অনলাইন ডেস্ক :
বৈশ্বিক মহামারী করোনাভাইরাসে বিপর্যস্ত গোটা দুনিয়া। লকডাউন অবস্থা চলছে বিশ্বজুড়ে।প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষ আক্রান্ত হচ্ছেন। মারা যাচ্ছেন শত শত মানুষ। ইতালি, স্পেন ও যুক্তরাজ্যসহ ইউরোপের বিভিন্ন দেশে করোনাভাইরাস মারাত্মক আকার ধারণ করেছে। ২০২টি দেশ ও অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়া করোনার দ্রুত বিস্তার নিয়ে বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় প্রতিনিয়ত প্রতিবেদন ছাপা হচ্ছে। করোনার হাত থেকে বাঁচতে মানুষজন নানা পন্থা অবলম্বন করছেন।
দেশে দেশে লকডাউন ঘোষণা করে মানুষজনকে ঘরে রাখার চেষ্টা করা হচ্ছে। আক্রান্ত ব্যক্তির সংস্পর্শ এড়াতে বিজ্ঞানীরা নানা পরামর্শ দিচ্ছেন। সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশনের (সিডিসি) একটি প্রতিবেদন থেকে জানা গেছে- প্রমোদতরী ডায়মন্ড প্রিন্সেসের যাত্রীদের সরিয়ে নেয়ার ১৭ দিন পরও সেখানে করোনাভাইরাসের অস্তিত্ব পাওয়া গেছে।
প্রমোদতরীটি পরিষ্কার করার আগে সেখানে করোনার উপস্থিতি পাওয়া গেছে। পরীক্ষা করে দেখা গেছে- বিভিন্ন বস্তুতে কয়েক ঘণ্টা থেকে কয়েকদিন পর্যন্ত করোনা জীবিত থাকতে পারে। তামার ওপর ভাইরাসটি চার ঘণ্টা, কার্ডবোর্ডের (মোটা কাগজ) ওপর ২৪ ঘণ্টা এবং প্লাস্টিক ও স্টিলের ওপর ৭২ ঘণ্টা জীবিত থাকতে পারে।
করোনাভাইরাসের জীবনকাল নিয়ে থাইল্যান্ডের ইয়াল ইউনিভার্সিটির রোগ প্রতিরোধ বিজ্ঞানের অধ্যাপক ড. আকিকো ইয়াসাকি এবং যুক্তরাষ্ট্রের হার্ভার্ড মেডিকেল স্কুলের পপুলেশন মেডিসিন বিভাগের অধ্যাপক ড. জুলিয়া মার্কাসের সাক্ষাৎকার মঙ্গলবার ছেপেছে যুক্তরাজ্যের দ্য গার্ডিয়ান। সাক্ষাৎকারটি তুলে ধরা হল-
প্রশ্ন : প্রমোদতরীটিতে করোনাভাইরাসের উপস্থিতি কি ভাইরাসটির ১৭ দিন পর্যন্ত জীবিত থাকার ইঙ্গিত দিচ্ছে?
ড. জুলিয়া মার্কাস : সিডিসির পরীক্ষায় প্রমোদতরীতে করোনাভাইরাসের আরএনএ’ও অস্তিত্ব পাওয়া গেছে। তিনি বলেন, ভাইরাসটি সক্রিয় ছিল এবং এর সংস্পর্শে যে কেউ আক্রান্ত হতে পারত।
ড. আকিকো ইয়াসাকি : ভাইরাসটি শনাক্ত হওয়ার অর্থ এটির বিভিন্ন অংশ সক্রিয় ছিল। তবে ভাইরাসের একটি বা দুটি অংশ স্পর্শ করলে কেউ আক্রান্ত হয় না। বিভিন্ন অংশ স্পর্শ করলেই কেবল আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা থাকে।
প্রশ্ন : কোন বস্তুতে ভাইরাসটি কতক্ষণ থাকে?
ড. মার্কাস : সম্প্রতি দ্য নিউ ইংল্যান্ড জার্নাল অব মেডিসিনের প্রকাশিত একটি গবেষণা থেকে জানা গেছে, প্রাণঘাতী করোনাভাইরাস তামার ওপর চার ঘণ্টা, কার্ডবোর্ডের ওপর ২৪ ঘণ্টা এবং প্লাস্টিক ও স্টিলের ওপর ৭২ ঘণ্টা পর্যন্ত জীবিত থাকতে পারে। তিনি বলেন, তবে ওইসব বস্তুর ওপর থাকা ভাইরাসের পরিমাণ সময়ের সঙ্গে সঙ্গে দ্রুত হ্রাস পেতে থাকে। এ কারণে ওইসব জিনিস স্পর্শের মাধ্যমে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কাও কমতে থাকে।
প্রশ্ন : করোনাভাইরাসের একটিমাত্র অংশ দ্বারা কি কেউ আক্রান্ত হতে পারে?
