মোঃ আমজাদ হোসেন মিঠু, শ্যামনগরঃ শ্যামনগরে অত্যন্ত অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে চলছে হোটেল- রেস্তোরাঁ ব্যবসা। অধিকাংশ খাবার হোটেলে খোলা এবং নোংরা পরিবেশে তৈরি করা হচ্ছে সব প্রকার খাবার। এছাড়া সড়কের পাশে খোলা জায়গায় ধুলাবালির মধ্যে রাখা হচ্ছে পরোটা, জিলাপি, চপ,পেজু, মোগলাই পরোটা, মিষ্টি সহ বিভিন্ন প্রকার খাদ্য সমগ্রী। শ্যামনগর সদরসহ শ্যামনগরে সকল ইউনিয়নের গুরুত্বপূর্ণ বাজার ও মোকামগুলোতে বেশিরভাগ খাবার হোটেল বা রেস্টুরেন্টগুলোর বাইরের দৃশ্য গুলো বাহারি আলোকসজ্জায় সজ্জিত থেকে। বিভিন্ন রকমের ডিজিটাল সাইন বোর্ডের মাধ্যমে চকচকে ঝকঝকে থাকলেও খাবার তৈরির জায়গা দেখলে সচেতন মানুষ আঁতকে উঠবেন। সরজমিনে দেখা যায়, অধিকাংশ হোটেলগুলোর পাক ঘরের সাথে ল্যাট্রিন স্থাপন করা আছে। আর সেখানে অত্যন্ত অস্বাস্থ্যকর অবস্থার মধ্যে তৈরি খাদ্য সামগ্রী পরিবেশন করা হচ্ছে চাকচিক্য পরিবেশে। এদিকে ছোটখাটো হোটেল সহ অনিয়ম ও অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে খাদ্য সামগ্রী তৈরি হচ্ছে শ্যামনগর সদরের নামিদামি রেস্টুরেন্টগুলোতে। এছাড়া খাবারে মেশানো হয় মানবদেহের জন্য ক্ষতিকারক নানা রকম রাসায়নিক দ্রব্য । খাবারের মান ও পরিবেশ নিশ্চিতকরণে ছোট ছোট হোটেলগুলোতে মাঝেমধ্যে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের অভিযান পরিচালনা করা হলেও বড় হোটেলগুলো এর আওতায় আসছে না বলে অভিযোগ সচেতন মহলের। অনেকেই বলছেন, শ্যামনগরে অধিকাংশ হোটেলের খাবারের মূল্য তালিকা না থাকার কারনে প্রতারিত হন কাস্টমাররা। প্রত্যন্ত এলাকা থেকে বিভিন্ন প্রয়োজনের তাগীদে শ্যামনগর সদরে আশা মানুষগুলো আহার করার জন্য এসমস্ত হোটেলে প্রবেশ করে। আর হোটেলে কর্মরত সদস্যরা সুকৌশলে অতি নিম্নমানের এবং বাঁশি,পঁচা খাবার তাদের কে সরবরাহ করে থাকে এবং পরবর্তিতে কাস্টমারদের কাছ থেকে মনগড়া ভৌতিক বিল আদায় করে থাকেন।শ্যামনগর সদরের অলিগলিসহ থানাধীন বংশীপুর, নুরনগর, নওয়াবেকী, ভেটখালী, মুন্সিগঞ্জ, হরিনগর, কলাবাড়ী,বুড়িগোয়ালিনী, কাশিমাড়ী সহ- গুরুত্বপূর্ণ মোকামগুলোতে সরেজমিনে দেখা যায়, নোংরা, অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ, বাবুর্চি ও রান্নার কাজে সহযোগীদের গা থেকে ঘাম ঝরে পড়ছে খাবারে, কাটাকুটি চলছে স্যাঁতসেঁতে মেঝেতে। তাছাড়া অধিকাংশ হোটেলের ভিতরে হাত , মুখ ধোয়ার বেসিন গুলো সর্বক্ষণ ময়লা এবং অত্যন্ত দুর্গন্ধযুক্ত থাকে। এসমস্ত হোটেলের রান্নাঘরে উচ্ছিষ্ট ময়লা, আবর্জনায় ভয়ানক অবস্থা বিরাজমান। এছাড়া শ্যামনগরে অবৈধভাবে কিছুসংখ্যক অসাধু ব্যবসায়ীরা নিজেদের আখের গোছাতে সরকারি জায়গা ও ফুটপাথ দখল করে রাতারাতি ব্যাঙের ছাতার মতো গড়েছেন নামিদামি অসংখ্য খাবার হোটেল-রেস্তোরাঁ। এসব হোটেলের মধ্যে গুটি কয়েক ছাড়া বাকিগুলোর রান্নাঘরের অবস্থা দুর্গন্ধযুক্ত, নোংরা ও অস্বাস্থ্যকর। রান্না করার অংশে