ভারত সরকারকে খুশি করতেই আদানির সঙ্গে চুক্তি

কর্তৃক porosh
০ কমেন্ট 24 ভিউস

জাতীয় ডেস্ক:

ভারতের ব্যবসায়িক গোষ্ঠী আদানির সঙ্গে বিদ্যুৎ ক্রয়ের চুক্তি বাতিলের দাবি করেছেন বিশিষ্টজনেরা। তাঁরা বলেছেন, ভারত সরকারকে সন্তুষ্ট করতেই আদানির সঙ্গে এ চুক্তি করা হয়েছে। বিদ্যুৎ-জ্বালানি খাতে আমদানিনির্ভর ভুল পরিকল্পনার কারণেই বারবার দাম বাড়াতে হচ্ছে। এতে সব পণ্যের দাম ও মানুষের জীবনযাত্রার ব্যয় বাড়ছে।

আজ রোববার রাজধানীর গণস্বাস্থ্য কেন্দ্র হাসপাতালের মিলনায়তনে ভাসানী অনুসারী পরিষদ আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন বক্তারা। আদানির সঙ্গে বিদ্যুৎ চুক্তি বাতিলের দাবিতে এটির আয়োজন করা হয়। একই দাবিতে ১০ মার্চ বেলা তিনটায় জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করার ঘোষণা দিয়েছে ভাসানী অনুসারী পরিষদ।

গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন, আহমদিয়াদের ওপর নির্যাতন চালানো হচ্ছে। কৃষকেরা পুরো খাবার পায় না। সরকার প্রকৃত তথ্য তুলে ধরার ব্যবস্থা আটকে রাখে। এভাবে চলতে দেওয়া যায় না। এ সরকার ভারতে শুধু লুট করার সুযোগ দিচ্ছে। আওয়ামী লীগ ও বিএনপি আপনাদের বাঁচাতে পারবে না। আপনাদের বাঁচাবেন, আপনারা; জনগণ।

বাংলাদেশ তেল–গ্যাস-খনিজ সম্পদ ও বিদ্যুৎ-বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটির সাবেক সদস্যসচিব আনু মুহাম্মদ বলেন, কয়লা খনি, পরিবহনের জাহাজ, বন্দর, রেললাইন ও বিদ্যুৎকেন্দ্র—সবই আদানির মালিকানায়। প্রতিটি ধাপে খরচ হিসাব করবে তারা। তাই এখানে বাড়তি খরচের সুযোগ রয়ে গেছে। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে খুশি করতেই আদানির সঙ্গে বিদ্যুৎ চুক্তি করা হয়েছে। এ চুক্তিসহ দেশকে বিপদে ফেলার মতো সব চুক্তির সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের শাস্তির আওতায় আনতে হবে।

আনু মুহাম্মদ আরও বলেন, উচ্চ ব্যয়ের ঋণনির্ভর প্রকল্প রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র একটি ঝুঁকিপূর্ণ প্রকল্প। এর কোনো দরকার ছিল না। দেশে বিদ্যুৎ চাহিদার চেয়ে দ্বিগুণ উৎপাদন সক্ষমতা আছে। তাই ভারত থেকে আমদানির দরকার নেই, আদানিরও দরকার নেই। ভারতে বৃহৎ পুঁজির বিকাশ হয়েছে। এটার সম্প্রসারণ দরকার। তাই শ্রীলঙ্কা, নেপাল, ভুটান, বাংলাদেশে আসছে তারা। আর বর্তমান সরকারের কারণে বাংলাদেশ তাদের জন্য সুবিধাজনক।

নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, ঘৃণা করার মতো একটা শাসক ক্ষমতায় আছেন। তাঁদের নিয়ে কোনো ভালো কথা বলার সুযোগ নেই। আদানির চুক্তিটা পুরোপুরি রাজনৈতিক ধান্দায় করা হয়েছে।

গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকী বলেন, জবাবদিহিমূলক সরকার থাকলে আদানির বিদ্যুৎ চুক্তির মতো চুক্তি করা যায় না। ২০১৮ সালের নির্বাচনের আগে ভারত সরকারকে খুশি করতে যা যা করা হয়েছে, তার মধ্যে একটা হলো আদানির চুক্তি। আদানি যাতে সন্তুষ্ট হয়, সেটাই চুক্তিতে নিশ্চিত করা হয়েছে। তিনি আরও বলেন, ভোট ছাড়া ক্ষমতা টিকিয়ে রাখতে একদিকে দমন–পীড়ন ও অন্যদিকে বিভিন্ন শক্তিকে খুশি করা হচ্ছে। ভারত যদি একটি গোষ্ঠীকে ক্ষমতায় রাখতে চায়, তাহলে বাংলাদেশের মানুষের সঙ্গে তাদের বন্ধুত্ব থাকবে না। বাংলাদেশে জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠায় তারা সহায়ক ভূমিকা রাখতে পারে।

চুক্তি বাতিলের দাবি জানিয়ে সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, আদানির সঙ্গে বিদ্যুৎ ক্রয়ের চুক্তিটি দেশের স্বার্থবিরোধী ও দেশদ্রোহিতার শামিল।

এতে আরও বলা হয়, আদানি ভারত সরকারের কাছ থেকে কর ছাড়ের সুবিধা নিয়েছে। এতে তারা বিলিয়ন ডলারের বেশি সাশ্রয় করবে। অথচ তারা এটি বাংলাদেশের কাছ থেকে আদায় করবে। কোনো কারণে বাংলাদেশ বিদ্যুৎ না কিনলেও বছরে ৪৫ কোটি ডলার পরিশোধ করতে হবে। ২৫ বছরে ১ লাখ ২৬ হাজার ৫৮১ কোটি টাকা কেন্দ্র ভাড়া (ক্যাপাসিটি চার্জ) নিয়ে যাবে আদানি। ৩৪ শতাংশের কম বিদ্যুৎ কিনলে জরিমানা দিতে হবে পিডিবিকে। আদানির বিদ্যুৎ কিনতে যে পরিমাণ খরচ হবে, তার চেয়ে অর্ধেক খরচ করে দেশে বিদ্যুৎকেন্দ্র বানানো সম্ভব ছিল। ভারতের রাজনৈতিক দলগুলোও এ চুক্তির ন্যায্যতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে।



রিলেটেড পোস্ট

মতামত দিন

error: Content is protected !!