সচ্চিদানন্দদে সদয়,আশাশুনি: সাতক্ষীরা থেকে ঘোলা পর্যন্ত ৪২ কিলোমিটার সড়কটি চলাচলের অযোগ্য হয়ে পড়েছে। সড়কের অধিকাংশের অবস্থা একেবারেই নাজুক। একারণে– অহরহ ঘটছে দুর্ঘটনা। এরপরও জীবনের ঝুঁকি নিয়ে দিনরাত চলাচল করছে যাত্রীরা। স্কুল-কলেজগামী শিক্ষার্থীরাও চলাচলে মাঝে-মধ্যে দুর্ঘটনার শিকার হচ্ছে। তবে প্রতিবছর কিছু রাস্তা সংস্কার করা হলেও বছর ঘুরতে না ঘুরতে আবারো সড়কগুলো একইভাবে ভেঙে চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়ে। সড়কের অধিকাংশ জায়গায় পিচ উঠে বেহাল দশার সৃষ্টি হয়েছে।প্রায় দশ বছর ধরে বড় ধরনের সংস্কার না হওয়ায় সাতক্ষীরা-আশাশুনি সড়কের ৪২ কিলোমিটারের মধ্যে ৪২ কিলোমিটার চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। সড়কে কিছু দূর পরপর ছোট-বড় অসংখ্য গর্ত তৈরি হয়েছে। বাসসহ বিভিন্ন যানবাহন চলাচলে সময় লাগছে দ্বিগুণ। পথের মধ্যে প্রায় যানবাহন বিকল হয়ে পড়ে। দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে চালক ও যাত্রীদের।
সড়ক ও জনপথ (সওজ) বিভাগের জেলা কার্যালয় ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, আশাশুনি থেকে জেলা সদরে যাতায়াতের এটি প্রধান সড়ক। ৪২ কিলোমিটারের মধ্যে সদর উপজেলায় ৬ কিলোমিটার ও আশাশুনি উপজেলায় ৩৬ কিলোমিটার রয়েছে। আশাশুনির ১১টি ইউনিয়নসহ সদর উপজেলার চারটি ও তালার একটি ইউনিয়ন এবং খুলনার পাইকগাছার লোকজন,পাশ্ববর্ত্তী শ্যাম নগর ও কালিগঞ্জ উপজেলার লোকজন এ সড়ক ব্যবহার করে। দীর্ঘদিন সড়কটি সংস্কার না হওয়ায় এ অঞ্চলের মানুষ দুর্ভোগে পড়েছে। বর্ষা মৌসুমে ঝুঁকি নিয়ে যানবাহনে চলাচল করতে হয়। আবার শীত মৌসুমে ও শুষ্ক আবহাওয়ায় ধুলোবালিতে মানুষ অতিষ্ঠ হয়ে ওঠে। গত মঙ্গলবার সরেজমিনে দেখা যায়, যতন মালির মোড়, ধুলিহর সাহেববাড়ির মোড়,মহিষকুড় মৎস্য সেট,কালীবাড়ী বাজার ঘোলঘোলে, ব্রহ্মরাজপুর বাজার, চাঁদপুর, বুধহাটা বাজার ও নোয়াপাড়া সড়ক সংলগ্ন কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনার মধ্যে রয়েছে আশাশুনি বাসস্ট্যান্ড, হাড়িভাঙ্গা বাজার ও মৎস্যসেট, মহিষকুড় মৎস্যসেট, নাকতাড়া-কালিবাড়ী বাজার, মাড়িয়ালা মৎস্য সেট ও হিজলিয়া বাস স্ট্যান্ড ও হাট। এসব বাজার ও মৎস্য সেটে প্রতিদিন লক্ষ লক্ষ টাকার বেঁচাকেনা হয়ে থাকে। সড়কটি ব্যবহার করেই ব্যবসায়ীরা দক্ষিণাঞ্চলের সাদা-সোনা খ্যাত চিংড়ী মাছ সহ বিভিন্ন মালামাল পরিবহন করে থাকে। সড়কটির উপর দিয়েই এ অঞ্চলে উৎপাদিত লক্ষ লক্ষ টন চিংড়ী দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে পাঠানো সহ বিদেশেও রপ্তানী হয়ে থাকে। যার মাধ্যমে সরকার মোটা অংকের রাজস্ব অর্জন করে থাকে। ফলে এটি উপজেলার একটি অন্যতম গুরুত্ব পূর্ণ সড়ক।এ সড়কের অনেক এলাকায় খানাখন্দে ভরা। আবার কোথাও কোথাও পিচ উঠে চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। বড় গর্তগুলোয় ইটের খোয়া ফেলা হয়েছে। এর ওপর দিয়ে গাড়ি চলাচলের ফলে এসব খোয়া রাস্তায় ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে।সাতক্ষীরা-আশাশুনি সড়কে প্রায় কয়েক শতাধিক বাস, ট্রাক, ইজিবাইক,মহেন্দ্র,মাইক্রোবাস,লেগুনা চলাচল করে। বাসচালক ফজর আলী বলেন, গাড়ি চালানো কঠিন হয়ে পড়েছে। প্রায় প্রতিদিনই বাসের যন্ত্রাংশ নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। অনেক সময় গাড়ি নষ্ট হয়ে মাঝপথে পড়ে থাকে। এসব কারণে যাত্রীদের সঙ্গে বচসা হয়। ৪২ কিলোমিটার সড়ক পার হতে সময় লাগে দেড় ঘণ্টার মতো। অথচ রাস্তা ভালো থাকা অবস্থায় এর অর্ধেক সময় লাগত। আশাশুনির আগড়দাড়ী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক আলাউদ্দীন বলেন, অনেক শিক্ষার্থী সাইকেলে করে বিদ্যালয়ে আসে। যানবাহনকে পাশ কাটাতে গিয়ে তারা প্রায়ই ছোটখাটো দুর্ঘটনার শিকার হয়। অভিভাবকেরা সব সময় আতঙ্কে থাকেন। সড়কটি একেবারেই চলাচলের অযোগ্য হয়ে পড়ায় দ্রুত সংস্কারের দাবি জানালেন এই শিক্ষক। এদিকে, সড়ক সংস্কারের উদ্যোগ নেয়ার কথা জানিয়েছেন সাতক্ষীরা সড়ক ও জনপদ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী। এরকম আশ্বাস নতুন নয়। বারবার সরকারী কর্মকর্তারা আশ্বাস দিয়েই চলেছেন। তবে এবার বাস্তবায়ন দেখতে চায় সাতক্ষীরাবাসী। নাম-কাওয়াস্তে সংস্কার না করে দীর্ঘ মেয়াদী পরিকল্পনায় মজবুত করে রাস্তা সংস্কারের দাবি জানিয়েছেন।
সাতক্ষীরা-আশাশুনি টু ঘোলা সড়কের দ্রুত সংস্কার দেখতে চায় এলাকাবাসী
পূর্ববর্তী পোস্ট