সাতনদী ডেস্ক:
সাতক্ষীরা জেলার অলি-গলিতে ছড়িয়ে পড়েছে অপসাংবাদিকতার বিষবাষ্প। লগো হাতে সাংবাদিকতার আড়ালে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে একটি চক্র। মোটরসাইকেলে দলবদ্ধ হয়ে চক্রটি জেলার একপ্রান্ত থেকে অন্যপ্রান্তে চষে বেড়াচ্ছে। কৃষক, দিনমজুর, চাকরিজীবী, ব্যবসায়ী কেউ রেহাই পাচ্ছে না চক্রটির হাত থেকে। হুমকি দিয়ে নীরব চাঁদাবাজী চালিয়ে যাচ্ছে সাংবাদিক ও মানবাধিকার কর্মী পরিচয়দান এ চক্রটি। এদের রুখবে কে? সাধারণ মানুষ এদের হাত থেকে রেহাই চায়। মহান পেশা সাংবাদিকতাকে কলঙ্কিত ও কলুষিত করতে চক্রটি মাঠে নেমেছে। এদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার এখনই সময়।
জানা গেছে, রবিবার (১২ জুলাই) বেলা ১১টার দিকে জেলার আশাশুনি উপজেলার শ্বেতপুর জোড়া আমতলা এলাকার হোমিও ডাক্তার বলরাম বিশ্বাসের চেম্বারে তিনটি মোটর সাইকেলে ৫ সদস্যের ওই চক্রটি হাজির হয়। সেখানে গিয়ে তারা চেম্বারটি বন্ধ দেখে ডাক্তার বলরাম বিশ্বাসকে ডেকে নেয়। এরপর তারা ডাক্তারবে বলে, ‘আমরা গিয়েছিলাম শোভনালী ইট ভাটায়। কিন্তু সেখানে গিয়ে কোন লাভ হয়নি। ইট ভাটার মালিক ও ম্যানেজার আমাদের টাকা দেয়নি। তাই আমাদের মোটরসাইকেলের তেল খরচটা আপনাকে দিতে হবে।’ এসময় ডাক্তার বলরাম বিশ্বাস বলেন,‘আমি কেন আপনাদের তেল খরচ দিতে যাবো?’ এ কথা শোনার পর ‘আব্বাস নামের একজন বলেন, আমি সাংবাদিক ও মানবাধিকার কর্মী। রবিউল ইসলাম রবি নামের একজন বলেন, ‘আমিও সাংবাদিক’। এসময় একজন বলেন, ‘আমিও মানবাধিকারকর্মী।’ হাতে লগো নিয়ে এগিয়ে এসে ৪৫ বছর বয়স্ক কালো ও মোটাতাজা একজন বললেন, ‘আমি সাংবাদিক।’ এভাবে নিজেদের সাংবাদি ও মানবাধিকারকর্মী পরিচয় দিয়ে দাবি করা হয় মোটা অঙ্কের টাকা। তখন ডাক্তার বলরাম বিশ্বাস বলেন, ‘দেখুন দাদা, এখন করোনাকাল। মানুষকে যতদূর পারি এক প্রকার ফ্রি সেবা দিয়ে যাচ্ছি। তাছাড়া আজ আমার চেম্বার বন্ধ।’ তখন তেলে বেগুনে জ্বলে উঠে কথিত সাংবাদিক ও মানবাধিকার পরিচয়দানকারী ব্যক্তিরা। বলেন, ‘ওসব কথা শুনতে চাইনা। টাকা বের করেন। টাকা না দিলে আমরা কী করতে পারি তা তো জানেন। আগেও তো এসেছি।’ এরপর নিরুপায় হয়ে অসহায়ের মতো ডাক্তার বলরাম বিশ্বাস পাঁচশত টাকার একটি নোট দিতে গেলে তারা বলেন, এতে কাজ হবে হবে না। আরও দিতে হবে। টাকা বের করেন। তা না হলে ডাক্তারী ঘুচিয়ে দেব।’ অসহায় ডাক্তার এবার ঘরে গিয়ে দুটি পাঁচ শ’ টাকার নোট এনে রবিউল ইসলাম রবির হাতে দেন। এরপর চলে যায় তারা। এদিকে বিষয়টি জানাজানি হলে জেলার বিভিন্ন স্থান থেকে চক্রটি সম্পর্কে ভয়ঙ্কর তথ্য আসতে থাকে।
