স্পোর্টস ডেস্ক: এখন না হলে আর কবে? প্রশ্নটা লুকিয়ে রাখার পথ নেই। জবাবটা দিতে হবে পেপ গার্দিওলাকে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এ নিয়ে রসিকতাও হচ্ছে। কেউ কেউ বলছেন, গার্দিওলা এবারের দলবদলের মৌসুমে হয়তো সিটিকে দেউলিয়া করে দিতে পারেন! ওই তো প্রতি মৌসুমে দলবদলের বাজারে গার্দিওলার কাড়ি কাড়ি টাকা ঢালার অভ্যাস নিয়ে রসিকতা। অনেকের কাছেই কিন্তু তা ‘বদভ্যাস’। তবু ইউরোপে সাফল্য পেলে না হয় মনকে প্রবোধ দিতে পারতেন সিটি সমর্থকেরা। ‘পর্বতের মূষিক প্রসব’ আর কত দিন!
কাতারি পেট্রো ডলার আসার পর থেকেই বড় স্বপ্ন দেখছে ম্যানচেস্টারের ক্লাবটি। ইউরোপসেরা হবে। ২০১৬ সালে সে লক্ষ্যে অনেকটা পথ এগিয়ে গিয়েছিল সিটি। ম্যানুয়েল পেলেগ্রিনির অধীনে সেবার সেমিফাইনাল খেলেছে সিটি। হারতে হয়েছিল রিয়াল মাদ্রিদের কাছে। পেলেগ্রিনি তিন মৌসুমে দলবদলের বাজারে ৩৮৬ মিলিয়ন পাউন্ড (বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ৪ হাজার ২৮৫ কোটি টাকা) ঢেলে সিটিকে তুলেছিলেন সেমিফাইনালে। কিন্তু চিলি কোচ তখ্ত টিকিয়ে রাখতে পারেননি।
চ্যাম্পিয়নস লিগের প্রতি মোহাবিষ্ট হয়ে পেলেগ্রিনিকে সদর দরজা দেখিয়ে দেয় সিটি। একই দরজা দিয়ে তারা স্বাগত জানায় গার্দিওলাকে। এ নিয়ে তখন কারও কোনো অভিযোগ ছিল না। বার্সেলোনায় গার্দিওলা যা করে এসেছিলেন তাতে যে কেউ চোখ বন্ধ করে টেনে নিত এই স্প্যানিশ কোচকে। কিন্তু সবাই ভুলে গিয়েছিল বার্সা ও সিটির মাঝে বায়ার্ন মিউনিখে তিন বছর ছিলেন গার্দিওলা। তখন তিনি ইউরোপে জিতেছেন শুধু উয়েফা সুপার কাপ।
সে যাই হোক, গার্দিওলা পেলেগ্রিনির জায়গা নেওয়ার পর সিটির কর্তাব্যক্তিদের চেক সই করতে করতেই ঘাম ছুটেছে। যেন সেই প্রবাদটির মতো ‘লাগে টাকা দেবে গৌরী সেন’। এ জন্য উয়েফার আর্থিক সংগতি নীতি ভাঙার খাঁড়ায় একাধিকবার পড়েছে সিটি। বেঁচে গেছে চ্যাম্পিয়নস লিগে নিষিদ্ধ হওয়া থেকেও। কিন্তু তাতেও শিক্ষা হয়নি। কাড়ি কাড়ি টাকা ঢেলে গার্দিওলার খেলোয়াড় কেনার আবদার রক্ষায় সিটি মালিক শেখ মনসুর আল নাহিয়ান নাকি গ্যাসের দামও বাড়িয়েছেন! মানে, গার্দিওলা যে খেলোয়াড়কে কিনতে চান তার ভিডিও ক্লিপস দেখিয়ে পটিয়ে ফেলেন সিটি মালিককে। এরপর খেলোয়াড় কেনার প্রয়োজনীয় টাকাটা নেন তিনি। এ ঘাটতি পূরণে সিটি মালিক নাকি পরদিন থেকে গ্যাসের দাম বাড়িয়ে দেন, একবার এমন তথ্য জানিয়েছেন বায়ার্নের সাবেক সভাপতি উলি হোয়েনেস।
তো, টাকা থাকলে ঢালতে তো দোষ নেই। কিন্তু ঢালার ফলটা সেভাবে না মিললে কথা তো হবেই। সিটিতে এ নিয়ে চার মৌসুম চলছে গার্দিওলার। এ সময় খেলোয়াড় কিনতে তিনি দলবদলের বাজারে ঢেলেছেন অর্ধ বিলিয়নেরও বেশি টাকা। অঙ্কের হিসেবে ৬৩৬ মিলিয়ন পাউন্ড (বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ৭ হাজার ৫৯ কোটি টাকা)। এই বিশাল অঙ্কের টাকার পাশে ফলটা রাখুন, ২০১৭-১৮, ২০১৮-১৯ ও ২০১৯-২০; এ তিন মৌসুমেই কোয়ার্টার ফাইনাল থেকে বিদায় নিতে হয়েছে গার্দিওলার সিটিকে। তাহলে একদিক বিচারে পেলেগ্রিনিই তো ভালো!
কে ভালো, তা সময়ই বলে দেবে। গার্দিওলা হতে পারেন বিশ্বের অন্যতম সেরা কোচদের একজন। সেটি অবশ্যই বার্সায় তাঁর চার বছর মেয়াদে ১৪টি ট্রফিজয় বিচারে, বায়ার্নেও যে সাফল্য একেবারে পাননি তা নয়। কিন্তু ইউরোপসেরা ক্লাব প্রতিযোগিতায় গার্দিওলা সাফল্য পেয়েছিলেন মেসি-জাভি-ইনিয়েস্তাদের সেই সোনালি প্রজন্মের সঙ্গে। পরের দুটি ক্লাবে তিনি এমন দল পাননি। তাই টাকা দিয়ে খেলোয়াড় কিনে মেটাতে চেয়েছেন ঘাটতি, কিন্তু একটা দল গড়তে পারেননি। আসলে টাকা ঢাললেই সাফল্য মেলে না, চ্যাম্পিয়নস লিগে তো নয়ই।