সৈয়দ মাহাবুব, গাইবান্ধা প্রতিনিধি : একদিকে চলছে জরুরি ভিত্তিতে নদীর তীর সংরক্ষণের কাজ, অন্যদিকে নদীতে ড্রেজার মেশিন বসিয়ে একমাস ধরে দিন-রাত চলছে বালু উত্তোলন। ফলে সরকারের কোটি টাকা পানিতে যাচ্ছে এবং ঐতিহ্যবাহী কামারজানী বন্দর সহ সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা হুমকির মুখে পড়বে বলে আশঙ্কা করছেন সচেতন মহল।
তারা বলছেন, একমাস ধরে তিনটি ড্রেজিং মেশিন বসিয়ে দিন-রাত বালু উত্তোলনের মহোৎসব চললেও প্রশাসন দেখেও না দেখার ভান করে চুপচাপ রয়েছে।
সচেতন মহলের অভিযোগ, বিষয়টি স্থানীয়, উপজেলা ও জেলা প্রশাসনকে কয়েক দফায় জানিয়েও প্রতিকার মেলেনি। বরং অভিযোগকারীদের নাম বালু ব্যবসায়ীদের কাছে প্রকাশ করায় বিভিন্নভাবে হুমকি দিচ্ছে বালু ব্যবসায়ী মহিউল ইসলাম, মারুফ ও রায়হানসহ একটি প্রভাবশালী সিন্ডিকেট।
সরেজমিনে দেখা গেছে, গাইবান্ধা সদর উপজেলার কামারজানী বন্দরের পাশে নদীতে তিনটি ড্রেজার মেশিন বসিয়ে বালু উত্তোলন চলছে। সেই বালু বন্দরের পাশেই জমা করে রাখা হচ্ছে। সেখান থেকে ট্রাকটরে করে (স্থানীয় ভাষায় কাকড়া) বিভিন্ন স্থানে বালু কিনে নিয়ে যাচ্ছে ঠিকাদাররা।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ড্রেজার মেশিন চালক জানান, ১২০ ফুট গভীর থেকে এই বালু উত্তোলন করা হচ্ছে। প্রতিদিন গড়ে ৭০ থেকে ৮০ ট্রাকটর বালু তোলা যায়। প্রতি ট্রাকটর বালু বিক্রি হচ্ছে ১২শ টাকায়। মেশিনের তেল, লেবার ও আনুসঙ্গীক খরচ সহ প্রতি ট্রাকটরে ৪৫০ টাকা খরচ হলে বালু বিক্রিতে লাভ থাকছে ট্রাকটর প্রতি ৭৫০ টাকা। সে হিসেবে প্রতিদিন গড়ে লাভ হচ্ছে ৫০ হাজার টাকা।
স্থানীয়রা জানায়, গত বন্যায় পার্শ্ববর্তী গোঘাট গ্রামের প্রায় একশ বাড়িঘর নদীগর্ভে চলে যায়। কড়াইবাড়ী এলাকা ও কামারজানী বন্দর সহ সরকারি-বেসরকারি গুরুত্বপুর্ণ স্থাপনা পড়ে মারাত্মক হুমকির মুখে। তখন তড়িঘড়ি করে পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) জিও ব্যাগ ফেলে প্রবল নদী ভাঙন থেকে রক্ষা করে কামারজানী বন্দরসহ আশে পাশের এলাকা। বর্তমানে গোঘাট ও কড়াইবাড়ী এলাকায় সরকারিভাবে জরুরি ভিত্তিতে নদীর তীর সংরক্ষণ কাজ চলছে। কিন্তু স্থানীয় প্রভাবশালী বালু ব্যবসায়ীরা কামারজানী বন্দরের পাশে নদীতে তিনটি ড্রেজার মেশিন বসিয়ে যে ভাবে দিন-রাত বালু উত্তোলন করছে, তাতে সরকারের কোটি টাকা পানিতে যাবে এবং আবারো হুমকির মুখে পড়বে গোঘাট, কড়াইবাড়ী ও কামারজানী বন্দর সহ সরকারি-বেসরকারি গুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন স্থাপনা।
কামারজানী ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুস সালাম জাকির মুঠোফোনে বলেন, বালু উত্তোলনের বিষয়টি আমি এবং স্থানীয়ভাবে অনেকেই উপজেলা ও জেলা প্রশাসনকে অবগত করি। এরপর উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) সরেজমিনে এসে বালু উত্তোলনকারীদের সাথে আলোচনা করে বালু তোলা বন্ধ করে চলে যান। তার একদিন পরই আবার বালু উত্তোলন শুরু হয়েছে।
সদর উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি ) আবতাবুজ্জামান আল-ইমরান দেশের বাহিরে অবস্থান করছেন। তবে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) প্রসুন কুমার চক্রবর্তী মুঠোফোনে বলেন,আমি সদ্য এখানে যোগদান করেছি। এ সংক্রান্ত অভিযোগ পেয়েছি, দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
জেলা প্রশাসক আবদুল মতিন বলেন,অভিযোগ পেয়েছি। দ্রুত বালু উত্তোলন বন্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
বালু উত্তোলনে হুমকির মুখে কামারজানী বন্দর


পূর্ববর্তী পোস্ট