কলারোয়া থেকে কয়েকজন জানান, মোটরসাইকেলে প্রেস লিখে ওরা দাপিয়ে বেড়ায়। কিছুদিন আগে বিজিবির হাতে ওদের দুজন ধরা পড়েছিল। কীভাবে ছাড়া পেয়েছিল তা জানি না। এদের কারণে মহান পেশা সাংবাদিকতা আজ কলুষিত হচ্ছে। সাইফুদ্দিন পলাশ নামের একজন ব্যবসায়ী জানান, এই চক্রটি আমার কাছে ফোন দিয়ে দেখা করতে বলেছিল। আমি বাড়িতে না থাকায় আমার ইটেরভাটায় গিয়ে ম্যানেজারের কাছ থেকে ২ হাজার টাকা নেয়। তাতেও খুশি না হয়ে পরে আবার ফোন দেয়। অপরাধ কী জানতে চাইলে তারা বলে ‘মাঝে মাঝে আসি।’ শ্যামনগর থেকে নূরুন্নবী ইমন জানান, ‘মাঝে আমাদের রমজাননগরেও ওরা এসেছিল। তাড়িয়ে দিয়েছিলাম।’ একই উপজেলার মনির হোসেন বলেন একই কথা। এদিকে দেবহাটা ও কালিগঞ্জ থেকে কয়েকজন জানান, ‘হাতে একটি লগো নিয়ে ৩/৪টি মোটরসাইকেলে চক্রটি গোটা জেলায় দাপিয়ে বেড়াচ্ছে। এদের টার্গেট ইটভাটার মালিক, ব্যবসায়ী, ক্লিনিক, বেসরকারি হাসপাতাল, গ্রাম্য ডাক্তার, মাদ্রাসার শিক্ষক, পোল্ট্রি ব্যবসায়ী ও সাধারণ কৃষক।
এদিকে বল্লী এলাকার একজন শিক্ষক বলেন, ‘কয়েক মাস আগে ঠিক এই চক্রটি বাঁশি বাজিয়ে স্থানীয় একটি মাদ্রাসায় ভয়ঙ্কার মূর্তিতে হাজির হয়ে ত্রাস সৃষ্টি করে। পরের দিন পত্র-পত্রিকায় সে খবর প্রকাশ হয়। মাঠে নেমেছিল গোয়েন্দা সংস্থা। এরপর কিছুদিন বন্ধ থাকার পর আবারও দাপিয়ে বেড়াচ্ছে চাঁদাবাজ চক্রটি। আশাশুনির বুধহাটা এলাকার কয়েকজন জানান, ‘কুল্যার মোড় ও বুধহাটা এলাকার ক্লিনিকগুলোতে মানবাধিকার কর্মী ও সাংবাদিক পরিচয় দিয়ে ভয়ভীতি দেখিয়ে আতঙ্ক সৃষ্টি করে চক্রটি হাতিয়ে নেয় মোটা অঙ্কের টাকা। সীমান্তেও তারা জাল ফেলে। ভোমরা এলাকার ব্যবসায়ীরা জানান, ‘এদের কারণে ব্যবসা করা দায় হয়ে পড়েছে। দলবেঁধে আসে ওরা। পরিচয় দেয় সাংবাদিক ও মানবাধিকার কর্মী। নিরুপায় হয়ে দিতে হয় টাকা। এভাবে সাংবাদিকতার নামে অপসাংবাদিকতার বিষবাষ্প ছড়িয়ে বেড়াচ্ছে চক্রটি। এব্যাপারে সাতক্ষীরা পুলিশ সুপারের হস্তক্ষেপ কামনা করে এসব ভূইফোড় ‘কথিত’ সাংবাদিকদের গ্রেপ্তারের দাবি জানিয়েছেন অসংখ্য মানুষ।