নিজস্ব প্রতিবেদক: স্বরাষ্ট্র মন্ত্রনালয়ের তালিকাভুক্ত সাতক্ষীরার দুই শীর্ষ চোরাকারবারী আল ফেরদাউস আলফা ও তার ভাই আব্দুল আলিমকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আদালতে পুলিশের করা রিমান্ড আবেদনের শুনানী আগামী ৯ জানুয়ারি বৃহস্পতিবার। সোমবার (০৬ জানুয়ারি) মামলাটির তদন্তকারী কর্মকর্তা সাতক্ষীরা সদর থানার ওসি (তদন্ত) মো. আবুল কালাম আজাদ বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান, আল ফেরদাউস আলফা ও আব্দুল আলিম সহ আটককৃত আসামীদের জিজ্ঞাসাবাদের জন্য সাতক্ষীরা সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ১ম আদালতে পুলিশের পক্ষ থেকে পাঁচ দিনের রিমান্ডের আবেদন জানানো হলে বিচারক মো. রেজওয়ানুজ্জামান রিমান্ড আবেদন শুনানীর জন্য দিনটি ধার্য্য করেন। এরআগে জেলার দুই শীর্ষ চোরাকারবারী আল ফেরদাউস আলফা ও তার ভাই আব্দুল আলিমকে গত ৩১ ডিসেম্বর গ্রেফতারের পর আদালতের মাধ্যমে সাতক্ষীরা জেলা কারাগারে প্রেরণ করে পুলিশ। এই দুই চোরাকারবারীসহ কয়েকজনের বিরুদ্ধে গত ৩০ ডিসেম্বর বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)’র হাবিলদার মো. মোহসীন বাদী হয়ে ১৯৭৪ সালের স্পেশাল পাওয়ার এ্যাক্টস এর ২৫ বি (১) (বি)/২৫ডি ধারায় সাতক্ষীরা সদর থানায় মামলা দায়ের করেন। মামলা নং-৫৮। আল ফেরদাউস আলফা ও আব্দুল আলিম দেবহাটা উপজেলার পারুলিয়া ইউনিয়নের কোমরপুর গ্রামের আবুল কাশেম সরদারের ছেলে। সাতক্ষীরা চোরাচালান সিন্ডিকেটের শীর্ষ গডফাদার হিসেবে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রনালয় সহ বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার তালিকা ভুক্ত আল ফেরদাউস আলফা। পাশাপাশি হুন্ডি ব্যবসায়ী, চোরাকারবারী, মাদক ও অবৈধ অস্ত্র ব্যবসায়ী হিসেবে এসকল সংস্থার বিভিন্ন সময়ে প্রকাশিত তালিকায় শীর্ষ অবস্থানে রয়েছে আলফা’র নাম। তাছাড়া জেলাব্যাপী জামায়তের অন্যতম অর্থ যোগানদাতা ও পৃষ্টপোষক হিসেবেও পরিচিতি রয়েছে তার। ইতোপূর্বে মাদক মামলায় সাত বছরের সাজাপ্রাপ্ত হয়ে জেলে গেলেও মহামান্য হাইকোর্ট থেকে জামিনে বেরিয়ে এসে আলফা আবারো জেলায় চোরাচালানের রামরাজত্ব কায়েম শুরু করে। অপকর্ম আড়ালের পাশাপাশি প্রশাসনের ধরাছোয়ার বাইরে থাকতে উপজেলা ও জেলা পর্যায়ের ক্ষমতাসীন সরকার দলীয় কিছু নেতার সাথে সখ্যতা গড়ে তোলার পাশাপাশি কোটি টাকা ব্যায় করে আলফা বনে যান জেলা পরিষদের সদস্য। এছাড়া, আলফার সহোদর আব্দুল আলিম সাতক্ষীরার চাঞ্চল্যকর বিজিবি সদস্য আব্দুল জব্বার হত্যা মামলার চার্জশীটভুক্ত আসামী। জেলার দেবহাটা উপজেলার কোমরপুর, ভাতশালা, পদ্মশাখরা ও হাড়দ্দাহ সহ তৎসংলঘ্ন বিস্তৃর্ন সীমান্ত এলাকার যাবতীয় চোরাচালানের মুল নেতৃত্বে ছিলো আব্দুল আলিম। সে সীমান্ত এলাকার কথিত মুকুটহীন সম্রাট হিসেবেও পরিচিত। তার ভয়ে সবসময় তটস্থ থাকতো সীমান্ত এলাকার সাধারন মানুষ। যারা তাদের বিরুদ্ধে অবস্থান নিতো বা প্রশাসনকে চোরাচালানের তথ্য দিতো তাদের ওপর প্রকাশ্যে হামলা সহ নির্মম নির্যাতন চালানো হতো। কোমরপুরে প্রবেশের মুখেই রয়েছে আলফা ও আলিমের অফিসখ্যাত রিমান্ডরুম। আব্দুল আলিমও নিজের অপকর্ম ঢাকতে এলাকার নিরীহ মানুষকে জিম্মি করে বনে গেছে ইউপি সদস্য। শুধু তাই নয়, জামায়তের পৃষ্টপোষক হওয়া স্বত্ত্বেও একাধিকবার চেষ্টা চালিয়ে ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সদস্য হয়ে যায় সে। তাছাড়া কয়েক লক্ষ টাকার বিনিময়ে আব্দুল আলিম উপজেলা যুবলীগের সহ-সভাপতি পদ হাতিয়ে নিয়ে সীমান্তের গডফাদার হয়ে ওঠে বলেও বিভিন্ন মাধ্যমে জানা গেছে। দেবহাটার পারুলিয়া ইউনিয়নের ১ নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের বর্তমান সাধারন সম্পাদক লতিফুর রহমান কালু আব্দুল আলিমের সদস্য পদ বিষয়ে বলেন, আব্দুল আলিম ইতোপুর্বে ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের প্রয়াত নেতা সেলিম হোসেনের মাধ্যমে সদস্য পদ পেয়েছিলেন তবে কিছু দিন পুর্বে উপজেলা আওয়ামী লীগের ত্রি বার্ষিক সম্মেলনের আগ মুহুর্তে সদস্য যাচাই বাছাই কালে উপজেলা আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দদের উপস্থিতিতে আব্দুল আলিমের সদস্য পদ বাতিল করা হয়। তথ্যনুসন্ধানে আরো জানা গেছে, চোরাচালানের মাধ্যমে কুলি থেকে বর্তমানে কোটি কোটি টাকার ধন সম্পদের মালিক হয়েছেন শীর্ষ চোরাকারবারী আলফা ও আলিম। এখন তাদের রয়েছে একাধিক আলীসান বাড়ি-গাড়ি ও দেহরক্ষী। এপর্যন্ত বহুবার একাধিক টেলিভিশন চ্যানেলসহ জাতীয় ও স্থানীয় দৈনিক সংবাদপত্র গুলোতে প্রকাশিত হয়েছে চোরাকারবারী আল ফেরদাউস আলফা ও আব্দুল আলিমের সীমাহীন অপকর্মের সচিত্র প্রতিবেদন। সর্বশেষ সাম্প্রতিক সময়ে বেসরকারী টেলিভিশন চ্যানেল নিউজ ২৪ এর টিম আন্ডারকভারে ‘অবৈধ অস্ত্রের ঝনঝনানি’ শিরোনামে প্রচারিত সচিত্র প্রতিবেদনে চোরাকারবারি গডফাদার আল ফেরদাউস আলফা ও আব্দুল আলিমের অস্ত্র চোরাচালানের ইতিবৃত্তি তুলে ধরলে বেকায়দায় পড়েন এই দুই শীর্ষ চোরাকারবারি। অন্যদিকে গ্রেপ্তার পরবর্তী শীর্ষ দুই চোরাকারবারী আল ফেরদাউস আলফা ও আব্দুল আলিম বর্তমানে কারাগারে থাকলেও আলফা’র ভগ্নিপতি কোমরপুর চরপাড়া গ্রামের মৃত গোলাপ গাজীর ছেলে আরশাদ আলী বাবু, চোরাচালানী সিন্ডিকেটের অন্যতম হোতা বিজিবি সদস্য জব্বার হত্যা মামরার অন্যতম আসামী শাখরা গুচ্ছগ্রাম এলাকার মোহাম্মাদ আলীর ছেলে আব্দুল্যাহ গাজী ও কোমরপুর হাজামন মোড় এলাকার তছমোতুল্যাহ মোল্যার ছেলে কামরুল ইসলাম সহ আলফা-আলিম সিন্ডিকেটের অন্যান্য চোরাকারবারিরা এখনো রমরমাভাবে সীমান্তে চোরাচালান চালিয়ে যাচ্ছে বলেও একাধিক নির্ভরযোগ্য সুত্র নিশ্চিত করেছে।
জেলার দুই শীর্ষ চোরাকারবারীর রিমান্ড শুনানী বৃহস্পতিবার
পূর্ববর্তী পোস্ট