আকরামুল ইসলাম : ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে রাতদিন মাঠে কাজ করছে জেলা প্রশাসন। ডেঙ্গুর লাভা ধ্বংসের জন্য কখনো রাস্তার পাশ, কখনো ডোবা আবার কখনো বা বাড়ি বাড়ি অভিযান করছেন সাতক্ষীরা ডিসি মোস্তফা কামাল। জলাবদ্ধতা নিরসনেরও নিয়েছেন কার্যকরি পদক্ষেপ। তবে সাতক্ষীরা পৌরবাসীর দূর্ভোগের চিন্তা না করে জনপ্রতিনিধি পৌর মেয়র তাসকিন আহম্মেদ চিশতি ব্যক্তিগত সফরে রয়েছেন অষ্ট্রেলিয়ায়। যা চরম ক্ষোভের সৃষ্টি করেছে সচেতন শহরবাসীকে।
জনদূর্ভোগ ও দায়িত্বহীনতার কথা তুলে ধরে সাতক্ষীরা সচেতন নাগরিক কমিটির সদস্য, নাগরিক আন্দোলন মঞ্চের নেতা অ্যাড. ফাহিমুল হক কিসলু জানান, জনপ্রতিনিধি হিসেবে জনগণের যে সেবা করার কথা পৌর মেয়র তিনি সেগুলো করেন না। শহরে পানি নিস্কাসনের কোন ড্রেনেজ ব্যবস্থা নেই। ড্রেনেজ ব্যবস্থাগুলো যা রয়েছে সেগুলো দিয়ে পানি নিস্কাশন হয় না। সেগুলো পরিণত হয়েছে ডেঙ্গু তৈরীর কারখানা হিসেবে। জনপ্রতিনিধিদের অবহেলা ও দায়বদ্ধতার এত অভাব যে তারা নিজেদের সুবিধা নিয়েই সার্বক্ষণিক ব্যস্ত থাকে।
তিনি আরও বলেন, পৌর সভায় বাজেট থাকলেও গত দশ বছরে আমরা কখনো মশক নিধনের জন্য কোন পদক্ষেপ গ্রহন করতে দেখিনি। সম্প্রতি যখন ডেঙ্গু সারাদেশে মহামারি আকার ধারণ করলো তখন সরকারের নির্দেশনায় স্প্রে করা হচ্ছে। সাতক্ষীলা জেলা প্রশাসক যখন রাতদিন মাঠে পরিশ্রম করছেন ডেঙ্গু ও জলাবন্ধতা নিরসনে তখন জনপ্রতিনিধির ভূমিকা পালন না করে পৌর মেয়র গিয়েছেন অষ্ট্রেলিয়ায়। এ থেকেই মানুষের মনে স্পষ্ট হয়েছে তিনি কতটা জনসেবায় নিজেকে নিয়োজিত রাখেন।
এদিকে, সাতক্ষীরা পৌরসভার কাউন্সিলর জাহাঙ্গীর হোসেন কালু জানান, জলাবদ্ধতা ও ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে আমরা যখন ব্যস্ত সময় পার করছি তখন মেয়র তাসকিন আহম্মেদ চিশতি ব্যক্তিগত সফরে অষ্ট্রেলিয়ায় রয়েছেন। এই মুহূর্তে তিনি এ সফরে না গেলেও পারতেন।
সাতক্ষীরা সিভিল সার্জন ডা. মো. আবু শাহীন জানান, জেলায় বর্তমান পর্যন্ত ৪৭২ জন ডেঙ্গু রোগী শনাক্ত হয়েছে। সাতক্ষীরা সদর হাসপাতাল, মেডিকেল কলেজ হাসপাতালসহ বিভিন্নস্থানে ৫৩ জন ডেঙ্গু রোগী চিকিৎসাধীন রয়েছেন। এছাড়া বাকিরা চিকিৎসা নিয়ে বাড়িতে ফিরেছেন। উন্নত চিকিৎসার জন্য অন্যত্র রেফার করা হয়েছে কয়েকজনকে। ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে সাতক্ষীরা স্বাস্থ্য বিভাগ একযোগে কাজ করছে।
এদিকে, সাতক্ষীরা মেয়র তাসকিন আহম্মেদ চিশতি মন্ত্রনালয় থেকে অনুমোদন নিয়েই অষ্ট্রেলিয়ায় গিয়েছেন জানিয়ে পৌরসভার সচিব সাইফুর রহমান বলেন, নিয়মনীতি মেনেই ব্যক্তিগত সফরে তিনি অষ্ট্রেলিয়ায় গিয়েছেন। আগামী (৪ সেপ্টেম্বর) বুধবার পর্যন্ত তিনি ছুটিতে থাকবেন। জেলা প্রশাসনের তত্বাবধায়নে সাতক্ষীরা পৌরসভার নয়টি ওয়ার্ডে কাউন্সিলর ও স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গের সমন্বয়ে কমিটি গঠণ করা হয়েছে। যারা মশক নিধনের জন্য একযোগে কাজ অব্যাহত রেখেছেন। এছাড়া মেয়র দেশে না থাকলেও তিনি সার্বক্ষণিক নেটের মাধ্যমে যোগাযোগ রেখে নির্দেশনা দিচ্ছেন। সে অনুসায়ী কার্যক্রম চালানো হচ্ছে। তবে কত দিনের সফরে তিনি অষ্ট্রেলিয়ায় গিয়েছেন তাৎক্ষণিক জানাতে পারেননি সচিব।
ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণ ও সাতক্ষীরার জলাবন্ধতা নিরসনে সাতক্ষীরায় কার্যকরি পদক্ষেপ গ্রহন করা হয়েছে জানিয়ে সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসক এস.এম মোস্তফা কামাল বলেন, ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে সমন্বিত উদ্যোগ গ্রহন করা হয়েছে। সরকারি বেসরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারি, রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ একযোগে কাজ করছেন। এছাড়া তিনটি ধাপে ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে কাজ করছে জেলা প্রশাসন। বর্তমানে বাড়ি বাড়ি গিয়ে অভিযান পরিচালিত হচ্ছে। ডেঙ্গুর লাভা ধ্বংস করতে সচেতনতামূলক প্রচারাভিযান অব্যাহত রয়েছে। স্বাস্থ্য বিভাগও একযোগে কাজ করছে। জনপ্রতিনিধিদেরও সম্পৃক্ত করা হয়েছে। তারাও কাজ করছেন। তবে কোন জনপ্রতিনিধির বিরুদ্ধে কাজে অবহেলার অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
জেলা প্রশাসক আরও জানান, সাতক্ষীরার জলাবদ্ধতা নিরসনের জন্য ইজারা দেওয়া জেলার সকল খাল ও পানি নিস্কাসনের জায়গা সমূহের ইজারা বাতিল করা হয়েছে। অবৈধ দখলদারদের উচ্ছেদ কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে।
সাতক্ষীরায় ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে মাঠে ডিসি, পৌর মেয়র অষ্ট্রেলিয়ায়
পূর্ববর্তী পোস্ট