নিজস্ব প্রতিবেদক: বাংলাদেশের দক্ষিণ পশ্চিম প্রান্তে সুন্দরবনের কোল ঘেষে অবস্থিত সাতক্ষীরা জেলার একটি ঐতিহ্যবাহী কলেজের নাম কালিগঞ্জ কলেজ। কলেজটি প্রতিষ্ঠার পূর্বে অত্র এলাকায় উচ্চ শিক্ষার জন্য তেমন কোন প্রতিষ্ঠান ছিল না। কাকশিয়ালি নদীর দক্ষিণ প্রান্তে ১৯৬৯ সালের ১লা জুলাই প্রতিষ্ঠা লাভ করে এই কলেজটি। প্রাপ্ত তথ্যে জানা গেছে, বিশিষ্ট শিক্ষানুরাগী কালিগঞ্জ সদরের শেখ আব্দুল গফুর, বন্দকাটি গ্রামের আলহাজ¦ সগীর আহমেদ এবং শিক্ষানুরাগী আলহাজ¦ শেখ আহম্মেদ আলী, জি এম উকালত আলী, শিক্ষক শেখ আব্দুর রহমান, আব্দুর রহিম পাড়, আলহাজ¦ শেখ আব্দুল লতিফ, নূর মোহাম্মদ, শেখ গোলাম বারী, ইছাহাক আলী সরদার সহ এলাকাবাসীর প্রচেষ্টায় কলেজটির আত্মপ্রকাশ ঘটে। সাতক্ষীরা রাজার বাগান কলেজের (বর্তমান সাতক্ষীরা সরকারী কলেজ) পরই এই কলেজটি প্রতিষ্ঠা লাভ করে।
প্রতিষ্ঠা কালীন সময়ে অর্থনৈতিক সমস্যা, অনুন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থা সহ বিভিন্ন সমস্যা থাকলেও নানা চড়াই উৎরাই পেরিয়ে কলেজটি এগিয়ে চলে সম্মুখ পানে। কলেজটির স্থাবর সম্পত্তির পরিমান ৫.৮১৫০ একর। চারিদিকে পাকা প্রাচীর বেষ্টিত এই কলেজে রয়েছে একটি গেইট, ১টি শহীদ মিনার, ২টি পুকুর, বড় খেলার মাঠ, ছাত্রী কমনরুম, ছাত্রী হোস্টেল (বর্তমানে অব্যবহৃত) ৪ তলা বিশিষ্ট বিজ্ঞান ভবন ও ৪ তলা বিশিষ্ট শেখ কামাল আইসিটি ভবন। তবে এতো কিছুর মাঝেও কলেজটিতে রয়েছে কিছু সমস্যা ও সীমাবদ্ধতা।
কলেজটিতে ১৯৬৯ সাল থেকে এইচ,এস,সি পর্যায়ে মানবিক, বিজ্ঞান ও বানিজ্য বিভাগে পাঠদান শুরু হয়। বর্তমানে এইচ এস সি তে ২০টি বিষয়ে পাঠদান করা হয়। কলেজে ১৯৭২- ৭৩ শিক্ষাবর্ষ থেকে ডিগ্রিপাস কোর্সে পাঠদান শুরু হয়। বর্তমানে বি এ, বি এস এস, বি এস সি ও বি কম বিভাগে ১৫টি বিষয়ে পাঠদান করা হয়। ২০০৫-০৬ শিক্ষাবর্ষ থেকে বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ^বিদ্যালয়ের অধীন উন্মুক্ত কোর্স ও একই শিক্ষাবর্ষ থেকে বাংলাদেশ কারিগরি শিক্ষা বোর্ডেও অধীন বিএম কোর্স চালু করা হয়। ২০০৭ সাল থেকে বিএ (অনার্স) সম্মান কোর্স চালু হয়। এখানে রাষ্ট্র বিজ্ঞান, ইসলামী শিক্ষা ও ব্যবস্থাপনা এই ৩টি বিষয়ে অনার্স কোর্সে পাঠদান করা হয়।
কলেজটিতে বর্তমানে শিক্ষক- কর্মচারীর সংখ্যা ৩৫ জন। সর্ব সাকুল্যে ছাত্র-ছাত্রী রয়েছে আড়াই হাজারের মতো। কলেজের ফলাফল বরাবরই সন্তোষজনক। চলতি বছরের এইচ এস সি পরীক্ষায় ৯ জন এ প্লাস পেয়ে উত্তীর্ণ হয়েছে। ২০১৮ সালের এইচ এস সি’র ফলাফলে কালিগঞ্জ কলেজ সাতক্ষীরা জেলার মধ্যে ১ম স্থান লাভ করে।
