সচ্চিদানন্দদেসদয়,আশাশুনি থেকে: আশাশুনির চাপড়ার মরিচ্চা নদীর মুখ থেকে বুধহাটা,গুনাকরকাটি ভেতর দিয়ে বয়ে যাওয়া বেতনা নদীর অধিকাংশ এলাকা দখল হয়ে গেছে। বিভিন্ন বাজার এলাকায় নদীর উপর তৈরি করা হয়েছে দোকান। আবার অনেক এলাকায় নদীতে বাঁধ দিয়ে মাছ চাষ করা হচ্ছে। তৈরি করা হচ্ছে মাছ চাষের জন্য পুকুর। নদী কখনও ব্যক্তিগত জমি না হলেও স্থানীয় ভূমি অফিস ও এ্যাসিল্যান্ড অফিসের কিছু অসাধু কর্মকর্তা ও কর্মচারীর যোগসাজশে তা ব্যক্তিগত জমি হিসাবে কারও কারও নামে লিখে দেয়া হচ্ছে এমন অভিযোগ রয়েছে। এমন কি নদীর মধ্যেস্থান ও প্রভাবশালীদের নামে পুরানো ডিসিআর দেখিয়ে তহশীলদাররা হাতিয়ে নিচ্ছে টাকা। সরেজমিন দেখা গেছে, আশাশুনি উপজেলার চাপড়া থেকে সাতক্ষীরার সদর উপজেলার বিনেরপোতা হয়ে মাছখোলা পর্যন্ত বিভিন্ন স্থানে ছোট ছোট বাঁধ দিয়ে দখল করে ইটভাটা ও ঘেরের কাজ করায় পলি পড়ে হুমকির মুখে এখন নদীটি। কোথাও কোথাও নদী পানিশূন্য হয়ে পড়েছে। ঘের মালিকের দখলদারী আর ইটভাটা মালিকরা নদীকে এমনভাবে গ্রাস করেছে যে, বেতনা নদীর অস্বিত্ব এখন বোঝা মুশকিল।তবে এসব ভাটা মালিকের ও ঘের মালিকের বিরুদ্ধে রহস্যজনক কারণে কোনো সময় ব্যবস্থা নিতে দেখা যায়নি স্থানীয় পানি উন্নয়ন বোর্ডের অসাধু কর্মকর্তাদের ও ¯থানীয় ভ’মি অফিসের কর্মকর্তাদের।। মাঝেমধ্যে পত্রপত্রিকায় রিপোর্ট হলে অসাধু কর্মকর্তারা ভাটা মালিকসহ দখলদারদের বিরুদ্ধে নোটিস জারি করলেও পরবর্তী সময়ে মোটা অঙ্কের টাকার বিনিময়ে তাদের বিরুদ্ধে আর কোনো ব্যবস্থা নিতে দেখা যায় না। ফলে বিশেষ করে ইটভাটা মালিকরা ও কিছু নদীখেকো দখলদাররা আরও বেপরোয়া হয়ে উঠেছেন।আশাশুনি উপজেলা থেকে সাতক্ষীরার সদর উপজেলার বিনের পর্যন্ত প্রায় ২৫ কিলোমিটারের মধ্যে নদীর তীর ও নদীর বুক দখল করে প্রায় অসংখ্য ঘের ও ইটভাটা গড়ে উঠেছে। এসব ভাটা মালিকের কারণে বেতনা নদী মরণদশায় পরিণত হয়েছে। ফলে বর্ষা মৌসুমে পানি নিষ্কাশনের অভাবে বিপাকে পড়তে হয় কৃষক ও এলাকাবাসীকে। বেতনা ও এর সংযুক্ত খাল দখলের কারণে পানি নিষ্কাশনের পথ বন্ধ হয়ে জলাবদ্ধতার কবলে পড়তে হয় তাদের। পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) ও স্থানীয় তহশীল অফিস নীরব থাকায় তাদের বিরুদ্ধ নানা প্রশ্ন তুলছেন এলাকাবাসী।সাতক্ষীরা পানি উন্নয়ন বোর্ড-২-এর নির্বাহী প্রকৌশলী জানান, বেতনা নদীর অবৈধ দখলদার ও ভাটা মালিকদের তালিকা করে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। নির্দেশ এলেই উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করা হবে।জানা যায় বেতনা ভৈরবে নদের একটি শাখা।যশোর জেলার নাভারন বাঁগআচড়ার উপর দিয়ে প্র্রথমে কলারোয়া উপজেলার ইলিশপুর ভিখালীতে প্রবেশ করেছে।তারপর শাকদহ,পানিকাউরিয়া, সাতক্ষীরা উপজেলার ঝাউডাঙ্গা,আগড়াখোলা,বিনেরপোতা,মাছখোলা হয়ে বুধহাটা গাঙ নামে পরিচিত হয়ে দক্ষিণে কেয়ারগাতি মরিচ্চাপের সাথে মানিকখালিতে মিলিত হয়েছে।এখান থেকে একশাখা পূর্ব দিকে অগ্রসর হয়ে বড়দলের উপরদিয়ে কপোতাক্ষ পড়েছে এবং অন্যশাখা দক্ষিণ দিকে খোলপেটুয়ার সাথে মিশেছে। বৃটিশ নাগরিকের তৈরি ম্যাপে ছিল বেতনা প্রমত্তা নদী। মূলত মাথাভাঙ্গা-ইছামতি পশ্চিমে আর পূর্বে কপোতাক্ষী, এই দুই দণিক্ষগামী নদীর সমানত্মরালে বেতনা এক সময় বিস্তৃর্ণ ভূ-ভাগকে সতেজ সবুজ উর্বর ভূমিতে পরিণত হতে সাহায্য করেছিল। পদ্মা থেকে মাথাভাঙ্গা-ইছামতির উৎপত্তি। তা থেকে লোয়ার ভৈরব এবং কপোতাক্ষ আর কপোতার শাখা হল বেতনা। আর বেতনা মরতে শুরু করেছে বল প্রয়োগে নদী দখল এর কারনে।
খরস্রোতা বেতনা নদী এখন অসিত্ব সংকটে
পূর্ববর্তী পোস্ট