নিজস্ব প্রতিবেদক: সস্ত্রীক হজ্বে গিয়ে সব হারিয়েছে মুক্তিযোদ্ধা আব্দুস ছোবহান সরদার। সৌদি আরবে হজ্ব পালন শেষে স্ত্রী কোহিনুর সুলতানা স্ট্রোকে মারা যায়। এই স্ত্রীর শরীরের থাকা ৩ ভরি গহনা ও একমাত্র পুত্রের বিয়ের জন্য সৌদি থেকে কেনা ৫৩ গ্রাম স্বর্ণ মোয়াল্লেমের সহযোগিতায় চুরি হয়ে হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। খোয়া যাওয়া স্বর্ণের আনুমানিক মূল্য ৪ লাখ টাকা।
সাতক্ষীরা সদর উপজেলার ব্রহ্মরাজপুর গ্রামের মুক্তিযোদ্ধা আব্দুস ছোবহান বলেন, তিনি ও তার স্ত্রী কোহিনুর সুলতানা গত জুলাই মাসের শেষ সপ্তাহে পবিত্র হজ্বব্রত পালনের জন্য আল ইখলাস হজ্ব কাফেলার ১৩৭ নং মোয়াল্লেম আব্দুল মান্নানের মাধ্যমে সৌদি যান। সেখানে যাবার পর ১৯ আগস্ট সৌদির মক্কায় সেদেশের স্থানীয় সময় সকাল ৮টায় কোহিনুর সুলতানা স্ট্রোকজনিত কারণে মৃত্যবরণ করেন।
স্ত্রীর কোহিনুর সুলতানার মৃত্যুর পর তার ব্যবহৃত সোনার গহনা ও সেখান কেনা ৫৩ গ্রাম সোনা মদিনা শহরের হোটেল দারু রিহাব থেকে চুরি হয়।তিনি আরও বলেন, ৩১ আগস্ট দুপুরে জোহরের নামাজ পড়তে বাইরে মসজিদে যান তিনি। নামাজ শেষে ফিরে এসে দেখতে পান মোয়াল্লেম আব্দুল মান্নানের সহযোগিতায় হোটেলের লোকজন তার ব্যাগ ও জিনিসপত্র হোটেলের কক্ষ থেকে বাইরে নিচে রাখা। তখন মুক্তিযোদ্ধা আব্দুস ছোবহান ব্যাগের মধ্যে তার রাখা জিনিসপত্র থাকলেও সোনা ও সোনার গহনা না পেয়ে মোয়াল্লেমকে জিজ্ঞেস করেন। এসময় মোয়াল্লেম সন্তোষজনক উত্তর দিতে না পারায় মুক্তিযোদ্ধা আব্দুস ছোবহান সৌদি প্রবাসী তার এক আত্মীয়ের সহায়তায় মদিনা থানার পুলিশের কাছে নালিশ জানান। নালিশ পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। কিন্তু এ সময় মোয়াল্লেম আব্দুল মান্নান গা ঢাকা দেন। ফলে পুলিশ ওই সময় তাকে না পেয়ে থানায় ফিরে যায়। এরপর মদিনা থানায় একটি মামলা হয়।
মুক্তিযোদ্ধা আব্দুস ছোবহান বলেন, স্ত্রীর মৃত্যুতে তিনি যখন শোকাহত ঠিক তখন সুযোগ সন্ধানী মোয়াল্লেম তার স্ত্রীর শেষ স্মৃতি সোনা ও সোনারগহনা গায়েব করেছে। তিনি বলেন, মোয়াল্লেম আব্দুল মান্নানের অনুমতি ছাড়া যেখানে এক টুকরো কাগজও বাইরে আনা সম্ভব না, সেখানে আর কেউ তার ব্যাগে হাত দিবে এটা সম্পূর্ণ অসম্ভব।
বিষয়টি নিয়ে লোকজন জানাজানি না করার জন্য মোয়াল্লেম আব্দুল মান্নানের ছেলে নাইম আব্দুল্লাহ মুক্তিযোদ্ধা আব্দুস ছোবহানের ছেলে গোলাম মোস্তফা বাবুকে অনুরোধ করে সমাধানের কথা বলেছিলেন। কিন্তু আজও কোনো সমাধান তারা করেনি। এ ঘটনায় নাইম আব্দুল্লাহ নিজেই লজ্জিত বলে জানিয়েছিলেন।
ঘটনার প্রত্যক্ষ স্বাক্ষী সৌদি প্রবাসী আতিয়ার রহমান মোবাইল ফোনে এ প্রতিবেদককে জানান, স্বর্ণ চুরির ঘটনাটি সত্য। মোয়াল্লেম আব্দুল মান্নান এই চুরির দায় কোনভাবে এড়াতে পারেন না। এ ঘটনায় মান্নানের উপযুক্ত বিচার হওয়া উচিত বলেও জানান তিনি।
এদিকে মোয়াল্লেম আব্দুল মান্নানের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, তার অধীনে ২১২ জন হাজী ছিলেন। এরমধ্যে এক নারীসহ তিনজনের মৃত্যু হয়েছে। মুক্তিযোদ্ধা আব্দুস ছোবহানের স্ত্রীর ৫৩ গ্রাম সোনার মধ্যে ৩০ গ্রাম আমার মাধ্যমে মক্কা থেকে কেনা। বাকী ২৩ গ্রাম মদিনা থেকে কেনা। ঘটনার দিন জোহরের নামাজ পড়তে বাইরের মসজিদে গিয়েছিলেন মুক্তিযোদ্ধা আব্দুস ছোবহান। এরপর ফিরে এসে দেখেন ব্যাগ ও জিনিসপত্র হোটেলের নিচে রাখা। এসময় জানতে পারি ছোবহান ভাইয়ের ৫৩ গ্রাম সোনা ও ভাবির গহনা চুরি হয়েছে। পুলিশ এসেছিল। কিন্তু জরুরী কাজ থাকায় সেখানে থাকতে পারিনি। তবে চুরির তার সম্পৃক্ততা অস্বীকার করেন আব্দুল মান্নান। তিনি দাবী করেন মিথ্যা অভিযোগ দিয়ে আমার সম্মান নষ্ট করা হচ্ছে। মুক্তিযোদ্ধা অফিসে আমাকে ডাকা হলেও আমি স্বাক্ষী প্রমান নিয়ে সেখানে হাজির হলেও অজ্ঞাত কারনে মুক্তিযোদ্ধা আব্দুস ছোবহান সেখানে হাজির হয়নি।
হজ্বে গিয়ে মুক্তিযোদ্ধার স্ত্রীর মৃত্যু : ৪ লাখ টাকার স্বর্ণালংকার চুরি (ভিডিও সহ)


পূর্ববর্তী পোস্ট