ড. ইয়াসাকি : কারও দেহে করোনাভাইরাসের অস্তিত্ব প্রকাশ পেতে ভাইরাসটির উল্লেখ্য অংশের সংক্রমণের দরকার হয়। তিনি বলেন, কারও হাতে ভাইরাসটির একটি অংশ গেলে তিনি আক্রান্ত হতে পারেন। তিনি বলেন, কিছু ভাইরাস খুবই শক্তিশালী। এ কারণে কোনো বস্তুর ওপর ভাইরাসটি কতক্ষণ জীবিত থাকে সেটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
প্রশ্ন : বায়ুবাহিত ও আক্রান্ত ব্যক্তির সঙ্গে সরাসরি সংস্পর্শ ছাড়া কোনো বস্তুর ওপরের ভাইরাস দ্বারা কতসংখ্যক মানুষ আক্রান্ত হতে পারে?
ড. মার্কাস : আমরা এখন পর্যন্ত জানতে পেরেছি- সংক্রমিত বস্তুতে স্পর্শ করার চেয়ে আক্রান্ত ব্যক্তির সরাসরি সংস্পর্শে সবচেয়ে বেশি মানুষের দেহে সংক্রমণ ঘটে। তিনি বলেন, গণপরিবহন অথবা মুদি দোকান এবং জনাকীর্ণ জায়গায় জিনিসপত্রে স্পর্শ করার ব্যাপারে আমাদের সতর্ক থাকতে হবে। স্পর্শ করা মাত্র সাবান দিয়ে ভালোভাবে হাত ধুয়ে ফেলতে হবে।
ড. ইয়াসাকি : প্লাস্টিক ও স্টিল জাতীয় জিনিসের ওপর করোনাভাইরাসটি খুবই সক্রিয় থাকে। কয়েকদিন পর্যন্ত ভাইরাসটি জীবিত থাকতে পারে। আক্রান্ত ব্যক্তি অসতর্কভাবে কোনো বস্তুতে স্পর্শ করলে তাতে ভাইরাসটির সংক্রমণ ঘটতে পারে। এতে অন্য কোনো ব্যক্তি স্পর্শ করলে তিনিও আক্রান্ত হতে পারেন।
প্রশ্ন : মুদি দোকানের জিনিসপত্র ও প্যাকেট থেকে কি ভাইরাসটি ছড়ানোর কোনো ঝুঁকি রয়েছে?
ড. মার্কাস : সামান্য ঝুঁকি রয়েছে। যদি আক্রান্ত কোনো ব্যক্তি কারও বাড়িতে প্যাকেট সরবরাহ করে থাকে তাহলে ভাইরাসটির সংক্রমণ ঘটতে পারে। তিনি বলেন, কারও কাছ থেকে কোনো কিছু নিলে অবশ্যই হাত সাবান দিয়ে ভালোভাবে ধুয়ে ফেলতে হবে এবং দরজার হাতল ও কলিং বেলের বাটন জীবাণুনাশক দিয়ে পরিষ্কার করতে হবে।
ড. ইয়াসাকি : কার্ডবোর্ডে করোনাভাইরাসটি খুবই সক্রিয় থাকে। তিনি বলেন, কার্ডবোর্ডের প্যাকেট খুলে সেটি দ্রুত সরিয়ে ফেলতে হবে, সেটি ধরার পর কখনও চোখে-মুখে হাত দেয়া যাবে না এবং হাত সাবান দিয়ে দ্রুত ধুয়ে ফেলতে হবে।
প্রশ্ন : বস্তুর উপরিভাগ পরিষ্কারে টিপস কী?
ড. মার্কাস : দরজার হাতল ও টয়লেটের উপরিভাগ নিয়মিত পরিষ্কার করতে হবে। তিনি বলেন, প্রতিদিন ঘরের জিনিসপত্র পরিষ্কার করা হল ভাইরাস প্রতিরোধে খুবই কার্যকর। তিনি বলেন, ব্লিচিং মিশ্রিত পানি ও অ্যালকোহলের মিশ্রণ (৭০% অ্যালকোহল) দিয়ে ঘরের জিনিসপত্র পরিষ্কার করতে হবে। তিনি আরও বলেন, বাড়িতে করোনা উপস্থিতি পাওয়া গেলে অবশ্যই নিয়মিত ও বারবার জীবাণুনাশক ব্যবহার করতে হবে এবং সবকিছু পরিষ্কার রাখতে হবে।
প্রসঙ্গত, মহামারি আকার ধারণ করা প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসে শুক্রবার (৩ এপ্রিল) পর্যন্ত ৫৩ হাজার ১৯৫ জনের মৃত্যু হয়েছে। সর্বশেষ পরিসংখ্যান জানার অন্যতম ওয়েবসাইট ওয়ার্ল্ডোমিটারের তথ্য অনুযায়ী, করোনাভাইরাসে এ পর্যন্ত আক্রান্ত হয়েছেন বিশ্বের ১০ লাখ ১৫ হাজার ৫০৫ জন। এদের মধ্যে বর্তমানে ৭ লাখ ৪৯ হাজার ৯১৮ জন চিকিৎসাধীন এবং ৩৭ হাজার ৬৯৬ জন (৫ শতাংশ) আশঙ্কাজনক অবস্থায় রয়েছেন।
সূত্র-পূর্বপশ্চিমবিডি