# অমৎস্যজীবী সমিতিকে বছরের পর বছর ধরে ইজারা দেয়া হয়েছে।
#জলমহাল ইজারা নীতিমালার একাধিক ধারা লঙ্ঘন করে ইজারা কার্যক্রম সম্পাদিত হয়েছে।
নিজস্ব প্রতিবেদক: নিয়ম নীতির তোয়াক্কা না করে বাঁশদহা বাওড়ের ১৪একর ইজারা দেয়া হয়েছে সাতক্ষীরা মৎস্যজীবী সমবায় সমিতি লিমিটেডকে। প্রকৃত মৎস্যজীবী না থাকলেও বছরের পর বছর ধরে ইজারা নিয়ে আসছে সমিতিটি।
বাঁশদহা বাওড় বা জলমহালের ১৪একর (মাঝের অংশ) ২০০৬ থেকে শুরু করে অদ্যাবধি ইজারা গ্রহণ করে আসছে সাতক্ষীরা মৎসজীবী সমবায় সমিতি লিঃ। ইজারা গ্রহণের পর থেকে সাব লিজ দিয়ে আসছে সমিতির সভাপতি নবারুন স্কুলের সাবেক গনিত শিক্ষক কাশেম মাস্টার ও সাধারণ সম্পাদক ঠিকাদার নূরে আলম সিদ্দিক। তাদের নিজেদের পরিচালিত সাতক্ষীরা মৎস্যজীবী সমবায় সমিতি লিঃ এর ৬৫ হাজার টাকায় বাঁশদহা জলমহালে ১৪ একর ইজারা নিয়ে সাড়ে চার লাখ টাকায় সাব-লিজ দিয়েছে স্থানীয় খোকা মেম্বারের কাছে। যা নীতিমালার ধারা ‘৫’, উপধারা ‘৪’, অনুচ্ছেদ ‘ঢ’ এর লঙ্ঘন।
খাস জলাশয় এবং জলমহাল ইজারা দেওয়ার জন্য ‘সরকারি জলমহাল ব্যবস্থাপনা নীতি-২০০৯’ বিদ্যমান আছে। এই নীতিমালায় উল্লেখ আছে, ‘জাল যার, জলা তার’। এই নীতিমালার ২ নম্বর ধারার ‘খ’ অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, ‘প্রকৃত মৎসজীবীদের সংগঠন স্থানীয় পর্যয়ের সমবায় অধিদপ্তরে বা সমাজসেবা অধিদপ্তরে নিবন্ধিত হলে স্থানীয় জলমহাল ব্যবস্থাপনা বা ইজারায় অংশগ্রহণ করতে পারবেন। তবে কোন সমিতিতে যদি এমন কোন সদস্য থাকেন যিনি প্রকৃত মৎসজীবী নহেন, তবে সে সমিতি কোন সরকারি জলমহাল বন্দোবস্ত পাওয়ার যোগ্য হবে না। কোন ব্যক্তি বা কোন অনিবন্ধিত সমিতি সরকারি জলমহাল ব্যবস্থাপনায় আবেদন করতে পারবেন না।’
এই ধারারই ‘ক’ অনুচ্ছেদে প্রকৃত মৎস্যজীবীর সংজ্ঞা দেওয়া হয়েছে। সেখানে বলা হয়েছে, ‘যিনি প্রাকৃতিক উৎস হতে মাছ শিকার এবং বিক্রয় করেই প্রধানতঃ জীবিকা নির্বাহ করেন তিনি প্রকৃত মৎস্যজীবী বলে গণ্য হবেন।’
সরকার কর্তৃক গৃহীত নীতিমালার ২নম্বর ধারা ‘ক’ অনুচ্ছেদকে বৃদ্ধাঙ্গুলী দেখিয়েই প্রকৃত মৎসজীবীদের বাদ দিয়ে চাকুরীজীবী, ব্যবসায়ী, কৃষকসহ নানা ব্যক্তিকে মৎসজীবী দেখিয়ে মনগড়া ভাবে সাতক্ষীরা মৎসজীবী সমবায় সমিতি লিঃ গঠিত হয়েছে। অন্যদিকে এই নীতিমালার ২ ধারার ‘খ’ অনুচ্ছেদ আমলে না নিয়েই সমিতিটিকে জলমহাল ইজারা দিয়েছে উপজেলা কমিটি। একটি বা দুটি নয় ‘সরকারি জলমহাল ব্যবস্থাপনা নীতি-২০০৯’ এর ‘৫’ ধারার উপধারা ‘১’ এর ১ম শর্ত, উপধারা ‘৩’ ও ‘৪’ এর অনুচ্ছেদ ‘ঢ’ মানা হয়নি। যার পুরো দায় দায়িত্ব উপজেলা জলমহাল ব্যবস্থাপনা কমিটির ওপর। কিন্তু কমিটির আহবায়ক ও সদস্যদের বক্তব্য পরষ্পর সাংর্ঘষিক।
সাতক্ষীরা সদর উপজেলা সমবায় কর্মকর্তা করিমুল হক এসব অভিযোগের প্রেক্ষিতে লিখিত ভাবে জানান, ‘সাতক্ষীরা মৎসজীবী সমবায় সমিতি লিঃ ৪১জন সদস্যের মধ্যে এখন ৯জন এফিডেবিটের মাধ্যমে মৎসজীবী হিসেবে সদস্য আছেন। বাকি সদস্যবৃন্দ কারো মৎস্যজীবী প্রত্যয়নপত্র নেই। বর্তমান সমবায় আইন ও বিধিমালা এবং জলমহাল নীতিমালা অনুযায়ী সমিতির সদস্যবৃন্দের মধ্যে ত্রæটি পরিলক্ষিত হয়।’
এ নিয়ে সাতক্ষীরা জেলা সমবায় কার্যালয়ে যোগাযোগ করা হলে জেলা সমবায় কর্মকর্তা লিখিতভাবে উপজেলা কর্মকর্তার বার্তাটিই দেন। তিনি আরও জানান যে সমিতি কর্তৃপক্ষ উক্ত কার্ড (মৎসজীবী) পাওয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট দপ্তরে আবেদন করেছে।
অন্যদিকে সিনিয়র উপজেলা মৎস কর্মকর্তা শফিকুল ইসলাম জানান, ‘সাতক্ষীরা মৎসজীবী সমবায় সমিতি লিঃ এর কোন সদস্য প্রত্যয়নপত্র গ্রহণের জন্য আবেদন করেনি।’
জলমহাল ইজারায় অনিয়ম নিয়ে সাতক্ষীরা সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও উপজেলা জলমহাল ব্যবস্থাপনা কমিটির আহবায়ক ফাতেমা-তুজ-জোহরা সাতনদীকে জানান, ‘সর্বশেষ ইজারা নবায়নের সময় আমি দায়িত্বে ছিলাম না। সাব-লিজের বিষয়টিও আমি জানতাম না। এ বিষয়ে তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে’।