সাধারণত গ্রাহকদের প্রবেশের কোনো সুযোগ নেই। হোটেলের সামনের সাজসজ্জা করা অংশে খাবার খেয়ে বিল পরিশোধ করে বেরিয়ে পড়েন গ্রাহকরা। কিন্তু কোনো গ্রাহক যদি এসব হোটেলের রান্নাঘরের পরিবেশ দেখতেন তাহলে কেউই খাবার মুখে তুলতেন না। অথচ এ ধরনের হোটেল মালিকরা ভোক্তাদের একদিকে তাদের অধিকার থেকে বঞ্চিত করছেন, অন্যদিকে অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে তৈরি খাবার দিয়ে তাদেরকে স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে ফেলছেন। শ্যামনগর সদর সহ গুরুত্বপূর্ণণ মোকামগুলোতে বেশকিছু খাবার হোটেল ঘুরে দেখা গেছে, রান্নাঘর ও সামনের পরিবেশ অপরিচ্ছন্ন তবে বেশিরভাগ খাবার হোটেল মালিক পরিবেশনের জায়গা পরিচ্ছন্ন রাখলেও রান্নাঘরের অবস্থার দিকে নজর দেন না। সেকারণে রান্নাঘরের পরিবেশ নোংরা ও অস্বাস্থ্যকর। আবার হোটেলের সামনের জায়গায় চুলো বসিয়ে ধুলাবালির মধ্যেই সকাল সন্ধ্যায় পরোটা-বিকালে পুরি, মোগলাই পরোটা, বিভিন্ন ভোজ্য দ্রব্য তৈরি করছে। আর এসব খাদ্য সামগ্রী রাখা হচ্ছে খোলামেলা জায়গায়। তাতে পড়ছে ধুলাবালি আর ভন ভন করছে মাছি। তাদের ব্যবহারিত কড়াইগুলোতে পুরনো তেলেই চলছে ভাজাপোড়ার কাজ।পুরানো তেল ও বাঁশি, পঁচা খাবার খেয়ে প্রতিনিয়ত অসুস্থ হয়ে সর্বশান্ত হচ্ছে সাধারণ মানুষ। সুশীল সমাজের অনেকেই বলছেন, বেশিরভাগ খাবার হোটেলের রান্নাঘরের পরিবেশ স্বাস্থ্যসম্মত নয়। আবার বিশুদ্ধ খাবার পানি সরবরাহেরও ব্যবস্থা নেই।
শুধু তাই নয়,যে পানি দিয়ে বাসনপত্র ধোয়া হয় সে পানি বর্জ ও নোংরা মিশানো।গ্রাহকসেবার মান একেবারেই নিম্নমানের। খাবার হোটেলগুলোতে স্বাস্থ্যবিধি মানা হচ্ছে না। অধিকাংশ হোটেলের ফুড প্রসেসিং লাইসেন্স নেই। বিশেষ করে ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযান ঝিমিয়ে পড়ায় শ্যামনগরে খাবার হোটেলগুলোতে এ অবস্থা সৃষ্টি হয়েছে।
এদিকে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিভিন্ন হোটেল- রেস্তোরাঁর মালিকরা বলেন, স্যানিটারি ইন্সপেক্টর কে আমরা নিয়মিত মাসিক দিয়ে থাকি। এছাড়া প্রত্যন্ত এলাকার ছোট খাটো লাইসেন্স বিহীন মুদি বা কনফেকশনরীর মালিকরা ও প্রতি মাসে নিয়মিত মাসোহারা দিয়ে থাকেন বলে জানা যায়। এ ব্যাপারে দীর্ঘ ১৫ বছরের অধিককাল শ্যামনগর উপজেলার দায়িত্বে থাকা স্যানিটারি ইন্সপেক্টর বিকাশ চন্দ্র বলেন, এসব অভিযোগ সত্য নয়।
বিষয়টি নিয়ে শ্যামনগর সদর চেয়ারম্যান ও বাজার ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি এ্যাডঃ জহুরুল হায়দার বাবু বলেন, আমি এব্যাপারে ব্যাবসায়ীদের স্বাস্থ্য সম্মত খাবার পরিবেশন করার জন্য একাধিকবার সচেতন করেছি। এবং সদরে অবস্থিত সকল হোটেলে রেস্তোরাঁর মালিকদের মূল্য তালিকা সম্মুখে টানিয়ে রাখার পরামর্শ দিয়েছি। এবিষয়ে নবাগত সহকারী কমিশনার (ভূমি) মোঃ নাহিদ হাসান বলেন, আমি শ্যামনগরে নতুন এসেছি। এ বিষয়ে আমার অভিযান অব্যাহত থাকবে।