বে-সরকারি অবস্থায় কলেজটিতে সাবেক সংসদ সদস্য এইচ এম গোলাম রেজা, সাবেক সংসদ সদস্য কাজী আলাউদ্দীন, বর্তমান সংসদ সদস্য এসএম জগলুল হায়দার সহ অন্যান্যরা পরিচালনা পরিষদের সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন।
কলেজের প্রতিষ্ঠাতা অধ্যক্ষ (ভারপ্রাপ্ত) হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন বিশিষ্ট শিক্ষাবীদ গোলাম রব্বানী। তিনি ১৯৬৯ সালের ১ জুলাই থেকে ১৭ জুলাই পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করেন। এরপর অধ্যক্ষ হিসেবে ১৮ জুলাই ১৯৬৯ সাল থেকে ১৮ ডিসেম্বর এবং ১৯ ডিসেম্বর ১৯৬৯ থেকে ১৪ ফেব্রুয়ারী ১৯৭১ সালপর্যন্ত গোলাম রব্বানী পূনরায় ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। এরপর পূর্ণাঙ্গ অধ্যক্ষ হিসেবে কুষ্টিয়ার গোলাম রহমান ১৫ ফেব্রুয়ারী ১৯৭১ সাল থেকে ২১ মার্চ ১৯৯১ সাল পর্যন্ত একটানা ২০ বছর দায়িত্ব পালন করেন। এরপর আবারও ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ হিসেবে গোলাম রহমান ২২ মার্চ ১৯৯১ থেকে ২০ জুলাই ১৯৯৪ সাল পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করেন। অত:পর পূর্ণাঙ্গ অধ্যক্ষ হিসেবে নলতার আবুল কাশেম ২১ জুলাই ১৯৯৪ সাল থেকে ৩০ জুন ২০০২ সাল পর্যন্ত দায়িত্বভার পালন করেন। পওে আবার ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ হিসেবে ১ জুলাই ২০০২ থেকে ১১ মে ২০০৩ পর্যন্ত মোহাম্মদ রিয়াজুল ইসলাম, ১২ মে ২০০৩ থেকে ৩১ আগস্ট ২০০৩ পর্যন্ত আব্দুর রশিদ এবং ১ সেপ্টেম্বর ২০০৩ থেকে ২৯ ফেব্রুয়ারী ২০০৪ সাল পর্যন্ত তমিজউদ্দীন দায়িত্ব পালন করেন। এরপর বর্তমান অধ্যক্ষ জি এম রফিকুল ইসলাম ১ মার্চ ২০০৪ সালে কলেজের দায়িত্বভার গ্রহন করে অদ্যবধি পর্যন্ত রয়েছেন।
দায়িত্বভার গ্রহনের পর থেকে কলেজকে সামনের দিকে এগিয়ে নেয়া, শিক্ষকদের স্বার্থ সংরক্ষণ করা, কলেজের ভবন নির্মাণ, শিক্ষকদের এমপিওভুক্তিকরন, কলেজের রেজাল্ট ভালো করা, শিক্ষার যথাযথ পরিবেশ তৈরী করা, সর্বোপরি একটি বে-সরকারী কলেজকে সরকারী করণে অগ্রণী ভূমিকা রাখেন তিনি। তার নিরলস পরিশ্রম, ছাত্র-ছাত্রী সহ এলাকাবাসীর মনোবাসনা, শিক্ষক-কর্মচারী ও শুভান্যুধায়ীদের সহযোগিতা আর সরকার বাহাদুরের সদিচ্ছায় বিগত ১২ আগস্ট ২০১৮ তারিখে কলেজটি সরকারী করণের আদেশ জারি হয়। শুরু হয় কালিগঞ্জ সরকারি কলেজের নতুন পথচলা।