নিজস্ব প্রতিবেদক: শিক্ষার্থীদের পরিবহন খাতের টাকায় শিক্ষার্থীদের জন্য বাস ক্রয় না করে সাতক্ষীরা সরকারি কলেজ কর্তৃপক্ষ শিক্ষকদের জন্য ক্রয় করেছেন হাইয়েস মাইক্রোবাস। বার সিটের এ মাইক্রোবাসটির মূল্য ২০-২৫ লাখ টাকা। অথচ গাড়িটির ক্রয় দেখানো হয়েছে ৪২ লাখ ১৫ হাজার টাকা। আবার শিক্ষার্থীদের জন্য বর্তমানে পরিবহন খাতের ২৫ টাকার পরিবর্তে এখন নেওয়া হচ্ছে একশ টাকা।
সাতক্ষীরা সরকারি কলেজের শিক্ষকদের জন্য মাইক্রোবাস ক্রয়ে এভাবে দূর্ণীতি আর অনিয়ম করেছেন কলেজের অধ্যক্ষ আফজাল হোসেন। এমন অভিযোগ করে কলেজের কয়েকজন শিক্ষার্থী জানান, শিক্ষার্থীরা পরিবহন খাতে বছরে ২৫ টাকা করে দেয়। এই টাকা শিক্ষার্থীদের পরিবহন খাতে ব্যয় হওয়ার কথা। কিন্ত শিক্ষার্থীদের জন্য বাস ক্রয় না করে শিক্ষার্থীদের টাকায় শিক্ষকরা মাইক্রোবাস ক্রয় করেছেন। যা সরকারি পরিপত্রের পরিপহ্নি। কলেজে কোন ড্রাইভার নেই তাহলে এ গাড়ি চালাবে কে ? এবং এই গাড়ির পেছনে যে খরচ সেটা আসবে কোথা থেকে ? শিক্ষার্থীদের কাছ থেকেই বাড়তি এ টাকা উত্তোলন করা হবে। সুতরাং সরকারি কলেজ হয়েও শিক্ষা ব্যয় বেড়ে যাচ্ছে। পরিবহন খাতে আগে ২৫ টাকা দিলেও মাইক্রোবাসের টাকা উত্তোলনের জন্য বর্তমানে ১০০ টাকা করে বাড়তি গুনতে হচ্ছে শিক্ষার্থীদের।
ক্ষোভের সঙ্গে শিক্ষার্থীরা জানান, দূর্ণীতি আর অনিয়মে ছেয়ে গেছে সরকারি কলেজ প্রাঙ্গন। শিক্ষার্থীদের পরিবহন খাতের টাকায় মাইক্রোবাসের নির্ধারিত দাম সংকুলান না হওয়ায় অন্য খাতের টাকা এ খাতে ব্যবহার করা হয়েছে। যা নীতি বর্হিভূত। এছাড়া ১২ সিটের একটি হাইয়েস মাইক্রোবাসের দাম ২০-২৫ লাখ টাকা। অথচ ক্রয় দেখানো হয়েছে ৪২ লাখ ১৫ হাজার টাকা। অল্পদামের গাড়ি বেশী দামে কিনে শিক্ষার্থীদের টাকার অপচয় করা হয়েছে। এছাড়া বাকি টাকাও দূর্ণীতির মাধ্যমে আতœসাৎ করা হয়েছে। গাড়ি ক্রয় কমিটি করে তার মাধ্যমে এ দূর্ণীতি করেছেন কলেজের অধ্যক্ষ।
মাইক্রোবাস ক্রয়ের জন্য সাতক্ষীরা সরকারি কলেজে ৫ সদস্য বিশিষ্ট মাইক্রোবাস ক্রয় কমিটি করা হয়। কমিটির সদস্য সাতক্ষীরা সরকারি কলেজের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের প্রধান আবুল কালাম আজাদ বলেন, ১২ সিটের হাইয়েস মাইক্রোবাস ক্রয় করা হয়েছে। পাঁচ সদস্য বিশিষ্ট ক্রয় কমিটির আমি একজন সদস্য মাত্র। কলেজের ফান্ডে টাকা থাকায় মাইক্রোবাসটি ক্রয় করার জন্য কলেজের পক্ষ থেকে মন্ত্রনালয়ে আবেদন করা হয়েছিল। পরে মন্ত্রনালয় মাইক্রোবাস ক্রয়ের জন্য মন্ত্রনালয় অনুমোদন দেয় ও প্রগতি নামের একটি সংগঠণের মাধ্যমে কিনতে হবে বলে মন্ত্রনালয় নির্ধারণ করে দেয়। শিক্ষার্থীদের অভিযোগের বিষয়ে তিনি বলেন, গাড়িটি ক্রয়ের জন্য মন্ত্রনালয় ৪৩ লাখ টাকা অনুমোদন করে। গাড়ির দামও মন্ত্রনালয় ঠিক করে। কলেজ অধ্যক্ষ এ ফান্ডের সর্বময় ক্ষমতার অধিকারী। তিনি কমিটি করে দেন। এছাড়া শুধুমাত্র শিক্ষার্থীদের পরিবহন খাতের টাকা নয় এটি আরও অন্যান্য ব্যায় খাত রয়েছে।
শিক্ষার্থীদের পরিবহন খাতের টাকায় শিক্ষকদের গাড়ির বিষয়ে রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের প্রধান ও ক্রয় কমিটির সদস্য আবুল কালাম আজাদ বলেন, এটা শুধু শিক্ষকরা নয় শিক্ষার্থীরাও ব্যবহার করতে পারবে। এর বাইরে শিক্ষার্থীদের অভিযোগের বিষয়ে আমি কিছু বলতে পারবো না। সম্ভবত ৫ আগষ্ট গাড়িটি ক্রয় করা হয়েছে। আমি ক্রয় কমিটির সদস্য হলেও বিস্তারিত কিছু বলতে পারবো না।
তবে শিক্ষার্থীদের এসব অভিযোগের বিষয়ে সাতক্ষীরা সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ আফজাল হোসেন বলেন, সরকারি যথাযথ নিয়ম মেনেই আমরা গাড়িটি ক্রয় করেছি। গাড়িটি ক্রয় করা হয়েছে ৪২ লাখ ১৫ হাজার টাকা দিয়ে। কলেজের টাকায় গাড়িটি ক্রয় করা হয়েছে শিক্ষার্থীদের টাকায় নয়। এছাড়া অল্প টাকা দামের গাড়ি বেশী টাকা দিয়ে ক্রয় করা হয়নি। অল্প টাকা দামের কোন গাড়ি হয় না।
সাতক্ষীরায় ২৫ লাখ টাকার গাড়ি কিনল ৪২ লাখ টাকায়! কলেজ অধ্যক্ষের দূর্ণীতি
পূর্ববর্তী পোস্ট