতে চারবার আওয়ামী লীগ, তিনবার জামায়াত ও একবার করে জাতীয় পার্টি এবং স্বতন্ত্র প্রার্থী জয়লাভ করেছেন। সাতক্ষীরা-৩ (দেবহাটা, আশাশুনি ও কালীগঞ্জ আংশিক) আসনে ২০০৮ সালে ডা. আ. ফ. ম রুহুল হক প্রথমবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হওয়ার পর কেবলমাত্র নিজের নির্বাচনী এলাকার উন্নয়নে সীমাবদ্ধ না থেকে কাঁধে তুলে নিয়েছিলেন অবহেলিত গোটা সাতক্ষীরা জেলার উন্নয়নের দায়িত্ব। গত ১৫ বছরে নিজ নির্বাচনী এলাকায় শতভাগ বিদ্যুতায়ন, রাস্তাঘাট, ব্রিজ-কালভার্ট নির্মাণের পাশাপাশি সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির আওতায় বয়স্ক, বিধবা, প্রতিবন্ধি ও মাতৃত্বকালীন ভাতাসহ শতভাগ ভাতা ব্যবস্থা নিশ্চিত করেছেন। সীমান্তবর্তী এলাকা হওয়ায় ভাঙন কবলিত দেবহাটা, কালীগঞ্জ ও আশাশুনিতে নদী ভাঙনরোধে জরাজীর্ণ বেড়িবাঁধ মেরামত ও এলাকাভেদে নতুন বাঁধ নির্মাণের ব্যবস্থা করেছেন। ঘূর্ণিঝড় ও বন্যায় প্রাণহানী এবং ক্ষয়ক্ষতি হ্রাসে ঝুঁকিপূর্ণ এলাকাগুলোতে একের পর এক বহুমূখি ঘূর্ণিঝড় আশ্রয় কেন্দ্র স্থাপনের ব্যবস্থা করেছেন। পাশাপাশি কর্মসৃজন প্রকল্প, টিআর, কাবিখা, কাবিটা ও এডিপি’র মতো প্রকল্পের মাধ্যমে নির্বাচনী এলাকা তিনটি উপজেলার অবকাঠামোগত উন্নয়নে আমূল পরিবর্তন এনেছেন ডা. রুহুল হক। তাছাড়া মুজিববর্ষ ঘিরে অসংখ্য গৃহহীন ও ভূমিহীনদের মাঝে জমিসহ সরকারি অর্থায়নে নির্মিত সেমিপাকা ঘর বরাদ্দ প্রক্রিয়া সুষ্ঠুভাবে বাস্তবায়নে তার ব্যাপক অবদান রয়েছে। বিশ্ববরেণ্য চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যমন্ত্রী থাকার সুবাদে গোটা সাতক্ষীরার স্বাস্থ্যখাতে ব্যাপক পরিবর্তন এনেছেন তিনি। কমিউনিটি ক্লিনিকগুলোতে স্বাস্থ্যসেবার মান উন্নয়নের পাশাপাশি অবকাঠামোগত উন্নয়ন এবং সাধারণ মানুষকে কমিউনিটি ক্লিনিকমুখী করতেও তিনি গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছেন। এছাড়া দেবহাটা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সকে ৫০ শয্যায় উন্নীতকরণ, নলতায় ইনস্টিটিউট অব হেলথ টেকনোলজি (আইএইচটি) এবং ম্যাটস নির্মাণ, সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজ নির্মাণ সবই এসেছে ডা. রুহুল হকের হাতেই। আর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সাংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি নির্বাচিত হওয়ার পর থেকে সাতক্ষীরায় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় নির্মানে ডা. রুহুল হকের অক্লান্ত প্রচেষ্টা সম্প্রতি সাতক্ষীরা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় আইন অনুমোদনে চুড়ান্ত সফলতা পেয়েছে। একসময় সাতক্ষীরায় বিশ্ববিদ্যালয় নির্মাণ জেলাবাসির কাছে কল্পনাতীত থাকলেও, তা বাস্তবে রুপ দিয়েছেন ডা. রুহুল হক এমপি। নির্বাচনকে সামনে রেখে ইতোমধ্যেই নির্বাচনী এলাকায় সভা-সভাবেশ, দলীয় নেতাকর্মীদের সাথে মতবিনিময় এবং ছাত্র ও যুব নের্তৃত্বকে সুসংগঠিত করতে ডা. রুহুল হক এমপিসহ তার পক্ষে দলের একাধিক টিম নিয়মিত রাজনীতির মাঠে কাজ করছেন। ২০১৩ সালে জামায়াতের নায়েবে আমীর মাও. দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর রায়কে ঘিরে বিএনপি-জামায়াতের তান্ডবে অনেকটাই অকার্যকর হয়ে পড়ে সাতক্ষীরা জনপদ। সে সময় প্রভাষক মামুন, আ.লীগ নেতা আবু রায়হান, আব্দুল আজিজ, আলমগীর হোসেনসহ বেশ কয়েকজন ক্ষমতাসীন দলের নেতাকে হত্যা করে গোটা সাতক্ষীরাবাসিকে জিম্মি করে ফেলে বিএনপি-জামায়াত। চারিদিকে বিএনপি-জামায়াতের অগ্নিসংযোগ, ভাংচুর, সড়ক অবরোধ আর ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মীদের হত্যা-হামলার সেই বিভিষিকাময় দিনগুলি আজও দাগ কেটে আছে সাতক্ষীরার সর্বস্তরের মানুষের মনে। সেই নৈরাজ্যকর পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে সাতক্ষীরায় ক্ষমতাসীন দলের রাজনীতিকে ফের সুসংগঠিত ও স্বাভাবিক ধারায় ফিরিয়ে আনতে দিনরাত এক করে কাজ করেছেন ডা. রুহুল হক-এমপি। যেকারণে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনকে ঘিরে সাতক্ষীরা-৩ আসনে তার বিকল্প কোন নের্তৃত্ব আজও ভাবতে পারেনি আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা। তবে ক্ষমতাসীন দলের হয়ে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এ আসনে মনোনয়ন প্রত্যাশা করছেন জেলা আ.লীগের শিল্প ও বাণিজ্য বিষয়ক সম্পাদক শেখ এজাজ আহমেদ স্বপন, নর্দান ইউনিভার্সিটির ভিসি প্রফেসর ড. ইউসুফ আবদুল্লাহ, আশাশুনি উপজেলা আ.লীগ সভাপতি ও উপজেলা চেয়ারম্যান এবিএম মোস্তাকিম, দেবহাটার সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান ও সাবেক উপজেলা আ.লীগের সভাপতি এড. গোলাম মোস্তফা। ডা. রুহুল হক এমপি বলেন, ‘সংসদ সদস্য হিসেবে গত প্রায় ১৫ বছরে আমার নির্বাচনী এলাকায় সাধ্যমতো উন্নয়ন করেছি। আগামীতে আরও উন্নয়ন পরিকল্পনা রয়েছে। ব্যক্তি ইমেজে বরাবরই ভোটারদের কাছে আমার জনপ্রিয়তা শীর্ষে রয়েছে। যে কেউ মনোনয়ন প্রত্যাশা করতে পারেন, তবে প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনাসহ দলের মনোনয়ন বোর্ডের কাছে আমিই ‘সেরা’ বলে মনে করছি। মনোনয়ন পেলে দ্বিধা-দ্বন্দ ভুলে নেতাকর্মী ও সর্বস্তরের জনগন আমাকে পুনরায় এ আসনের সংসদ সদস্য নির্বাচিত করবেন বলে আমি দৃঢ় বিশ্বাসী’।