আব্দুল্লাহ আল-মাহফুজ: এক বখাটের উৎপাত সইতে না পেরে শেষ পর্যন্ত বখাটের প্রেমে পড়ে বিয়ে করে বখাটে ও তার পরিবারের হুমকি-ধামকিতে ভয়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছে নবম শ্রেনীর এক ছাত্রী। এতে ওই ছাত্রীর পড়াশুনা বন্ধ সহ জীবনের নিরাপত্তায় আতংকে দিন কাটছে। ঘটনাটি সাতক্ষীরা সদর উপজেলার ব্রহ্মরাজপুর ইউনিয়নের পূর্ব দহাকুলা গ্রামের।
জানা যায়, দেবহাটা উপজেলার কুলিয়া ইউনিয়নের শ্রীরামপুর গ্রামের মোঃ শরিফুল ইসলামের কন্যা নাসরিন সুলতানা (১৪) সদর উপজেলার ব্রহ্মরাজপুর ইউনিয়নের পূর্ব দহাকুলা গ্রামে নানার বাড়ীতে থেকে স্থানীয় ডিবি ইউনাইটেড হাইস্কুলে পড়াশুনা করত। স্কুলে যাতায়াতের পথে কালেরডাঙ্গা গ্রামের মোঃ আব্দুস সবুর সরদারের পুত্র বখাটে ফরহাদ হোসেন উৎস (২১) নাসরিন সুলতানাকে উত্যক্ত করত। এ নিয়ে নাসরিন সুলতানার মামারা উৎসের পরিবারকে জানিয়েও লাভ হয়নি। এক পর্যায়ে নাসরিনের সাথে ফরহাদ হোসেন উৎসের প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। শুধু প্রেম করেই ক্ষ্যন্ত হয়নি উৎস। শেষ পর্যন্ত নাসরিনকে চাপে রেখে বাড়ির সবার অজান্তে উৎস তাকে সঙ্গে নিয়ে এফিডেভিটের মাধ্যমে গত ইং ১৩/১১/২০১৮ তারিখে এক লক্ষ টাকা দেনমোহরে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়। বিয়ের পর থেকে উৎস দিন-রাত নাসরিনের নানার বাড়িতে অবাধে যাতায়াত শুরু করে। নাসরিন সুলতানা ডিবি ইউনাইটেড হাইস্কুলের নবম শ্রেণীর ছাত্রী।
দহাকুলা গ্রামের হাফিজুল ইসলাম জানান, নাসরিনের সাথে উৎসের বিয়ের ব্যাপারটি গ্রামের সবারই জানা। প্রথম দিকে এ নিয়ে কানা-ঘুষা হলেও পরে সবাই জেনে যায়।
এসব ঘটনা জানাজানি হলে উৎসের পরিবারের সদস্যরা উৎসকে চাপ দিয়ে তাদের নজরে রাখতে শুরু করে। এসবের ফাঁকেও উৎস নাসরিনের সাথে যোগাযোগ অব্যাহত রাখে। শেষমেষ উৎসকে ফেরাতে ব্যর্থ হয়ে উৎসের পরিবারের সদস্যরা নাসরিনের মামাদের উপর চাপ প্রয়োগ শুরু করে। এমনকি নাসরিন সহ তার মামাদের ব্যাপক হুমকি-ধামকি অব্যাহত রাখে। আর এসবের কারনেই নাসরিন মামাদের বাড়ি থেকে বের হয়ে পিতার বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছে। মাঝে-মধ্যে লুকিয়ে নাসরিন স্কুলে আসলেও তাদের চাপে সেটাও বন্ধ হয়ে গেছে। এক প্রকার লেখা-পড়া বন্ধ করে দিয়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছে নাসরিন। পিতা-মাতার কথা মত উৎস সব যোগাযোগ বন্ধ করে দিয়েছে। মাঝে-মধ্যে ফোন দিলেও নাসরিনকে উৎস গালাগাল করছে।
কালেরডাঙ্গা গ্রামের এক যুবক নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, ফরহাদ হোসেন উৎস মাধ্যমিক স্তরে লেখাপড়ার জন্য সাতক্ষীরা সরকারি বালক উচ্চ বিদ্যালয়ে সুযোগ পায়। এখানে সে বিভিন্ন অপরাধে অভিযুক্ত হওয়ায় স্কুল কর্তৃপক্ষ তাকে বিতাড়িত করে। পরবর্তীতে সে বুধহাটা বিবিএম মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে ভর্তি হয়। সেখানেও সে নানা অপরাধ কর্মকান্ডে জড়িত থাকার অভিযোগে স্কুল থেকে বের করে দেয়। সর্বশেষ সে ব্রহ্মরাজপুর ডিবি ইউনাইটেড হাইস্কুল থেকে এস,এস,সি পাশ করে। উৎস এখন সাতক্ষীরা সরকারি কলেজের এইচএসসি’র প্রথম বর্ষের ছাত্র।
নাসরিন সুলতানা এ প্রতিবেদকের কাছে অভিযোগ করে বলেন, আমরা খুব গরীব মানুষ তাই আমাকে তারা মেনে নিতে পারছে না। উৎসের মা আমাকে সাফ জানিয়ে দিয়েছে সব সোনার গহনা ও ছেলের পালসার মোটরসাইকেল দিলে তারা আমাকে ঘরে তুলবে। আমাকে নেবে না বলেই তারা আমার নামে আজে-বাজে কথা ছড়াচ্ছে। নাসরিন আরও জানায়, বুধবার (১১ সেপ্টেম্বর) আমাকে সাতক্ষীরায় একা পেয়ে উৎস ও তার পিতা আব্দুস সবুর জোরপূর্বক একটি দোকানে নিয়ে কিছু কাগজে স্বাক্ষর নেওয়ার চেষ্টা করে। কিন্তু কৌশলে আমি পালিয়ে আসায় তারা তা করতে পারেনি। সাংবাদিকদের মাধ্যমে নাসরিন তার স্বামীকে পাওয়ার দাবী এবং তা না হলে তাদের উপযুক্ত শাস্তির দাবী জানান।
এ ব্যাপারে উৎসের পিতা আব্দুস সবুর এ প্রতিবেদককে জানান, ওই মেয়ের অন্য জায়গায় বিয়ে হয়ে গেছে। আমার ছেলের বিরুদ্ধে যে অভিযোগ করা হচ্ছে তা মিথ্যা। বিয়ের কাগজ ভূয়া।
এই বিয়ে যে নোটারী পাবলিক থেকে করা হয়েছে সেই নোটারী পাবলিকের বিয়ে এফিডেভিট করেনি বলেও একটি প্রত্যয়ন পত্রও দেখান উৎসের পিতা। তবে উৎস ও তার পিতার কাছে যখন জানতে চাওয়া হয় উৎস ও নাসরিনের একাধিক অন্তরঙ্গ ছবি ও এফিডেভিটের স্ট্যাম্পে উৎসের স্বাক্ষর ভূয়া কিনা এমন প্রশ্নের কোন উত্তর তারা দিতে পারেনি।
নাসরিন সুলতানার নিজ মুখের বক্তব্য শুনতে ও ভিডিও দেখতে একেবারে নীচে ক্লিক করুন:
ফরহাদ হোসেন উৎস ও নাসরিন সুলতানার বিয়ের এফিডেভিটের কাগজ :